শুক্রবার, এপ্রিল ২৫Dedicate To Right News
Shadow

হাসপাতাল চত্ত্বরে ধূমপানের হার ৮৮ শতাংশ: টিসিআরসির গবেষণা ফলাফল প্রকাশ

Spread the love

পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ৫৭% পাবলিক প্লেসে এবং ৪৪% পাবলিক পরিবহণে ধূমপান করতে দেখা গেছে। বিভাগীয় শহরগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের অবস্থা সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা যায়, ৪২% পাবলিক প্লেসে এবং ৩৭% পাবলিক পরিবহনে ধূমপানমুক্ত সাইন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শতভাগ ধূমপানমুক্ত থাকার কথা থাকলেও ৮৮% হাসপাতাল এবং ৫৮% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতর ধূমপান করতে দেখা গেছে। ১০০% লঞ্চ-ফেরীতে ধূমপান করতে দেখা গেছে। পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান শুধু ধূমপায়ীকেই নয়, আশেপাশের সকলকে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি করছে। সম্প্রতি টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) কর্তৃক ‘৮টি বিভাগীয় শহরে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের অবস্থা’ শীর্ষক একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। অদ্য ১২ জুন ২০২৪ (বুধবার) সকাল ১১টায় টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ডেভলপমেন্ট এ্যাকটিভিটিস অফ সোসাইটি (ডাস্) ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সম্মিলিত উদ্যোগে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে “পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের অবস্থা” শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা মোজাফ্ফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পরামর্শক হোসেন আলী খোন্দকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ট্যুরিস্ট পুলিশ ঢাকা রিজিওনের পুলিশ সুপার মোঃ নাইমুল হক পিপিএম, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্পোরেশন (বিআইডাব্লিউটিসি)-এর মহাব্যবস্থাপক(প্রশাসন) জেসমিন আরা বেগম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)’র ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ সরকার ফারহানা কবীর, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সিনিয়র রোডসেফটি স্পেশালিস্ট মোঃ মামুনুর রহমান, আর্ন্তজাতিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-বাংলাদেশের সিনিয়র কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। এছাড়াও আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধি মো: সেলিম, ডাস্-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু ও মানস-এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা আবু রায়হান প্রমুখ। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রতিনিধি ও ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অফ প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডাস্ এর টীমলীড আমিনুল ইসলাম বকুল এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিসিআরসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফারহানা জামান লিজা।

গবেষণার জরিপ থেকে জানা যায় দুটি বিদেশী সিগারেট কোম্পানি সবচেয়ে বেশি আইনভঙ্গ করে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহসহ মোট ০৮ টি বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮৮% বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে আইন লঙ্ঘনের চিত্র পাওয়া গেছে। ১৭% পাবলিক প্লেসে অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দ্বারা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির চিত্র পাওয়া গেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে, টাস্কফোর্স গুলোকে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে দেশের তামাক ব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। দেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোঃ নাইমুল হক বলেন, দেশ থেকে তামাক নির্মূল করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে দায়িত্বসহকারে কাজ করতে হবে। সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ, তামাক পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবাণী বৃদ্ধি ও স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং চালুর কথা বলেন।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, সচেতনতা কাজ করবে না যদি শাস্তি নিশ্চিত না করা হয়। আইনের কঠোর প্রয়োগ না হলে তামাকের ব্যবহার কমবে না।

সভাপতির বক্তব্যে মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালে ধূমপানের চিত্র অত্যন্ত হতাশাজনক। সুতরাং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে এসকল প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ২টি সিগারেট কোম্পানি প্রতিনিয়ত আইনলঙ্ঘণসহ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিতে হস্তক্ষেপ করে চলেছে। তাদের এই অবাধ প্রচারনার মূল উদ্দেশ্য কিশোর ও তরুণদেরকে ধূমপানে আকৃষ্ট করা। যা ২০৪০ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যকে ব্যহত করছে।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে সকল পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে, এছাড়াও আইন লঙ্ঘন করে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ছাড়াই তামাকজাত দ্রব্যে বিক্রয় করলে মামলা করাসহ তামাকজাত দ্রব্যে বিক্রয়ে লাইসেন্স বাধ্যতামুলক করতে হবে। পাশাপাশি জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা/ স্যানিটারি কর্মকর্তার মাধ্যমে আইনভঙ্গ সংক্রান্ত মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা এবং মনিটরিং রির্পোট সভায় উপস্থাপন করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা এবং এর প্রতিবেদন টাস্কফোর্স কমিটি ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলে প্রেরণ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার মনিটরিং এ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিষয়টিও মনিটরিং করা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *