
মনি পাহাড়ী
আমাদের শব্দ পেয়ে মিম্পু বেরিয়ে এলো অভ্যর্থনা জানাতে। সবার সাথে পরিচয় হলো ছোট্ট করে। ওর সাথে আমরা ঢুকলাম আরেকটু ভেতরে। সেখানে বড় একটা ডাইনিং রয়েছে। প্রায় ৪০ জন একসাথে বসে খেতে পারে। ডাইনিংটা বেশ খোলামেলা। পরিপাটি। পরিচ্ছন্না। ঘরটা বাঁশের তৈরি। এটাই অনন্য করেছে ডাইনিং এর পরিবেশটাকে। সামনে উঠান। সেখানে যে কত বিচিত্র সব ফুলের বসতি! একেকটার একেকরূপ। মন ভরে না দেখে দেখে।
এখান থেকে আরেকটা ছোট্ট বাঁশের গেট। সেই গেট পেরিয়ে ঢুকলাম আম বাগানে। আম্রপালি আমের বিশাল বাগান! একদিকে কয়েকটা কটেজ। কটেজের সামনে খোলা বারান্দা। সেখানে টেবিল চেয়ার রাখা হয়েছে গল্প করার জন্য। এখন পানি কিছুটা নিচে। তবে বর্ষায় বারান্দার খুব কাছে চলে আসবে পানি।
আম বাগানের মাঝে বেশ খানিকটা খোলা জায়গা। এখানে তাবু খাটিয়ে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে।
আমরা যেহেতু ফিরে আসব তাই কটেজের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দিতে পারিনি। তবে এটুকু বুঝেছি যে নিরিবিলি থাকার জন্য এরচেয়ে সুন্দর জায়গা খুব কমই আছে।
মিম্পু আমাদের জন্য ঝুড়ি নিয়ে আসল। যত খুশি আম পাড়তে বলল। এই দেখে আমাদের টিমের সবাই আত্মহারা। দারুণ উৎসাহ উদ্দীপনায় কখনো হাত দিয়ে, কখনো বাঁশ দিয়ে, কখনো গাছে উঠে আম পাড়তে থাকলো সবাই। সে এক অপূর্ব দৃশ্য!
মাঝেমাঝে লিটন কিছু পাকা আম এনে দিল আমাদের। মিঠু ভাইতো রীতিমতো নভেম্বরে ক্যাম্পিং এর প্রস্তাব দিল। মামুন তখন গাছে উঠে আম পাড়তে ব্যস্ত। আরেকদিকে নিরবে আম পেড়েই চলছিল বাবুল। আমি আর তাহসিন আম পাড়তে যেয়ে রীতিমতো ডাল ভেঙে পড়লাম। আশিক আমাদের কাণ্ড দেখে লজ্জা পাচ্ছিল। মিম্পু আশিকের লজ্জা ভাঙাতে বলল-“দাদাভাই এই কয়টা আমে কী হবে! একেকজনেরতো দুইটা করেও হবে না।” এই শুনে সে একটু স্বস্তি পেল।
সবমিলিয়ে আমরা দুইমণের মত আম পাড়লাম। মিম্পু সম্ভব হলে আরও কয়েকমণ দিয়ে দিত!
পরিকল্পনা অনুযায়ী ফেরার সময় পেরিয়ে
গিয়েছিল। মিম্পুর বর আমাদের জন্য ডাইনিং এ অপেক্ষা করছিল কাঁচা আমের জুস নিয়ে। জুস খেয়ে মুহূর্তে চাঙা হয়ে উঠলাম সবাই।
দাদা বললেন- তার খুব ইচ্ছে শীতের সময় যখন ১৫০ থেকে ২০০ জন গেস্ট থাকবে তখন গতি থিয়েটারকে নাটক করার জন্য নিয়ে আসবেন গাঙপাড়ে। একথা শুনে যার পর নাই আনন্দিত আমরা সবাই।
অবশেষে বিদায় নেবার পালা। বিদায় বেলায় কিছু বারোমাসি কসমস বীজ আর লেবুর কলমচারা দিল মিম্পু। সাথে সুগন্ধি লেবুও। আর পরবর্তীতে যেসব ফুল আমাদের দু’জনেরই ভীষণ পছন্দের সেগুলোর কলম করার পরিকল্পনা হলো।
আমাদের কথা যেন ফুরোবার নয়। বিদায় নিয়েও বিদায় নেয়া হয়না।
গাঙপাড় এর সৌন্দর্য আর এর দুই পরিচালক এর আতিথেয়তা দারুণ এক আকর্ষণে টানতে থাকে। এমন মোহনীয় রূপ গাঙপাড়ের যে মনটা যেন ওখানে বাঁধা পড়ে যায়!
কোনো এক ভরা পূর্ণিমায় আবার যাচ্ছি গাঙপাড়ে। সেদিন আর ফেরার তাগিদ নিয়ে যাব না। সে রাতে কেবলই মন ভাসাব গাঙপাড়ের ঐ হ্রদ পাহাড়ের মায়াবী জোছনায়!