
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি নিত্যদিনের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’ অনুযায়ী ৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতি মিনিটে ২ জনের বেশি এবং প্রতিদিন কমপক্ষে তিন হাজার দুইশত (৩,২০০) জনের মৃত্যু হচ্ছে এই সড়ক দূর্ঘটনায়। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী সকল বয়সের মানুষের মৃত্যুর ১২তম কারণ এই সড়ক দূর্ঘটনা। শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, শিশু, বৃদ্ধ—কেউই এই ঝুঁকি থেকে নিরাপদ নয়। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি জাতীয় অর্থনীতির উপরেও বিশাল নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অপরিকল্পিত ও অপ্রশিক্ষিত চালনা, গণপরিবহনে প্রতিযোগিতা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, দুর্বল মনিটরিং, দুর্নীতি এবং সুষ্ঠু ও যুগোপযোগী আইনের অভাব—এই সবকিছুই সড়ককে প্রতিনিয়ত মৃত্যুফাঁদে পরিণত করছে।
এই প্রেক্ষাপটে, দেশে একটি কার্যকারী সড়ক নিরাপত্তা আইন না থাকায় একটি আধুনিক ও বাস্তবভিত্তিক সড়ক নিরাপত্তা আইন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এই আইন বাস্তবায়ন হলে চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সিং, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও ফিটনেস যাচাই, ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুর্ঘটনার পরবর্তী প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এই গুরুত্ব অনুধাবন করে, আজ ১৮ মে ২০২৫ রবিবার বেলা ১২টায় ৮ম জাতিসংঘ বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক গণস্বাক্ষর কর্মসূচীর আয়োজন করে।
এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে একটি সর্বাত্মক, বাস্তবধর্মী সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা। কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর করে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের দাবির প্রতি সমর্থন জানায়। সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ সড়কের জন্য বহুমুখী পরিকল্পনা, নিরাপদ অবকাঠামো, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহার এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে — যা জাতিসংঘের গ্লোবাল প্ল্যান অনুযায়ী ‘Safe System Approach’-এর অংশ।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র সদস্য সহযোগী অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান, ফারহানা জামান লিজা, রোড সেফটি প্রজেক্টের বিভূতী ভূষণ মাহাতো, মোঃ জুলহাস আহমেদ, মোঃ রাহাত রহমানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।