মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০Dedicate To Right News
Shadow

গুলশান চৌধুরীর গল্প “নিষ্ঠুর নিয়তি”

Spread the love

রমনা পার্কে হাঁটতে হাঁটতে সুপ্তি কিছুটা শান্তি অনুভব করে। তার এই এক স্বভাব, কোনো কিছু হলেই হলো, অমনি জোড়ে জোড়ে হাঁটবে আর হাঁটার মধ্যে নানা রকম সমস্যা গুলো সমাধানের চেষ্টা করবে। আজও তেমনি একটা সমস্যার সমাধান সে করতে চায় কিন্তু কিছুতেই পারছেনা। কারণ আইনের মানুষ হয়ে সে কিছুটা অন্যায় করে ফেলেছে।

সুপ্তি সিনিয়র একজন উকিল অথচ একজন জুনিয়রকে দিনের পর দিন হায়, হ্যালো করে যাচ্ছে। কারণ আছে, ছেলেটি অনেক মেধাবী। অনেক কিছুই সুপ্তির বুঝতে কষ্ট হয় কিন্তু বাদল এতো সহজ করে বুঝিয়ে দিবে যে, তার আর কোনো সমস্যাই থাকে না। আরও একটা কারণ আছে, আগে যে সমস্ত সমস্যা সে নিজে কষ্ট করে সমাধান করত এখন বাদলের উপর দিয়ে নিজে আরাম করে।

এ ভাবেই ছেলেটি আস্তে আস্তে তার কাছে চলে এসেছে। আর কিই বা করবে, আমানকে আজকাল ঠিকমতো সে কাছে পাচ্ছে না। তাই বাদলই তার একপ্রকার সুখ দুঃখের সাথি বলা যায়। বাদলও নাছোর বান্দা, প্রতিদিন তাকে কত কি যে লেখে, আর নানা রকম দুষ্টুমিষ্টি ফুল পাখি মানুষ ইত্যাদির ছবি দেয়। সুপ্তির ভালোই লাগে!

আমান সেই যে ব্যবসায়ের কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছে আর আসার নাম নাই। একা একা বোরিং লাগে। হঠাৎ বাদলের পাঠানো ছবিটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে ভাবতেই তার সময়টা চলে যায়। কি যে অদ্ভুত সব ছবি, কোথায় যে ও পায় তা ওই জানে।

আজ সুপ্তি শুয়ে আছে। কিছুতেই বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। আবার পেট ও ব্যথা করছে, হয়ত শরীর খারাপ হবে। কথাটা মনে পড়তেই সে তারাতারি উঠে বসে তারপর রেডি হয়ে বাইরে যায়, প্রয়োজনীয় টুকটাক কেনাকাটা
সেরে বাসায় ফেরে। তারপর সিদ্ধান্ত নেয় এমন শরীরে কোর্টে সে যাবে না।

এদিকে বাদল বারবার ফোন দিচ্ছে, কি হয়েছে জানতে চাচ্ছে। সুপ্তি শুধু বলে সে আজ আর কোথাও যাবে না, তার মন খারাপ। কিসের কি, এই কথা শোনার পর বাদল বাসায় আসতে চাচ্ছে। সুপ্তির এবার রাগ হয় সে ফোনে বলে, আর যোগাযোগ করবেন না। বাদল কোনো কথা বলে না।
সুপ্তি এবার আমানকে ফোন দেয়। আমান ফোন ধরে বলে সে বাসায় আসছে। সুপ্তি তাকে আসতে মানা করে। আমান ও যেনো বেঁচে যায়। আসলে আমান অনেক দিন থেকেই এমন ভাওতাবাজী করে আসছে। সুপ্তি ফোন দিলেই বলে রওনা দিচ্ছি, আসলে কিন্তু সে রওনা দেয় না মিথ্যা বলে।
আমান সুপ্তির খোঁজ খবর নেয়। তারপর বলে, সে এক সপ্তাহ পরে ঠিকই আসবে। সুপ্তি বলে তার জ্বর আসবে পেট প্রচন্ড ব্যথা করছে। হয়ত পিরিয়ড শুরু হবে। আমান একটু চুপ করে থাকে, বলে তাহলে তো তোমার সমস্যা হবে। কেউ কাছে নাই সেতু কি সব পারবে? সুপ্তি বলে সমস্যা নাই, সে সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। আমান তাকে ঠিক মতো ওসুধ খেতে বলে।

