
বাংলাদেশে প্রথম প্রফেশনাল মাঙ্গা আর্টিস্ট হিসেবে শান্তনা শান্তুমার স্মরণিয় জয়। কপিরাইট দ্বন্দ্বে সম্প্রতি এই শিল্পীযুগল সোর্স ও ফোরনেটসা বাংলাদেশ লিমিটেডকে হারিয়ে নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রমাণ করে। কিন্তু তারপরও বেআইনিভাবে প্রতিষ্ঠান দুটি নির্লজ্জভাবে তাদের প্রচারণায় নিজেদের প্রথম বলে দাবি করে আসছে। এতে শান্তনা শান্তুমাকে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অনুমোদনও দিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস।
মাঙ্গা বা জাপানি কমিক্স আর্টফর্ম বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক সমাদৃত ও পরিচিত। সারা বিশে^ মাঙ্গার বাজার প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাঙ্গা জাপানে শুরু হলেও বর্তমানে আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজস্ব শিল্পী দ্বারা দেশীয় মাঙ্গা প্রস্তুত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে শান্তনা শান্তুমা শিল্পী যুগল প্রথম বাংলাদেশি মাঙ্গা প্রকাশ করেন। তারা ২০১০ সাল থেকে মাঙ্গার চর্চা করতেন। ২০১৮ সালে তারা দেশিয় মাঙ্গা চর্চা ও প্রকাশের জন্য ‘মাংগা স্টেজ’ নামে কেবল মাঙ্গার জন্যই একটি প্রকাশন চালু করেন। পাশাপাশি স্বনামধন্য বেশ কিছু পাবলিকেশন তাদের অঙ্কিত মাঙ্গা নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে।
হঠাৎ ২০২৩ সালে ফোরনেটশা বাংলাদেশ লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান সোর্স নামক একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করে এবং সেখানে তাদের প্রকাশিত মাঙ্গাগুলোকে দেশের প্রথম মাঙ্গা বলে দাবি করে। ব্যাপারটি শান্তনা শান্তুমার দৃষ্টিগোচর হলে শান্তনা শান্তুমা বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের নিকট সোর্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। ফলশ্রুতিতে, সোর্স তাদের অন্যায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং এ ধরনের দাবী ও প্রমোশন আর করবে না স্বীকার করে একটি সমঝোতা চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে। কিন্তু, ২০২৪ সালে তারা পুনরায় নিজেদের বাংলাদেশি মাঙ্গার প্রণেতা দাবি করে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করে এবং সোর্সের মাঙ্গা-ই বাংলাদেশের প্রথম মাঙ্গা এরূপ মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করতে শুরু করে।
এর প্রতিক্রিয়ায় গত ২১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে শান্তনা শান্তুমা পুনরায় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের কাছে অভিযোগ দাখিল করেন এবং ২০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অভিযুক্ত ফোরনেটশা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম নাসির হোসেন নয়ন ও প্রমোটার হিশাম ইকবাল এবং অভিযোগকারী শান্তনা শান্তুমার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে উপস্থিত পক্ষদ্বয়ের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, শান্তনা শান্তুমাই প্রথম স্বীকৃত বাংলাদেশি মাঙ্গা আর্টিস্ট। কিন্তু সোর্স অবৈধভাবে নিজেদের প্রথম দাবি করে আসছিল। এছাড়াও প্রমাণিত হয় যে, সোর্স ও ফোরনেটশার কর্মকা- দ্বারা শান্তনা শান্তুমা ভোগান্তি, অসম্মান, মানসিকচাপ ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে রায় হয় যে, কপিরাইট আইন ২০২৩ -এর ১০ ধারার ক্ষমতাবলে সোর্স ও ফোরনেটশা মিথ্যা দাবিকৃত সকল কন্টেন্ট অবিলম্বে প্রচার মাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বাধ্য থাকবে।
আরো আদেশ হয় যে, প্রথম বাংলাদেশি মাঙ্গা আর্টিস্ট শান্তনা শান্তুমা সোর্সের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন ২০২৩ -এর ৭৭, ৮৪, ১০৬ ও ১০৭ ধারায় দেওয়ানিও ফৌজদারি মামলা দায়ের করার অধিকারী।