গপটি বহু পুরনো, সেই ব্রিটিশ আমলের। যখন আমরা তাদের কলোনির কেঁচো বাসিন্দা ছিলাম।
এইসব গপশপ নিয়ে চা-শপে নিত্য তাল ওঠে চৌমাত্রিক! চুমুক থামে না কারও, আড্ডার এক একজন আর্দালী যেনো আস্তো একেকজন দার্শনিক, কতো জানবুঝ! আহারে কতো কথা..!
চায়ের চুমুকে কতো আন্দোলন হয়েছে, থাপ্পরের পর থাপ্পর পরেছে, হাততালিও কম পরে নি, তখনো নাকে লাগেনি কলোনির নষ্ট ঘ্রাণ, এখনও একইরকম আছে, হৈচৈ আছে, আড্ডার সাথে চলে আলাপ ; বিষয় বৈচিত্র ভাঙতে, আমরা ইতিহাসে ঢুকে, পড়ি নীলচাষীদের আর্তনাদের করুণ কাহিনি! ঢুকে দেখি নীলচাষের ইউটোপিয়া টোপ হয়ে শিকারীর বড়শিতে বিঁধে প্রায় সর্বত্র আনন্দ, কল্পনা, বেদনার রাজত্ব একই রকম চলছে, কেবল সময়ের মেটাফর মাত্র!
চায়ের আড্ডায় কাপ-পিরিচ কখনো সখনো ভাঙলেও চুমুক চলে গরমজল গিলে গিলে পেট ভর্তি করে যার যার বাড়ি ফেরা আর চা শ্রমিকদের আন্দোলনের কতোদিন পার হলো হিসেব করতে করতে দেখা যায় হিশেব মেলার আগেই নড়বড়ে গেটের কাছে পৌঁছে ফোন দিই আড্ডারুদের, তোমার আগেই এসে গেছি, দূরত্ব ও দুর্গতি দুই-ই তোমাদের চেয়ে কম অর্থাৎ আরামে নিরাপদে ঢুকে গেলাম বাড়ির মধ্যে।
পরেরদিন চাড্ডায় কাপের পর কাপ চা গিলতে গিলতে তিনশো টাকা সামান্য মজুরি, ন্যায্যতার চেয়েও কম দাবীর এই পাওনা আরও বহু আগেই কেনো পায় না তারা?
একটা লম্বা চিহ্ন চুমুকেচুমুকে শোড়গোল ভেঙে গলার মধ্যে কাঁটা হয়ে বিঁধে গেলো, বুঝতে পারি যতই ঢোক আর ঢেকুর ওঠে মিষ্টি চায়ের ঘ্রাণ নয়, কলেনির বিশ্রী ঘ্রাণ উঠে আসে।
আবার একটি কাপ ভাঙি, পরে থাকা মায়াবীহরিৎ পিরিচের মহব্বতে বড়শি হয়ে বিঁধে থাকি!
চা-পাতারা এইসব গপশপে দারুণ বিরক্ত হলেও তরতাজা সতেজ বাড়ন্ত পাতাগুলির ঊর্ধ্বমুখী আন্দোলনের আঁচ ঠিকই চা-শপের কেতলির গরমজলে সিদ্ধ হতে থাকে..!