সুপ্তির বিয়ে হয়েছে ছয় বছর হলো। এখনও কোনো বাচ্চা হয়নি। আমান আর সে দুজনই ডাক্তার দেখিয়েছে। তাদের কারোই তেমন কোনো সমস্যা নাই। সুপ্তির একটু সমস্যা আছে, ডাক্তার বলছেন তেমন বড় কিছু না। যে কোনো সময় ইচ্ছা করলেই তারা বাচ্চা নিতে পারবে। সুপ্তির কিছুটা দোষ আছে। চাকরির জন্য সে নিজেই বাচ্চা নিতে চাই নাই। এখন আমান ইচ্ছেমতো চলছে। তার কোনো গরজ নাই।

এসব নিয়ে সুপ্তি যখন ভাবছে তখনই দরজায় নক করছে কেউ একজন । সে কল্পনাও করেনি বাদল বাসায় আসবে। সুপ্তি দরজা খুলে বলে, আপনি, চলে যান, আমার খুব পেট ব্যথা করছে, একটু রেষ্ট করলেই সেরে যাবে। কিন্তু বাদল যায় না। সে দেখে সুপ্তি ব্যথায় বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছেনা, বাদল ওকে ধরে দেখে গা গরম, কিন্তু সুপ্তি কোনো সাহায্যই নিতে চাচ্ছে না। সুপ্তি আবার ও বলে আপনি চলে যান। কাজের মেয়েটা বাদলকে নাস্তা দেয়। বাদল নাস্তা না খেয়ে বসে থাকে।

বাদল চলে যেতে চায় কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই যেতে দেয় না। সে বলে ম্যাডামের এরকম হলে স্যার গরম ছ্যাকা দেয় ম্যাডামের পেটে, ওসুদ দেয় তারপর ম্যাডাম ঘুমিয়ে যায়। আপনি ওসুদ এনে দেন আমি ইসতিরি দিয়ে ছ্যাকা দিয়ে দিই। মেয়েটা ম্যাডামকে ডেকে বলে কোনো ওসুদ আছে কিনা। সুপ্তি চোখ বন্ধ করেই বলে, দেখো প্যাকেটে আছে একটা দাও। আর ইস্ত্রি নিয়ে এসে ছ্যাকা দাও। মেয়েটা সবই করে। বাদল বসে বসে সব দেখে। তার খুব ইচ্ছে করে সুপ্তির পেটে গরম কাপড় চেপে ধরে ছ্যাকা দিবে। পরক্ষণেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটাকে ইশারায় দরজা দিতে বলে।

সুপ্তি ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে। সে ফ্রেস হয়ে পেপার নিয়ে বসে। মেয়েটা নাস্তা নিয়ে আসে। সুপ্তির হঠাৎ বাদলের কথা মনে পড়ে। তার মনে হয় বাদলের সাথে সে খুবই বাজে ব্যবহার করেছে। এরকমটা না করলেও পারত। যদি বেশি কিছু হতো, ডাক্তার ডাকা লাগতো তখন তো বাদলকে লাগতো। সুপ্তি আবার আমানের কথা ভাবে। আমান আসতে চাইল আর সে মানা করে দিলো, ঠিক হয়নি। কলিং বেল বাজছে, মেয়েটা দরজা খুলতেই বাদল ভিতরে ঢোকে। সুপ্তি সরি বলে, বাদলকে বসতে বলে। বাদল কিছু না বলে সুপ্তির শরীর কেমন আছে তা জানতে চায়।

সুপ্তি বাদলকে জিজ্ঞেস করে, সে অফিসে যাবে কিনা। সে বলে পরে যাব। এবার বাদল বলে আপনি কবে যাবেন? সুপ্তি ছেলেটার সহজ সরল কথা শুনে হেসে দেয়। বলে আরও তিনদিন পর যাব। বাদল বলে আগে তো এমন দেখিনি, এইবার আপনি এতো অসুস্থ হয়ে গেলেন? সুপ্তি আবার ও হাসে, সে বলে এমনটা সব সময়ই হতো। এতোদিন আমান পাশে থাকত এবার সে পাশে নাই। বাদলকে কিছুটা চিন্তিত দেখাচ্ছে। বাদল বলে উনি আসেন না কেনো। সুপ্তি বলে আসতে চেয়েছিলো, মানা করেছি। ঠিক আছে আপনি এখন যান। বাদল বসে থাকে।

সুপ্তি কে আবার ও আমান ফোন দিয়েছে। সে আসতে চাচ্ছে, সুপ্তি এবার বলে ঠিক আছে আস। অমনি আমান বলে, তাহলে এক সপ্তাহ পরেই আসি। বাদলের মন খারাপ হয়ে যায়। সে উঠে দাঁড়ায় তারপর চলে যায়। সুপ্তিও শুয়ে পড়ে। সে আমানকে নিয়ে ভাবে। আমান অনেক দিন যাবত এরকম করছে। আগে মাঝে মাঝে আসত। এবার কয়েক মাস হতে যাচ্ছে তাও আসতে চাচ্ছে. না। ব্যাপার তো কিছু একটা আছেই। কি হতে পারে, সে তো এতোদিন এগুলো ভাবে নাই।

সুপ্তি আবার ও হাঁটতে যাবে সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে। সুপ্তির আর আমানের সম্পর্ক ভালোই। তারা প্রেম করে বিয়ে করেছে। সুপ্তির পরিবার মেনে নেয়নি কিন্তু আমানের পরিবার ঠিকই সুপ্তিকে বধুবরণে বরণ করে নিয়েছে। তার পরিবার একজন ব্যারিস্টারের সংগে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো। একই পেশা ভালো হতো। কিন্তু সুপ্তি সব ফেলে রাতের আঁধারে আমানের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো। তখন থেকেই সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। মাঝে মাঝে বাড়ির পুরনো কাজের মানুষের থেকে সে একটু খোঁজ খবর নেয়।

বিয়ের পর থেকেই আমান বেশ কেয়ারফুল ছিলো। অনেক আনন্দের সংসার তাদের। কখনও কোনো দুঃখ সুপ্তিকে পেতে দেয়নি আমান। সে আমানকে অনেক বিশ্বাস করে। তার বিশ্বাস আমান খারাপ কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু কোনো সমস্যা, আমান তো জানাতে পারে, কেন জানাচ্ছে না? কার কাছে জানবে? আমানের বন্ধু সহিদের থেকে জানা যেতে পারে। সুপ্তি সহিদকে ফোন দিয়ে আমান সম্বন্ধে জানতে চাই। সে কিছু জানে কি না। সহিদ যদিও বেশি বাড়িয়ে বলে তারপরও সুপ্তি অনুমান করতে পারে ঘটনা কোনটা সঠিক। এতোদিনের সংসার কি হতে পারে সে বুঝতে চেষ্টা করে।

সুপ্তি কোর্ট থেকে বেড় হয়ে হাঁটতে থাকে। দুনিয়ার চিন্তা তার মাথায় গিজগিজ করছে। নানা চিন্তা আজকাল ঠিকমতো সুস্থ থাকতে দিচ্ছে না। বাদল যদি না থাকতো তাহলে তার যে কি সমস্যা হতো। আচ্ছা, বাদল কেন এমন করে? প্রথমে তো মনে হতো জুনিয়র বলে নানা রকম সাহায্য করে। এখন তো দিন দিনে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। সে তো পুরাই বাদলের উপর নির্ভরশীল। বাদলকে তার ভালো লাগে। তাকে সে ভাবে। তবে একটা বিষয় সে খেয়াল করেছে, ছেলেটা অসম্ভব মেধাবী। উজ্জ্বল ভবিষ্যত।

