শুক্রবার, এপ্রিল ২৬Dedicate To Right News
Shadow

ইত্যাদি এবার হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে

Spread the love

আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রাচীন নিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্থানসমূহে গিয়ে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ডাকবাংলোর সামনে। গত ১১ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাংলোর সামনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত সংখ্যক দর্শক নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি। স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে সকল দর্শককেই ইত্যাদির বিশেষ মাস্ক দেয়া হয়। ম্যানেজার বাংলোর সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে নির্মিত আলোকিত মঞ্চে ইত্যাদির এই ধারণ অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। উল্লেখ্য দর্শকপ্রিয় ইত্যাদি এবার ৩৩ বছর শেষে আগামী বছর পা দেবে ৩৪ বছরে।
এবারের অনুষ্ঠানে গান রয়েছে দুটি। আমাদের মহান বিজয় আনতে বাংলাদেশের লাখো সন্তান দিয়ে গেছে প্রাণ, তাদের স্মরণে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা ও ইবরার টিপুর সুরে একটি দেশাত্মবোধক গান দ্বৈতকণ্ঠে গেয়েছেন শিল্পী সামিনা চৌধুরী ও ফাহমিদা নবী। হবিগঞ্জের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের পরিচিতিমূলক আর একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছে স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। গানটির কথা লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সংগীতায়োজন করেছেন নাভেদ পারভেজ, কণ্ঠ দিয়েছেন রিয়াদ ও তানজিনা রুমা। নৃত্য পরিচালনা করেছেন মনিরুল ইসলাম মুকুল।
শেকড়ের সন্ধানে ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি গত প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইত্যাদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতে হবিগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপকের বাংলো নিয়ে রয়েছে তিনটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। গল্পের আরব্য উপন্যাসের আলাদীনের চেরাগ বাস্তবে খুঁজে পাওয়া না গেলেও এবারের অনুষ্ঠানে ফরিদুল আলম নামে একজন প্রযুক্তিপ্রেমী ব্যবসায়ীকে দেখানো হবে, মানুষকে সেবা দিয়ে যিনি হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি যুগের আলাদীনের চেরাগ। ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের সাড়ে সাত বছরের বিস্ময় বালক সামিউন আলিম সাদের উপর রয়েছে একটি শিক্ষামূলক প্রতিবেদন। যে শিশুটি মোবাইলের অপব্যবহার নয় বরং এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বিস্ময়কর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। গত ২৯ অক্টোবর প্রচারিত ইত্যাদিতে সোনারগাঁয়ের আত্মপ্রত্যয়ী যুবক শাহেদ কায়েসকে তার ‘বেদেবহর ভাসমান পাঠশালা’র ক্ষতিগ্রস্থ নৌকাটি মেরামতের জন্য এক লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছিলো। এবারের পর্বে তার ভাসমান পাঠশালার উপর রয়েছে একটি ফলোআপ প্রতিবেদন। গত ২৯ জানুয়ারি প্রচারিত ইত্যাদিতে চুয়াডাঙ্গা জেলার ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের পাখি প্রেমের উপরও রয়েছে আর একটি অনুসৃত প্রতিবেদন। মানবতা এবং বিবেকের চেতনা জাগ্রত থাকলে-নিজে যেমন সফল হওয়া যায়, তেমনি সাফল্য আনা যায় অন্যের জীবনেও। এবারের অনুষ্ঠানে তেমনি দু’জন মানুষের উপর রয়েছে একটি উদ্বুদ্ধকরণ মানবিক প্রতিবেদন। ইত্যাদিতেই প্রথম শুরু হয় বিদেশি প্রতিবেদন শিরোনামে বিশে^র বিস্ময়কর বিষয় ও স্থানের উপর প্রতিবেদন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বে রয়েছে গ্রীসের প্রাচীন নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী অ্যাক্রোপোলিসের উপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন।
দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান হবিগঞ্জকে নিয়ে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্ব সাজানো হয়েছে হবিগঞ্জের চারজন বিখ্যাত কবি ও সাধকের কিছু কালজয়ী গান নিয়ে। নির্বাচিত দর্শকদের সাথে এই পর্বে অংশগ্রহণ করেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী এবং এই প্রজন্মের শিল্পী আশিক চৌধুরী। পর্বটি ছিল বেশ উপভোগ্য।
নিয়মিত পর্বসহ এবারও রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষè নাট্যাংশ। পরশ্রীকাতরের দ্ব্যর্থহীন স্বীকারোক্তি, বাজার করতে গিয়ে বেজার ক্রেতা, লোক দেখানো দান, মেলার ম্যালা ধরন, পর্দার প্রেম বনাম বাস্তব প্রেম, চাওয়ার সাথে পাওয়ার অমিল, প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে মুক্তি পেতে অবাক যুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন-সোলায়মান খোকা, আফজাল শরীফ, জিল্লুর রহমান, কামাল বায়েজিদ, শবনম পারভীন, আমিন আজাদ, নিপু, আবু হেনা রনি, আনন্দ খালেদ, জামিল হোসেন, বিলু বড়–য়া, রতন খান, তারিক স্বপন, নজরুল ইসলাম, আনোয়ার শাহী, আনোয়ারুল আলম সজল, সাজ্জাদ সাজু, সাবরিনা নিসা, সুবর্ণা মজুমদার, শামীম, জাহিদ শিকদার, মতিউর রহমান, মনজুর আলম, হাশিম মাসুদ, তানিয়া, সিলভিয়া, বেলাল আহমেদ মুরাদসহ আরো অনেকে। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা সরকার ও মোহাম্মদ মামুন।
গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির এই পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর, শুক্রবার-রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *