প্রতি বছর দেশের মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, যার অন্যতম কারণ তামাক ও তামাকপণ্যের ব্যবহার৷ তামাকের এই ভয়াবহতা উপলব্ধি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে গঠিত ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন নিয়ে কাজ করছে। এই ধরনের কাজে বাংলাদেশের সংসদ সদদ্যবৃন্দই সবচেয়ে এগিয়ে। ভবিষ্যতেও এ ধরণের উদ্যোগের সাথে সংসদ সদস্যবৃন্দ জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে পাশে থাকবে।
৩০ জুলাই, শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে, আয়োজিত, ‘Tobacco Control Law Amendment for Achieving Tobacco-Free Bangladesh by 2040’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা উঠে আসে। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহায়তায় ছিল ফোরামের সাচিবিক সংস্থা দেশীয় উন্নয়ন সংস্থা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং’ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তামাকপণ্য সেবন করে। এখানে তামাকপণ্যের দাম সবচেয়ে কম। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে আছে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে মাত্র ৩০০ টাকা জরিমানা হয়। আমাদের পাবলিক প্লেসে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করা জরুরি। আমরা খেয়াল করেছি বর্তমান আইনে কিছু ব্যাত্যয় রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৫৩ এমপির স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছি। এটা বিশ্বের আর কোথাও হয়নি। আগে একটা সময় ছিল যখন তামাকের পক্ষে সংসদ সদস্যবৃন্দ চিঠি দিতেন। সেই অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। আমরা বিদ্যমান তামাক আইন পরিবর্তনের লক্ষ্যে ১৫২ জন সংসদ সদস্যের চিঠি দিয়েছি। তামাকের কর বাড়ানোর সুপারিশ জানিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে ৮৬ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছি। আমরা ৪০ জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে কক্সবাজারে তামাক-বিরোধী কনফারেন্স করেছি। কক্সবাজার ঘোষণা প্রদান করেছি। আমরা ইতোমধ্যে কাজ করার মাধ্যমে সুফলও পাচ্ছি। ইতোমধ্যে তামাক-বিরোধী সকল পক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অনেকগুলো সুপারিশ প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও এটা আইন সংশোধনের প্রথম ধাপ। তবে আমরা আশাবাদী, খুব দ্রুতই আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো।’
এর আগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তার উপস্থাপনায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে কিছু বিষয় সংযোজন জরুরী বলে উল্লেখ করা হয়। উঠে আসে বিদ্যমান আইনের কিছু ফাঁকফোঁকরও। বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন (Product display) নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির ‘কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ (CSR) কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা (Single stick)/ মোড়কবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট (HTP) নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি করার মতো বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য।’
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো ফ্রি-কিডস বাংলাদেশ এর লিড পলিসি এডভাইজর মোস্তাফিজুর রহমান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম, রত্নগর্ভা ফরিদা জামান স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফরিদা জামান। উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেসজ্ঞ, বিভিন্ন তামাক-বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রমুখ।