দেশাত্ববোধের জন্ম হয় স্বাধীনতাহীনতার ধারণা থেকে। দীর্ঘ পরাধীনতার ইতিহাসে এই উপমহাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশাত্ববোধের চেতনা জাগ্রত হয় বৃটিশ শাসনের শেষার্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর বেশ কয়েকজন সুরকার গীতিকার সঙ্গীত পরিচালক ও কন্ঠযোদ্ধাদের নতুন নতুন গানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করে। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও বিভিন্ন ধরণের চলচ্চিত্রে দেশাত্ববোধক গানের উপস্থাপন লক্ষ্য করা যায়। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দেশাত্ববোধক গানের ব্যবহার কতটা তা এসেছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের আজকের সেমিনারে।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সেমিনার হলে আজ ৩০ অক্টোবর সকালে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দেশাত্ববোধক গানের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সেমিনার। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক সাংবাদিক আহসান উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীত পরিচালক সুরকার শেখ সাদী খান, বিশিষ্ট গীতিকার মুন্সি ওয়াদুদ ও গবেষনা কর্মের তত্ত্বাবধায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. সাইম রানা। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক ড. মো: মোফাকখারুল ইকবাল। সেমিনার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো: নিজামুল কবীর। এ ছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট পরিচালক, গবেষকগণ।
শেখ সাদী খান
সুরকার সঙ্গীত, পরিচালক
আজকের সেমিনারে তিনি বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে দেশাত্ববোধক গানের বিশ্লষণ- বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সময়ে দেশাত্ববোধক গানের ব্যবহার হয়েছে। অনেকাংশেই প্রতিকি হিসাবেই ব্যবহার হয়েছে বলেই মনে হয়। বেশীর ভাগ সময়ে যে গান গুলো ব্যবহার হয়েছে সে গুলো বিশেষ করে ৭১ এর যুদ্ধের ঘটনা এবং স্পষ্ট তুলে ধরা হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত মতামত চলচ্চিত্রে দেশের গান শ্রোতা দর্শকদের খুব আকৃষ্ট করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। দেশের গানে দেশ গড়া, সমাজ গড়া, বা বোধ সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। চলচ্চিত্র একটা বিরাট ক্যানভাস। সেখানে সমাজ পরিবর্তনের দিকে জীবন পরিবর্তন, সমস্যা এবং আগামী প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখানোর ব্রত নিয়েই দেশের গান বা দেশের প্রতি নতুন প্রজন্মের উদ্দিপনা গড়ে তোলার প্রত্যাশা রাখি।
মুন্সি ওয়াদুদ
গীতিকার
তিনি বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে দেশাত্ববোধক গানের বিশ্লষণ শীর্ষক গবেষনাপত্রে ‘দেশাত্ববোধক’ শব্দটি দেখে আমি আপ্লুত হয়েছি। স্বাধীনতা পূর্বকালে দেশাত্ববোধক শব্দটির সাথে খুব পরিচিতি ছিলো। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশাত্ববোধক গানের স্থলে দেশের গান শব্দের ব্যবহার দেশাত্ববোধ থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো। আজ এই দেশাত্ববোধ শব্দটি দিয়ে আমি আমার দেশপ্রেমকে পরিপূর্ণভাবে পেলাম বলে মনে হয়।
ড. সাইম রানা
সহকারি অধ্যাপক, সঙ্গীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আজকের সেমিনারে তিনি বলেন, দেশাত্ববোধকে জাগিয়ে তুলতে চলচ্চিত্র সংগীতের দেশাত্ববোধক গানকে নিয়ে গবেষনার বিকল্প নেই। স্বাধীনতার পর বাংলা চলচ্চিত্রে যে সকল দেশাত্ববোধক গান ব্যবহৃত হয়েছে, তা বাংলা গানের যেকোনো ধারা থেকে স্বতন্ত্র সুর কথা ও সঙ্গীত আয়োজনের অভিনবত্ব বাংলা সঙ্গীতকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে।