পাহাড়ের সবচেয়ে বড় উৎসব বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু বিহু ২০২৩ উপলক্ষে ৫ দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা চলবে ৩ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল ২০২৩ খ্রি. পর্যন্ত। মেলায় নানান সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি চলছে ঐতিহ্যবাহী পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়। সাংস্কৃতিক আয়োজনের অংশ হিসেবে প্রতিবছরের মতো এবারও নাটক প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার তিনটি নাট্যদল নাটক মঞ্চস্থ করবে। এর মধ্যে তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী দ্বারা সৃষ্ট “তৈনগাঙ থিয়েটার” এবার অনুদানপ্রাপ্ত হয়েছে। নাটকটি তঞ্চঙ্গ্যা লোককাহিনী ছায়া অবলম্বনে রচিত হয়েছে। নাটকের রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন নাট্যকার নির্দেশক আশিক সুমন। ৪ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিঃ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে “তৈনগাঙ থিয়েটার” এর নতুন প্রযোজনা “রত্নমালা” মঞ্চস্থ হবে
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে।
নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন-রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিশ্বজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা, সুবিতা তঞ্চঙ্গ্যা, কাজলী তঞ্চঙ্গ্যা, বিশাল তঞ্চঙ্গ্যা, প্রদীপ্ত তঞ্চঙ্গ্যা, চিত্র তঞ্চঙ্গ্যা এবং সুবর্না তঞ্চঙ্গ্যা। মঞ্চ, আলো, আবহ সংগীত পরিকল্পনা করেছেন আশিক সুমন। কস্টিউম প্রপস করেছেন রত্নমালা টিম। মঞ্চ ও হল ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন প্রিভেল চাকমা, বিশাল তঞ্চঙ্গ্যা, প্রদীপ্ত তঞ্চঙ্গ্যা, চিত্র তঞ্চঙ্গ্যা,পরান্তু চাকমা, পূর্ণালী তঞ্চঙ্গ্য ও মধুরা তিতির (ভুতু)। ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন জানন তঞ্চঙ্গ্যা ও সার্বিক তত্বাবধানে আছেন এডভোকেট সুদ্বীপ তঞ্চঙ্গ্যা। রত্নমালার প্রযোজনা অধিকর্তা হিসেবে রয়েছেন রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও মিডিয়া কনসালট্যান্ট হিসেবে রয়েছেন মনি পাহাড়ী।
তৈনগাঙ থিয়েটারের সভাপতি রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন- “নাটকের জন্য অনুদান পাওয়াটা আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের। তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর নাট্যচর্চার ইতিহাসে প্রাতিষ্ঠানিক অনুদান পাবার ঘটনা এটাই প্রথম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর সম্মানিত চেয়ারম্যান বাবু অংসুইপ্রু চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি। সেই সাথে সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর পরিচালক বাবু রুনেল চাকমার প্রতি। নেপথ্য সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ফু কালাং সাংস্কৃতিক একাডেমি ও তঞ্চঙ্গ কল্যান সংস্থাকে। পাহাড়ের সবচেয়ে বড় উৎসবে নাটকে প্রাতিষ্ঠানিক অনুদানপ্রাপ্তি আমাদের নাট্যচর্চাকে বেগবান করতে বিরাট প্রেরণা হয়ে থাকবে।”
নাটকটি তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় অনুবাদ করেছেন বিশ্বজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা। ভাষা ও ডিজাইনে তঞ্চঙ্গ্যা জাতিসত্তার
সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্দেশক আশিক সুমন বলেন-“থিয়েটারের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। আবার তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। এ দু’য়ের কথা চিন্তা করে গল্পের প্রয়োজনে যতোটুকু দরকার ততোটুক সংযোজন বিয়োজন করা হয়েছে। প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সাত্ত্বিক অভিনয়কে। আশা করছি রত্নমালা নাটকটি সকলের ভালো লাগবে।”
তৈনগাঙ থিয়েটারের মিডিয়া কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন মনি পাহাড়ী। তিনি বলেন- “অল্প সময়ের মধ্য তৈনগাঙ এর যে সাড়া সেটা অভাবনীয়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি বড় ভূমিকা রেখেছে প্রচারে। নাট্যদলটি সৃষ্টির কিছুদিনের মধ্যেই কল শো পেয়েছে। সেইসাথে বিজু সাংগ্রাই বিষু বৈসুক বিহু মেলায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক অনুদানপ্রাপ্ত হয়েছে। এটাকে একটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বলা যায়। আগামীতেও তৈনগাঙ এর সকল সৃষ্টিতে দর্শকের পাশাপাশি গণমাধ্যম বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি। ”
তৈনগাঙ থিয়েটারের নতুন প্রযোজনা “রত্নমালা” দেশ থেকে দেশান্তরে তার মানবিক বার্তা নিয়ে পৌঁছে যাবে স্বকীয়তা নিয়ে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।