রাজধানীতে চলছে ‘লাল সবুজের মহোৎসব ২০২১’। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো কয়েক হাজার শিশুর সম্মিলন। শিশুদের অংশগ্রহণে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে অনুষ্ঠান গড়ায় রাত ১১টা অব্দি। পুরো অনুষ্ঠানজুড়েই শিশুদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অতিথিবৃন্দ।
গান গেয়ে শিশুদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিক, কয়েক হাজার শিশুদের ‘সারপ্রাইজ গিফট’ দিয়ে তাদের চমকে দেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
আগত শিশুরা হঠাৎ ‘সারপ্রাইজ’ হিসেবে ব্যাগ ভর্তি নানা রঙের উপহার পেয়ে খুশীতে ফেটে পড়ে। পরবর্তীতে কয়েকজন শিশুর হাতে উপহার তুলে দেন সালমান এফ রহমান নিজেই।
এর আগে শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় নৃত্য, গানে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় উদযাপিত হয় সন্ধ্যাটি। পরিবেশনার পাশাপাশি দর্শক-শোতাও ছিলো শিশুরাই। আর এভাবেই বর্ণিল রূপ পেল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে হাতিরঝিলের অ্যামফিথিয়েটারে চলমান ‘বিজয়ের ৫০ বছর : লাল সবুজের মহোৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার ছিল এফবিসিসিআই আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন। শিশুদের অংশগ্রহণে নানা পরিবেশনার শিশুদের পরিবেশনা শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যান্ডদল স্পন্দন ও ধ্রুবতারা। এ সময় স্পন্দন ব্যান্ডের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতে স্টেজে উঠে পড়েন মেয়র আতিক। তার সঙ্গে গানে কণ্ঠ মেলান শিশুরাও।
এতে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমবেত শিশুরা অংশ নেয়। বাংলার ষড়ঋতুসহ দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন গেন্ডারিয়া কিশালয় কচিকাঁচার মেলার শত শিশু শিল্পী।
প্রায় এক ঘন্টার নাচ-গানের পরিবেশনায় মাতিয়ে রাখে তারা। শুরুতেই সম্মেলক কণ্ঠে তারা গেয়ে শোনায়- জয় বাংলা বাংলার জয়/হবে হবে নিশ্চয়/কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে/জেগে ওঠার এই তো সময় …।
এই সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচ করে আরেক দল। নেপথ্যে উচ্চারিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা অধ্যায়। পরের পরিবেশনার শিরোনাম ছিল ‘গ্রীস্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত বসন্ত’।
এই গানের সুরে নৃত্যশিল্পীরা ফুল, পাখির সঙ্গে ছাতা মেলে নাচ করে। এভাবেই পুরো আয়োজনটি এগিয়ে চলে নৃত্য-গীতের সম্মিলনে। ষড়ঋতুনির্ভর পরিবেশনার মাঝে বয়ে যায় মেঘ, বৃষ্টি, ঝড়। মনোমুগ্ধকর নাচের সঙ্গে ব্যাকড্রপ স্ক্রিনের আকাশে ভেসে বেড়ায় শরতের নীলাকাশ। দুলতে থাকে শ্বেতশুভ্র কাশফুল।
এভাবেই নানা অনুষঙ্গের আশ্রয়ে প্রতিটি ঋতুই উঠে অনিন্দ্য সুন্দর উপস্থাপনায়। তাদের সেই পরিবেশনায় মুগ্ধতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে দর্শকসারি থেকে বারংবার ঝরে পড়ে করতালি। গ্যালারিজুড়ে ছড়িয়ে ছিল জাগো ফাউন্ডেশনের এক হাজার শিশু-কিশোর শ্রোতা-দর্শক।
এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্র্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান।
দর্শকসারিতে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, তোমরা আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করবে। পড়াশোনার পাশাপাশি গান শিখবে, কবিতা আবৃত্তি করবে, বিতর্ক করবে। তোমদেরকে আনন্দ নিয়ে পড়াশোনার করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই বক্তব্যে শিশু-কিশোররা করতালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
সালমান এফ রহমান বলেন, বিজয়ের ৫০ বছর আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ববহ। কারণ, এই দেশ স্বাধীন না হলে আজ আমরা কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারতাম না। ব্যবসায়ী কিংবা অন্য কোনো পরিচয়ও আমাদের হতো না। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে এইসময়টি আর আসবে না। সে কারণেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই বিজয়ের মাসের শুরু থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত আমাদের এই বিজয় উদযাপন করবো।
এদিনের পরিবেশনা পর্বে উপস্থাপিত আরো কয়েকটি গানের শিরোনাম ছিল- ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে/আয় রে আয় আয়’, ‘বাজেরে বাজে ঢাক/এলো বৈশাখ’, ‘শিউলিতলায় ভোরবেলায় পুষ্প কুড়ায় পল্লী বালা’, ‘আমার মাইজা ভাই সাইজা ভাই কই গেলারে’
আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান। আজ শুক্রবার তৃতীয় দিনের আয়োজনে পরিবেশিত হবে নারীদের বিশেষ অনুষ্ঠান।