বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫Dedicate To Right News
Shadow

তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যবৃন্দ বদ্ধ পরিকর: বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম

Spread the love

প্রতি বছর দেশের মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, যার অন্যতম কারণ তামাক ও তামাকপণ্যের ব্যবহার৷ তামাকের এই ভয়াবহতা উপলব্ধি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে গঠিত ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন নিয়ে কাজ করছে। জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে ফোরামটি সকল পর্যায়ে কাজ করে যেতে চায়।

০২ এপ্রিল, শনিনার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এর নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ফোরাম আয়োজিত গণমাধ্যমের সাথে ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব মো: শামসুল হক টুকু এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি জনাব ফরিদা ইয়াসমিন এবং আদিবা আনজুম মিতা এমপি; এবং সভাপতিত্ব করেন ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি।

প্রধান অতিথি মো: শামসুল হক টুকু বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর বলেই, গত ২০১৬ সালে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আছে, কিন্তু আইনে ফাকফোকর রয়েছে। ধূমপানের কারণে সাধারণ মানুষ, শিক্ষারত্থী সকলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে শুধু সরকারি ও প্রশাসন দিয়ে এটা ঠেকানো যাবে না। আইন যেমন সংশোধন করতে হবে, তেমনই গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। ধূমপানের মাধ্যমে মাদকও আসবে। তাই মাককমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলেও ধূমপান বন্ধ করতে হবে। প্রতি বছর আমরা তামাকের কর বৃদ্ধি এবং কর বাড়ানোর ব্যাপারে চেষ্টা করছি। এবারের বাজেটেও আমরা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবো।’

বিশেষ অতিথি আদিবা আনজুম মিতা এমপি বলেন, ‘আমাদের গণমাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কর্মকাণ্ড বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। তামাকের ক্ষতিগ্রস্ত প্রভাবের কারণে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। তামাকের কারণে ফুসফুস ক্যান্সার, দাঁতের ক্যান্সারসহ নানান মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছি আমরা। তাই তামাক আইন সংশোধন করে যুগপোযোগী করতে হবে। তামাকের উপর কর ও মূল্য বৃদ্ধিও জরুরি। ‘

দেশের শতকরা ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো তামাকপণ্য ব্যবহার করে। বছরে প্রায় ৬১ হাজার শিশু ধূমপান না করেও তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে মৃত্যুবরণ করেন ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ। তামাকের এই ভয়াবহতা উপলব্ধি করে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘সংসদ সদস্যবৃন্দের এই উদ্যোগগুলো আমাদেরকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করছে। আমরা সবাই একসাথে কাজ করতে চাই। এখন সিগারেট খাওয়ার হার আরও বেড়েছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে ধূমপানের হার বাড়ছে। আমাদের দেখতে হবে কীভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদেরকে বিদ্যমান আইন যা আছে তাতে সংশোধনী প্রয়োজন রয়েছে। আইনের অনেক ফাঁকফোঁকর যদি না থাকে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আমি মনে করি এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আমদের দ্রুত কাজ করা দরকার। আইন সংশোধন করা দরকার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি করা দরকার।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জনাব নুরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘বাংলাদেশে তামাক-বিরোধী আন্দোলন চলছে, যেখানে আমি সবসময় সমর্থন করি। এটা বন্ধ করতে পারলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সহায়ক হবে। তবে শুধু তামাক নিয়ন্ত্রণ নয়। পাশাপাশি ঢাকা শহরের বিভিন্ন ইস্যুগুলোও আমাদের দেখতে হবে। ঢাকার দূষিত হাওয়া, যেখানে থুথু ফেলাসহ সকল স্থানে কম্প্রিহেনসিভ জায়গা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

এর আগে অনুষ্ঠানে তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তার উপস্থাপনায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে কিছু বিষয় সংযোজন জরুরী বলে উল্লেখ করা হয়। উঠে আসে বিদ্যমান আইনের কিছু ফাঁকফোঁকরও। বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন (Product display) নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির ‘কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ (CSR) কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা (Single stick)/ মোড়কবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট (HTP) নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি করার মতো বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য।

তামাক নিয়ন্ত্রণে ফোরামের নানান সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন ফোরামের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং- এর মাধ্যমে সংসদ সদস্যবৃন্দ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানান কার্যক্রম পালন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ফোরামের পক্ষ থেকে ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। বিভিন্ন সময়ে আমাদের এসব কার্যক্রমে মাননীয় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অংশগ্রহণ করে একাত্বতা প্রকাশ করেছে, যা আমাদের লক্ষ্য অর্জনকে তরান্বিত করবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর ১৫২ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত চিঠি প্রদান। ১৫৩ জন সংসদ সদস্য মিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ই-সিগারেটসহ তামাক আইন সংশোধনে ডিও লেটার প্রদান। সকল তামাকপণ্যে কর ও মূল্যবৃদ্ধির জন্য অর্থমন্ত্রীর নিকট চিঠি প্রদান। আমরা সকলে মিলে আমাদের এই কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে বাংলাফেশকে তামাকমুক্ত করতে চাই।”

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো ফ্রি কিডস এর প্রতিনিধিবৃন্দ। আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন তামাক-বিরোধী সংস্থা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *