আগামী ৮ অক্টোবর পথচলার ১৭ বছর পেরিয়ে ১৮ বছরে পদার্পণ করছে দেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল স্টার সিনেপ্লেক্স। এ উপলক্ষে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় মিরপুরে স্টার সিনেপ্লেক্সের নতুন শাখায় জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনে থাকছে স্টার সিনেপ্লেক্স মিরপুর শাখার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং জেমস বন্ড সিরিজের নতুন ছবি ‘নো টাইম টু ডাই’-এর প্রিমিয়ার শো এ ছাড়া থাকছে কেক কাটা ও রেড কার্পেট ফটোসেশন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, করপোরেট ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র ও বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে যাত্রা শুরু করে স্টার সিনেপ্লেক্স। নান্দনিক পরিবেশ, সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্বলিত সাউন্ড সিস্টেমসহ নানা অভিনবত্বের মধ্য দিয়ে দেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের আকৃষ্ট করে প্রেক্ষাগৃহটি। নানামুখী সংকটের কারণে যখন দর্শক হলবিমুখ হয়ে পড়েছিলো তখন স্টার সিনেপ্লেক্সের যাত্রা নতুন আশার আলো সঞ্চার করে। পরিবার নিয়ে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার দিন ফিরে আসে আবার। একটা সময় হলিউডের ছবি বড় পর্দায় দেখার সুযোগ ছিলো না বাংলাদেশের দর্শকদের। সেই আক্ষেপ ঘোচায় স্টার সিনেপ্লেক্স। নতুন ছবিগুলো যখন মুক্তির পর বিভিন্ন দেশে পুরনো হয়ে যেত তখন বাংলাদেশে আসতো। দর্শকদের সেই আক্ষেপেরও অবসান ঘটিয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। এখন আন্তর্জাতিক মুক্তির দিনেই দর্শকরা দেখতে পারছেন হলিউডের সাড়া জাগানো সব ছবি। হলিউডের ছবির পাশাপাশি সুস্থধারার দেশীয় ছবিও নিয়মিতভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে। যার ফলে সিনেমাপ্রেমীদের প্রিয় নাম হয়ে উঠেছে স্টার সিনেপ্লেক্স।
বর্তমানে একটি ভিআইপি হলসহ মোট পাঁচটি হল রয়েছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে। এছাড়া ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ার এবং মহাখালীর এসকেএস টাওয়ারে দু’টি শাখা রয়েছে। সম্প্রতি মিরপুরে চালু হয়েছে চতুর্থ শাখা। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও চালু হচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স। বগুড়ার সাতমাথা মোড়ে পুলিশ প্লাজায় নির্মিত হতে যাচ্ছে নতুন শাখা। গত ৩ অক্টোবর রাজধানীর এসকেএস টাওয়ারে স্টার সিনেপ্লেক্স এবং পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মধ্যে এ বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আগামীতে ঢাকার উত্তরাসহ ধারাবাহিকভাবে দেশব্যাপী অনেকগুলো হল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায় স্টার সিনেপ্লেক্স কতৃপক্ষ। দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ক্রান্তিকালে যখন একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন স্টার সিনেপ্লেক্স নতুন নতুন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে চলেছে। করোনা মহামারীর মহাসংকটের মধ্যেও এই অগ্রযাত্রা থেমে যায়নি। দীর্ঘদিন হল বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ এই শিল্প। এ অবস্থায় স্টার সিনেপ্লেক্সের এগিয়ে চলার চেষ্টা বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখে।
দেশের সিনেমাপ্রেমী মানুষদের জন্য বিশ্বমানের আধুনিক সিনেমা হল উপহার দেয়ার পাশাপাশি চলচ্চিত্রশিল্পকে এগিয়ে নিতে স্টার সিনেপে¬ক্সের নানামুখী প্রয়াস সকলের নজর কেড়েছে। দেশীয় চলচ্চিত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এই মাল্টিপেক্স সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ বরাবরই সচেষ্ট। তাই চলচ্চিত্র নির্মাণেও যুক্ত হয়েছেন তারা। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে ভিন্নধর্মী সিনেমা নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর মুক্তি পায় স্টার সিনেপ্লেক্স প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ন ডরাই’। সার্ফিং নিয়ে নির্মিত দেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র এটি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন তানিম রহমান অংশু। কক্সবাজারের এক তরুণ নারী সার্ফারের সত্যি জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে এ ছবি। প্রথম ছবিতেই চমক সৃষ্টি করেছে স্টার সিনেপ্লেক্স। ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ সেরা চলচ্চিত্রসহ ছয়টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জয় করেছে ‘ন ডরাই’। সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেত্রী, সেরা চিত্রনাট্য, সেরা সাউন্ড ডিজাইন, সেরা সিনেমাটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ছবিটি।
১৭ বছর পূর্তিতে দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, ‘স্টার সিনেপ্লেক্স আজ এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে দর্শকদের ভালোবাসায়। দর্শকরাই স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রাণ। পথচলার শুরু থেকে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। দিনে দিনে এর পরিধি আরো বাড়বে। শুধু বিদেশী ছবির উপর নির্ভরতা নয়, আমরা চাই আমাদের দেশে ভালো ভালো ছবি নির্মিত হোক। বাংলাদেশের সিনেমা দেখার জন্য সবসময় হলে ভীড় লেগে থাকুক’।