সুপ্তি বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে। মেয়েটাকে কাছে ডাকে। মেয়েটার জন্য অনেক কিছু নিয়ে এসেছে। সে সেতুকে সব দেয়। সেতু খুব খুশি হয়। ম্যাডামকে সে মায়ের মতো ভালোবাসে। সুপ্তিও সেতুকে ভালোবাসে বিশ্বাস করে। সে ঘরের চারপাশ তাকিয়ে দেখে বেশ অগোছালো। বাসাটা পরিস্কার করা লাগবে। কিছুই তার ভালো লাগে না,অনেক ঝামেলা গেল।স্বামী থেকেও নাই। এভাবে আর কতদিন?

সুপ্তি নিজের রুমটাকে অনেক সময় নিয়ে পরিস্কার করলো, সেতুকে বলল ঘুমিয়ে পড়তে। তারপর নিজেও ঘুমাতে গেলো। প্রথমে আমানকে ফোন দেয়। আমান ফোন ধরে না। সে আজ দুদিন ফোন ধরছে না। আবার সে বাদলের কথা ভাবে। বাদলের সাথে তার দেখা হয়নি। কি কাজে যেনো সে খুব ব্যস্ত।

সুপ্তি অস্থির হয়ে ওঠে। ঘুম আসে না। হঠাৎ কলিং বেল বাজে। সেতুকে সে ডাকে। দেখে সেতু ঘুমিয়ে পড়েছে। ছোট মানুষ সারাদিন খাটুনির পর আর কতো! নিজেই সে উঠে গিয়ে দরজা খোলে।
সুপ্তি দেখে বাদল। সে অপ্রস্তুত হয়ে যায়।বাদল বলে, ভিতরে যেতে দিবে না?

সুপ্তি কি বলবে ভেবে পাই না। বলে আসুন। সে বলে দারোয়ান আসতে দিলো? কি বলেছেন? কেনো এসেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। সুপ্তি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে ৯ টা বাজে। ঠিক আছে তারাতারি চলে যাবেন। বাদল বলে তোমার সাথে আজ দেখা হয়নি, কথা হয়নি। ফোন দিয়েছি ফোন ধরনি। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু থাকতে পারলাম না। সুপ্তি বলে ঠিক আছে।

সুপ্তি রান্নাঘরে যায় বাদল ও পিছু পিছু যায়। সুপ্তি ভয় পেয়ে যায়। সে বলে খাবার দিই? বাদল বলে না। বাসা থেকেই আসছি এখানে কিছুক্ষণ থাকবো বলে। বাদল সুপ্তির হাত থেকে প্লেট নামিয়ে রাখে। তার হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে। বাদল বলে, তোমাকে আজ কফি বানিয়ে খাওয়াবো। সুপ্তি কেমন যেনো ঘোরের মধ্যে পড়ে যায়। সে কিছুই বলতে পারছে না। বাদল যে তাকে তুমি বলছে তারও প্রতিবাদটুকু করতে পারছে না।

বাদল আর সে সোফায় বসে আছে। একসময় বাদল উঠে দাঁড়ায় বলে কফি বানিয়ে আনি। পরে গল্প করবো। এবার সুপ্তি তীব্র প্রতিবাদ করে, সে বলে কফি খাব না। চলে যান। তাছাড়া এতো রাতে দাড়োয়ান কি ভাববে। বাদল বলে বেশি রাত না, সারে ন’টা বাজে। একটু পর কফি খেয়ে চলে যাব। সুপ্তি এখন ভয় পাচ্ছে। বাদল বলে গোসল করেছ, ভেজা চুল, সুন্দর শাড়ি পড়েছ খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।

