অ্যাড ভ্যালোরেম এর পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি প্রবর্তন এবং সকল তামাকপণ্যে মূল্য বৃদ্ধি, সিগারেটে বিদ্যমান মূল্যস্তর ৪টি থেকে ২টিতে কমিয়ে আনাসহ ব্যাপকভাবে নিম্নস্তরের সিগারেটের কর ও মূল্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যবৃন্দ। বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং’ -এর এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধির বিষয়ক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
সভায় ফোরামের সদস্য অপরাজিতা হক এমপি বলেন, ‘তামাকপণ্যে বর্তমান ট্যাক্স স্ট্র্যাকচার খুবই জটিল। এড ভ্যালোরেম কর পদ্ধতি ও সিগারেটের ও ৪টি মূল্যস্তর থাকায় তেমন লাভ হচ্ছে না। আমাদেরকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতিতে আসতে হবে। মূল্যস্তর ২টিতে নামিয়ে আনতে হবে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কর বৃদ্ধির করলে শুধু উপরের স্তরের সিগারেটের দাম বেশি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তামাক ব্যবহারকারীরা নিচের স্তরের সিগারেট খাচ্ছে। তাই নিচের স্তরের দাম বাড়াতে হবে।’
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি, ‘আমরা যত দ্রুত তামাকের কর বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করতে পারবো, আমাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়বে। কারণ তামাক কোম্পানিগুলো খুবই শক্তিশালী। এই বাজেটে যুক্তিযুক্ত কর বৃদ্ধি করতে হলে আমাদেরকেও এগিয়ে থাকতে হবে। পাশাপাশি, সরকারি কোন সংস্থা তামাকের কর বৃদ্ধির বিপক্ষে কিছু করলে আমাদেরকে অবশ্যই তা প্রতিহত করতে হবে।’
ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি এমপি বলেন, ‘তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এই মার্চের মধ্যেই কর কাঠামো কেমন হওয়া দরকার সে ব্যাপারে সবার মধ্যে একটা ধারণা তৈরি করে দিতে হবে। পাশাপাশি, তামাক কোম্পানি যেন এবার কর বৃদ্ধিতে বাঁধা সৃষ্টি না করে সেটিও লক্ষ্য রাখতে হবে।’
তামাক নিয়ন্ত্রণে ফোরামের নানান সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন ফোয়ামের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি। এর মধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৫৩ জন এমপির চিঠি, তামাক আইন সংশোধনের দাবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিকট ১৫২ জন সংসদ সদস্যের চিঠি এবং সর্বশেষ জাতীয় বাজেটে তামাকের উপর কর বৃদ্ধির সুপারিশ জানিয়ে অর্থমন্ত্রীর নিকট চিঠি দেওয়া উল্লেখযোগ্য।
সভায় অন্যান্য সংসদ সদস্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার এমপি, শবনম জাহান এমপি, হাবিবা রহমান খান এমপি এবং হোসনে আরা বেগম এমপি। উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সাচিবিক দায়িত্বে থাকা উন্নয়ন সংস্থা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং পরিচালক রফিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই মুহূর্তে দেশের ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। তামাকের কারণে বছরে মৃত্যুবরণ করেন প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ। তামাকের উপর যুক্তিযুক্ত কর ও মূল্য বৃদ্ধি করা গেলে প্রায় ৯ লক্ষ তরুণকে তামাক ব্যবহার থেকে বিরত করা যাবে এবং প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ তরুণ অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও বাড়তি ৯,২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।