![](https://bn.thestatement24.com/wp-content/uploads/2022/08/Swapnadal-production-Tringsha-Shatabdee-1024x684.jpg)
‘আর নয় হিরোশিমা, আর নয় নাগাসাকি, আর নয় যুদ্ধ’- এ স্লোগান নিয়ে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদলের আয়োজনে ৬ই আগস্ট শনিবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ‘ত্রিংশ শতাব্দী’-র বিশেষ মঞ্চায়ন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতায় ‘হিরোশিমা দিবস ২০২২’ পালন করা হবে। বাদল সরকারের মূলরচনা অবলম্বনে হিরোশিমা-নাগাসাকির বিয়োগান্তক ঘটনানির্ভর স্বপ্নদলের দেশ-বিদেশে দর্শকনন্দিত যুদ্ধবিরোধী গবেষণাগার প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’-র রূপান্তরসহ নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। শান্তির স্বপক্ষে উদ্বুদ্ধকরণ ও যুদ্ধবিরোধী প্রচারণাসহ ২১ বছর ধরে নিয়মিতভাবে নানা আনুষ্ঠানিকতায় পৃথিবীর একমাত্র নাট্যদল হিসেবে ‘হিরোশিমা দিবস’ পালন করে আসছে স্বপ্নদল।
হিরোশিমা-নাগাসাকির বিষাদময় ঘটনার ৭৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘হিরোশিমা দিবস ২০২২’-এর অনুষ্ঠানমালায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেÑ বিকাল ৫টা থেকে এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলের লবিতে হিরোশিমা-নাগাসাকিভিত্তিক যুদ্ধবিরোধী পোস্টার-আলোকচিত্র-ভিডিও-ইন্সটলেশন আর্ট প্রদর্শনী। সন্ধ্যা ৭টায় মিলনায়তনে থাকছে যুদ্ধযন্ত্রণার প্রতীক জাপানি শিশু সাদাকো সাসাকি স্মরণে কাগজের সারস বিতরণ, যুদ্ধবিরোধী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এবং ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার ১১৭তম মঞ্চায়ন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশে জাপানের মান্যবর রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং জাপানে বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক নাট্যজন ড. রশীদ হারুন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন স্বপ্নদলের প্রধান সম্পাদক জাহিদ রিপন।
এবারে জাপান দূতাবাস স্বপ্নদলের ‘হিরোশিমা দিবস ২০২২’ আয়োজনকে জাপান-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বর্ষপূর্তিতে জাপান-দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আয়োজন হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়া ‘হিরোশিমা দিবস ২০২২’ আয়োজনে স্বপ্নদলের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশেস্থ জাপান দূতাবাস, জাপানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, টোকিও ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজের বাংলা বিভাগ, ইংল্যান্ডের এ সিজন অব বাংলা ড্রামা, অস্ট্রেলিয়ার রেনেসাঁ ড্রামা সোসাইটি, ফ্রান্সের নাট্যসংগঠন লা রিভে ইকুইপ, শ্রীলংকার রেড অপেল ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার গ্যাদারিং, জাপানের কাহাল গ্যালারি, বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের নাট্যসংগঠন রিষড়া দূরায়ণ।
যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ ‘ত্রিংশ শতাব্দী’-র মূলকাহিনি পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা বিস্ফোরণের অপ্রত্যাশিত পরিণতি। এর সমান্তরালে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বসনিয়া-ফিলিস্তিন, আফগানিস্থান, পাকিস্তান-ভারত, ইরাকে আগ্রাসন, কুয়েত-তিউনিশিয়া-ইয়ামেন-সিরিয়া-তুরস্ক-মিয়ানমার-গুলশানে বর্বর হামলা, সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা সংখ্যালঘু নির্যাতন বা শিক্ষক-লাঞ্ছনা প্রভৃতি প্রসঙ্গ। ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনায় নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবাজ-যুদ্ধাপরাধী-অশান্তিকামীদের স্বরূপ এবং তাদের কাজের তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী বীভৎসতার চিত্র উদঘাটিত হয়েছে। সভ্যতা ধ্বংসকারী মানবসৃষ্ট যুদ্ধ-গণহত্যা-অনাচারের বিপরীতে মানুষ হিসেবে বর্তমান কর্তব্য অনুধাবন এবং এক্ষেত্রে দর্শককে সিদ্ধান্তগ্রহণের মুখোমুখি স্থাপনই ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার প্রত্যাশা। প্রযোজনাটির উপস্থাপনায় প্রয়োগ করা হয়েছে হাজার বছরের নাট্য-ঐতিহ্যের ধারায় আধুনিক ‘বাঙলা নাট্যরীতি’।
প্রসঙ্গত, ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনাটি ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে জাপানের প্রধান নাট্যোৎসব পৃথিবীখ্যাত ‘ফেস্টিভ্যাল/টোকিও ২০১৮’, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইউরোপের স্বনামখ্যাত নাট্যোৎসব ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা ২০১৫’, নয়াদিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি)-তে এশিয়ার বৃহত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ ভারতের রাষ্ট্রীয় নাট্যোৎসব ‘ভারত রঙ মহোৎসব ২০১৫’, ভারতের নানাস্থানে আমন্ত্রিত মঞ্চায়নসহ মোট ১১৬টি মঞ্চ-প্রদর্শনীর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের মর্যাদাকে উজ্জ্বল করেছে।