বাদল সুপ্তির ঘনিষ্ঠ হতে চায়। সুপ্তি বুঝতে পারে। সে আবার ও বাদলকে চলে যেতে বলে। বাদল যায় না, সে বলে সরি। পরক্ষণেই আবার সুপ্তির পায়ের কাছে বসে, বলে সুপ্তি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি । সে সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে। সুপ্তিও আর কিছু বলে না, সেও বাদলকে ভালো বাসে। বাদল কফি বানিয়ে আনে, খাওয়ার সাথে সাথে কেমন যেনো অস্থির হয়ে ওঠে সুপ্তি। বাদলকে জড়িয়ে ধরে। আবার বাদলকে চলে যেতে বলে।

সুপ্তি খাটে যেয়ে বসে। কেমন যেনো এলোমেলো মনে হয় নিজেকে। বাদল তাকে আরও কফি দেয়। সে কফি খাচ্ছে বাদলকে তার আমান মনে হচ্ছে। সে উঠে এসে বাদলের কাছে বসে। বাদল তাকে শুয়ে পড়তে বলে, তার আর কিছু মনে নাই। তার শুধুই মনে হয় আমান এসেছে। হঠাৎ বাদলের ডাকে সে ধরমরিয়ে উঠে বসে। বাদল দরজা দিতে বলে, সুপ্তি দরজা দেয়। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ১টা বাজে।

সুপ্তি ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারে বাদলের উপস্থিতি। বাদল তার ঘড়ি রেখে গেছে। সুপ্তি ভাবে কেন এমন হলো? বাদল তো আগেও এসেছে তখন তো কোনো ভুল হয়নি। আজ কেন হলো। বাদল কি সব ভেবেই এসেছিলো? আর সে, সেও তো নিজেকে ছেড়ে দিয়েছে বাদলের কাছে। বাদল তো সুযোগ নিবেই। আসলেই কি বাদলকে সে সুযোগ দিয়েছে? নাকি বাদল তাকে ফাঁদে ফেলেছে। আচ্ছা কফিতে কি ছিলো? কেন এমন অস্থির লাগলো?

সুপ্তি সহিদকে ফোন দেয়। সহিদ যা বলে তার মর্মার্থ হচ্ছে আমান আবার বিয়ে করেছে এবং ব্যবসায়ীক সমস্যায় দেওলিয়া। এখন সে ছাড়া আমানের কোনো উপায় নাই। যে সহিদকে সুপ্তি ঘৃণা করে আমানকে বিয়ে করেছিলো, সেই সহিদই এখন তাদের একমাত্র শত্রু। সুপ্তি বুঝতে পারে সহিদ আমানকে ফাঁসিয়েছে। সে বাদলকে ফোন দেয়, একটা জায়গায় অপেক্ষা করতে বলে। সুপ্তি বাদলের কাছে যাই কিন্তু বাদল কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না। সে ও কি বলবে বুঝতে পারছেনা। বাদল সুপ্তির হাত ধরে মাফ চায়। সুপ্তি কি বলবে, বলে কফিতে কিছু ছিলো? হ্যাঁ বা না। বাদল কিছু বলে না। বলে তুমি তো ভালোবাসো আমায়, তাই না? দুজন বিয়ে করব।

সুপ্তি আর বাদল পাশাপাশি হাঁটছে, কেউ কোনো কথা বলছে না। দুজনেই পার্কে বসে। সুপ্তি বাদল সম্বন্ধে জানতে চাই। বাদল বলে সে একটা স্বচ্ছল
পরিবারের ছেলে। ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিলো কিন্তু মেয়েটার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়। এরপর সে কিছুই করে না ৩/৪বছর পর প্রাকটিস শুরু করে। এবং সুপ্তিকে আস্তে আস্তে তার ভালো লেগে যায়। এখন সে সুপ্তিকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। সে সুপ্তিকে বিয়ে করতে চায়। সে প্রতিদিন সুপ্তির বাসায় যেতে চায়। সুপ্তি দেখে বাদল তার সিনিয়র। চাকরিতে জুনিয়র। সুপ্তি বলে সবই ঠিক আছে, আগে আমানের বিষয়টা মিমাংসা করতে হবে।

সুপ্তি একা একা হাঁটতে থাকে আর ভাবে আজ যদি পরিবার পাশে থাকতো তাহলে বাইরের মানুষ এতোটা সুযোগ নিতে পারতো না। কেমন করে বাদল তাকে গ্রাস করতে চায়। কি করবে সে, কোথায় যাবে, কার কাছে বলবে, আমান যদি ফোনটা ধরতো তাহলে সে কখনও বাদলকে এতোটা প্রশ্রয় দিতো না। সে এখন বুঝতে পারছে বাদল অস্থির হয়ে আছে। হয়ত রাতে আসবে। তার মাথায় হঠাৎ আসে বান্ধবীর কথা। সে বান্ধবীকে রাতে এসে থাকতে বলে। আর দারোয়ানকে বলে বাসায় যেনো কেউ না আসে।

সুপ্তি বান্ধবীর সাথে বসে গল্প করছে এমন সময় কলিংবেলের শব্দ। সুপ্তি ভয়ে দরজা খোলে না। ওর বান্ধবী এগিয়ে যায়। কে জিজ্ঞেস করতেই ওপাশ থেকে বলে, আমান। সুপ্তি দৌড়ে যেয়ে নিজেই দরজা খোলে। আমানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আমানের অবস্থা খুবই খারাপ। শুকিয়ে কঙ্কাল মতো হয়ে গেছে। দাঁড়ানোর মতো
অবস্থা নাই। সুপ্তি আর তার বান্ধবী দুজনে মিলে তাকে ধরে বসিয়ে দেয়। সুপ্তি অনবরত কাঁদতে থাকে। বান্ধবী খাবার টেবিলে রাখে। আর সুপ্তি আমানকে গোসল করিয়ে দেয়।

তিন জন একসাথে খেতে বসে, সুপ্তি আমানকে খাওয়ে দেয় ।এমন সময় ফোন বেজে ওঠে। ওপাশ থেকে বাদল জানতে চায় কেমন আছ। সে বাসায় আসতে চায়। সুপ্তি বলে ভালো। আমান এসেছে। সে তিনদিন অফিসে যাবে না। তাকে সব ম্যানেজ করতে বলে। আমান জিজ্ঞেস করে কে? সুপ্তি বলতে পারছে না। আমান বলে ঠিক আছে সহিদকে কিছু বলবে না। ও আমাকে মেরে ফেলতে চায়। না, না, এখন না, পড়ে বলবো ।

সুপ্তির বান্ধবী চলে যায়। আমান সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। সুপ্তির কাছে আমানকে মনে হচ্ছে একটা গাছের মরা ডালের মতো। যেখানে প্রানের সঞ্চার নেই, উৎসাহ নেই, আগ্রহ নেই, শুধুই নিস্তব্ধতা। সুপ্তি আমানকে জাগিয়ে তুলতে অনেক চেষ্টা করে কিন্তু আমান, মনে হয় কতো যুগ সে যেনো ঘুমায় না। সে ঘুমের রাজ্যে ঢলে পড়ে।

শত্রুতা মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। সহিদ যদি আমানের সম্পর্কে মিথ্যা না বলত. তাহলে সুপ্তির আজ এমন ঘটনা ঘটত না। কিন্তু আমান সেতো ফোন করতে পারতো। আমান জেগে ওঠে বিচলিত হয়ে বলে, সুপ্তি! “যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি কি করবে?” সুপ্তি বলে কিছুই হবে না। ভালো ব্যারিস্টার ধরবো। আইনি লড়াই লড়বো তুমি জিতবে। সহিদ হারবে।

সুপ্তি আমানকে ঘুমাতে বলে। আমান অনেক আফসোস করে। সে সুপ্তিকে বাচ্চা নিতে বলে। আজ যদি একটা বাচ্চা থাকতো তাহলে সুপ্তির এতো কষ্ট হতো না। কার কাছে রেখে যাবে আমান সুপ্তিকে। সে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে। সুপ্তি বলে কিছুই হবেনা। আমান সুপ্তিকে জড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে, কতোদিন সে তার ভালোবাসা থেকে দূরে, সে আজ অক্ষম, সুপ্তি তেমনই আছে।

আমান দুদিন থেকে চলে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় বলছে, আর হয়তো দেখা হবে না। এবার সুপ্তি গাড়ির পিছনে দৌড়ে যায়, গাড়ি থেমে যায়। সুপ্তি চিৎকার করে বলে সে যাবে, নিজ চোখে সব দেখবে। সে সব জানতে চাই। এবার আমান বলে, সে সুপ্তিকে তালাকনামা রেখে গিয়েছে ব্যাগে, সুপ্তি যেনো সই করে দেয়। ব্যাংকে অনেক টাকা রেখে গিয়েছে সুপ্তির নামে। সুপ্তির মাথা ঘুরে আর কিছুই মনে নাই।

দুইদিন পর আমান একটা ভয়েজ মেল ৯9০০০পাঠায়। সেখানে সে বলে, মাদক ব্যবসা তাকে শেষ করে দিয়েছে। সহিদের চক্রান্ত সব। তার হয় যাবজ্জীবন নয়তো ফাঁসি হবে। তাই সে যেভাবেই হোক বিদেশ চলে যাবে, আর কোনোদিন ফিরতে পারবে না। সুপ্তি ও ভয়েজ মেলে বলে, তাহলে ডিভোর্স কেনো সে পরে বিদেশ যাবে। আমান বলে যে ছেলেটা বাসায় আসে তাকে বিয়ে করে সুখের সংসার করো। ও তোমাকে বাচ্চা দিবে। সুখে থেকো। সুপ্তি বুঝতে পারে কেউ একজন আমানকে বাদলের কথা বলেছে। কিন্তু কে? দারোয়ান?

সুপ্তি আজকাল ভাবতে পারে না। তার মাথা ঘুরাই। বমি বমি লাগে। আমানকে সে ফোন দেবে? প্রায় দুমাস হয়ে গেলো আমান কোনো খোঁজ নেয় না। বাদল ও বিয়ের জন্য অনেক করে বলছে, এদিকে বাদল ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যাবে। সুপ্তিকে নিয়ে যাবে। সুপ্তি বাড়ি যায়, পরিবারকে সব খুলে বলে। সবাই সিদ্ধান্ত নেয় বাদলের সাথে সুপ্তির বিয়ে দিবে।

সুপ্তি বাসায় আসে।সবই যখন ঠিকঠাক তখন সুপ্তি ঘর থেকে শুনতে পাই সেতু চুপিচুপি কার সাথে যেনো কথা বলছে। সুপ্তি আড়ালে থেকে শোনে সেতু আমানের সাথে কথা বলছে।
সেতু বলছে ম্যাডামের বাচ্চা হবে, বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। স্যার আসবেন না? সেতু বলে ঠিক আছে ম্যাডামের দিকে খেয়াল রাখব। সুপ্তির আমানের উপর অনেক অভিমান। সবচেয়ে বেশী দুঃখ সে সুপ্তিকে কিছু জানতে দেয় নাই। আবার ভাবে সব সময় খবর তো রেখেছে। কিন্তু সবকিছু খুলে বললে সে বাদলের উপর নির্ভরশীল হতো না। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করত।

