তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং’ আয়োজিত ‘তামাক: পরিবেশের জন্য হুমকি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রেস্টুরেন্ট স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, গার্লস গাইড, স্কাউটসের প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জাং রানা। পার্লামেন্টারি ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি সভাটির সভাপতিত্ব করেন।
শপথের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে, সকল প্রকার তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার পাশাপাশি অন্যদেরকেও তামাকজাতপণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার অঙ্গীকার করে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অতিথিবৃন্দও এই শপথ গ্রহণ করেন।
এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি বলেন, ‘আমাদের দেশে পুরুষদের চেয়ে নারীরা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বেশি ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয়, তরুণ নারীদের মধ্যেও ধূমপানের হার বাড়ছে। পাশাপাশি, বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের মতো পাবলিক প্লেস ও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, বাসাবাড়ি ও রেস্টুরেন্ট; সবখানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে আমাদের নারী ও শিশুরা। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে তামাকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে।’
শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘ধূমপানের মধ্যে কোন ভালো কিছু নেই। এটা খুবই কষ্টদায়ক একটা ব্যাপার। তাই তোমরা কখনও ধূমপান করবে না, অন্য কোন তামাকপণ্যও ব্যবহার করবে না। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আমাকে অনুপ্রাণিত করছে। এর মধ্যে দিয়েই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জাং রানা, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং’ এর এই উদ্যোগের সাধুবাদ জানান।
সভাপতিত্বের বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি বলেন, ‘একটি সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা এজন্য জরুরী যে, ধূমপান না করেও আমাদের সন্তানেরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে পাবলিক প্লেস, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এবং রেস্টুরেন্টে স্মোকিং জোন থাকার কারণে শিশু ও নারীরা ভুক্তভোগী হচ্ছে।’
এছাড়াও মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো-ফ্রি কিডস এর লিড পলিসি এডভাইজর মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক রফিকুল ইসলাম।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, তামাক-বিরোধী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অধ্যাপক, ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো-ফ্রি কিডস ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিবৃন্দ।