সুপ্তির বিয়ে হয়ে যায়। ওরা লন্ডনে যাবার প্রস্তুতি নেয়। আমান আসে, সহিদ ধরা পড়েছে সে মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছে। সুপ্তির বাচ্চা হবে আমানের খুব ভালো লাগছে। সেতো সুপ্তিকে সুখি করতে পারে নাই। এখন থেকে সে নিরিবিলি সাদামাটা জীবনযাপন করবে। সুপ্তি সুখে থাক। সুপ্তি আমানকে তালাক দিয়েছে। বাদল সুপ্তি কে নিয়ে অনেক খুশি।

সুপ্তির সাথে আমানের দেখা হয়, সে আমানকে আগের মতোই জড়িয়ে ধরে কিন্তু আমান, সে তো জানে, এখন আর কোনো উপায় নাই। সুপ্তি এখন অন্যের স্ত্রী। আমান দূর্বল, অসুস্থ, কাঁদারও তার শক্তি নাই।আমান সারা ঘরময় ঘুরে ঘুরে দেখে। সব জায়গায় সুপ্তির হাতের ছোঁয়া ।এ সে কি করল? আমানের আর সহ্য হচ্ছে না। সে সুপ্তিকে চায় । তার ভালোবাসা, আদর, সোহাগ, শান্তি সবই সুপ্তি। কিন্তু সেকি আদৌ কোনোদিন সুস্থ হবে?সে পুরুষ, একজন অক্ষম পুরুষের কি মূল্য এ সংসারে।

আমান আবার ভাবে ভালোবাসার কি কোনো মূল্য নেই? সেতো সুস্থ হতেও পারে। কিন্তু আমান কেন এখন এসব ভাবছে? সুপ্তির কান্নার আওয়াজ আমানকে অস্থির করে তোলে। সে সুপ্তিকে আদর করতে যায় কিন্তু বাদল চলে আসাতে সে পারে না। বাদল বেড় হয়ে যায় । একটা সুযোগ দেয়, সুপ্তি যেনো কখনও আফসোস না রাখে। আমান বুঝতে পারে। বাদলের প্রতি সে সন্তুষ্ট হয়। ছেলেটা দারুণ স্মার্ট, সুপ্তির যোগ্য। এবার সুপ্তি বলে আসি। আমান বলে এসো।

সুপ্তি কত করে তাকে বলেছিলো, সে শুনেই নাই । এখন কেন এসব ভাবছে? এ কেমন নিয়তি? নিজের স্ত্রীকে নিজে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে সে। সুপ্তি ছাড়া সে কি করে বাঁচবে? এতদিন তো সে জেলে ছিলো। কিন্তু এখন?এখন কি করবে সে?ঘরের চারপাশ জুড়েই সুপ্তির স্মৃতি ।এগুলো নিয়েই সে বেঁচে থাকবে। অবশ্য সেতো এখন পঙ্গু। মাদক পাচারকারী হিসেবে ধরা পড়ে পুলিশের সে কি মারটাই না খেয়েছে। পুলিশ তাকে পঙ্গু করে দিয়েছে।

সহিদ হয়ত মেরেই ফেলতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারেনি। শুধু অক্ষম হয়েছে। আর সংসার করতে পারবেনা। তবে একটু শান্তি সে পাচ্ছে ছেলেটা অনেক ভালো। সুপ্তিকে ভালো রাখবে । সে তো সুপ্তির ভালোই চা‌য়।

আমান নিজের ভাবনা কবেই বাদ দিয়েছে! আর ভাববে না। অবহেলা পাওয়ার থেকে যে ভালোবাসা দেখিয়ে সুপ্তি গেছে সেটাই অনেক পাওয়া। হায়রে দুনিয়া, হায়রে নিষ্ঠুর নিয়তি! নিজের ভালোবাসার কাছ থেকে অপমানিত হয়ে, ধুকে ধুকে মরার চেয়ে একবারে মরে যাওয়াই ভালো।

সেখানেই শান্তি, সেখানেই সুখ!

এখন সে মুক্ত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *