বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮Dedicate To Right News
Shadow

স্টার সিনেপ্লেক্সে হলিউডের সাড়া জাগানো তিন ছবি

Spread the love

দর্শকদের পদচারণায় আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে স্টার সিনেপ্লেক্স প্রাঙ্গন। করোনাকালীন বিধি নিষেধের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ২০ আগস্ট থেকে আবার নিয়মিত সিনেমা প্রদর্শন শুরু হয়েছে জনপ্রিয় এই মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলে। সদ্য চালু হওয়া মিরপুর শাখাসহ স্টার সিনেপ্লেক্সের সবগুলো শাখায় বর্তমানে চলছে হলিউডের আলোচিত ছবি ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৯’, ‘দ্য সুইসাইড স্কোয়াড’ এবং ‘জাঙ্গল ক্রুজ’। তিনটি ছবিই দর্শকমহলে সাড়া জাগিয়েছে।

স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সিনেমা প্রদর্শন চলছে। দর্শকদের উপস্থিতিতে আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। হল খোলার পর থেকে দর্শকরা নিয়মিত আসতে শুরু করেছেন। ছবিগুলোর জন্য অনেকেই মুখিয়ে ছিলেন। আমাদের সবগুলো শাখাতেই টিকেটের চাহিদা বাড়ছে। সামনে আরও অনেক ছবি মুক্তির অপেক্ষায় আছে।’

‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৯’: ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজ মানেই দুরন্ত গতি আর রোমাঞ্চ। চোখ ধাঁধানো গতির খেলা আর দারুণ অ্যাকশনের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এ সিরিজের সবগুলো ছবিই বক্স অফিস মাত করেছে। দেখতে দেখতে আটটি সিক্যুয়াল পার করেছে ছবিটি। ২০১৭ সালে মুক্তি পায় ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-এর অষ্টম সিক্যুয়াল ‘দ্য ফেইট অব দ্য ফিউরিয়াস’। অষ্টম সিক্যুয়ালের পর অনেকটা থমকে ছিলো ‘ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস’র ফ্রেঞ্চাইজি ইউনিভার্সাল প্রোডাকশন। ভক্তরা ভেবেছিলেন এখানেই বোধহয় থামছে ফিউরিয়াসের ইতিহাস। তবে ভক্তদের সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে চলতি বছরেই ইউনিভার্সাল প্রোডাকশন নিয়ে এলো সিনেমাটির নবম পর্ব।

শূন্যে উড়ছে গাড়ি, কিংবা ধসে পড়তে থাকা সেতুর পর দিয়ে ছুটতে থাকা রেসিং কার, পেছনে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার, একদিকে পরিবারের প্রতি মমতা, অন্যদিকে ভয়ংকর শত্রুর মোকাবিলা-এসব নিয়েই ভিন ডিজেল ও জন সিনার শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাকশন সিনেমা ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস নাইন’। হলিউডের অ্যাকশনধর্মী সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা সিরিজ বলা হয় ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-কে। অ্যাকশনধর্মী এ হলিউড ছবির নবম কিস্তি গত বছরই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর জন্য বেশ কয়েক দফায় পিছিয়েছে ছবির মুক্তি। অবশেষে গত ২৫ জুন পর্দায় আসে বহুল প্রতীক্ষিত এ ছবি। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ছবির মূল চরিত্রের নাম টরেটো। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন ভিন ডিজেল। এছাড়াও আছেন মিশেল রদ্রিগেজ, চার্লিজ থেরন, টাইরিস গিবসন, জন সিনা, নাথালি ইমানুয়েলসহ অনেকে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন জাস্টিন লিন। আর গল্প লিখেছেন ড্যান ক্যাসেই।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় করোনা মহামারিকালীন বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস নাইন’। মুক্তির প্রথম সপ্তাহে ৭ কোটি মার্কিন ডলার (৫৯৪ কোটি ১১ লাখ টাকা) ঘরে এনেছে ছবিটি। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব শুরুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি এটাই। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বব্যাপী এর আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়ে গেছে ৬৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্ব সিনেমার বড় বাজার চীন। ২১ মে চীনে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। ভ্যারাইটির তথ্যে জানা গেছে, ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস নাইন’ শুধু চীনেই আয় করে নিয়েছে ২০৩ মিলিয়ন ডলার।

‘দ্য সুইসাইড স্কোয়াড’ : ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া সুপারহিট ছবি ‘সুইসাইড স্কোয়াড’-এর সিকুয়েল ‘দ্য সুইসাইড স্কোয়াড’। এবারের ছবিতে চিত্রনাট্য, অভিনয়শিল্পী ও নির্মাণে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডেভিড আয়ারের বদলে পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন ‘গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি’ খ্যাত জেমস গান। চিত্রনাট্য করেছেন তিনি নিজেই। বিশেষ শক্তিধর ভয়ংকর সব খুনিদের নিয়ে গড়া টাস্ক ফোর্স এক্স-এর আত্মঘাতী ও বিপজ্জনক মিশনে এবারও ফিরে আসছে পূর্বের সিকুয়েলে অভিনয় করা চারটি চরিত্র। হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ও আবেদনময়ী অভিনেত্রী ম্যারগট রবি (হার্লি কুইন), অস্কারজয়ী অভিনেত্রী ভায়োলা ডেভিস (অ্যামেন্ডা ওয়ালার), জোয়েল কিনম্যান (রিক ফ্ল্যাগ) এবং জে কোর্টনি অভিনয় করেছেন ক্যাপ্টেন বুমেরাং চরিত্রে। তবে এবার সব থেকে বড় চমক হচ্ছে বহুসংখ্যক নতুন চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়া। জনপ্রিয় রেসলার ও অভিনেতা জন সিনা আছেন পেসমেকার ভূমিকায়, ইদ্রিস আলবা ফুটিয়ে তুলবেন ব্লাডস্পোর্ট চরিত্রটি।

এছাড়াও টাস্ক ফোর্স এক্স-এ আরো যুক্ত হয়েছেন আরো নামীদামী তারকারা। আধা মানব আধা হাঙ্গর কিং শার্ক চরিত্রটিতে এবার কন্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় হলিউড অভিনেতা সিলভেস্টার স্ট্যালোন। ছবিতে তৃতীয়বারের মতো ডক্টর হারলিন কুইনজেল চরিত্রে দেখা যাবে রবিকে। একই চরিত্রে তিনি ছিলেন গেল বছর মুক্তি পাওয়া ‘বার্ডস অব প্রে’তেও। তবে সেটা ‘সুইসাইড স্কোয়াড’-এর সিক্যুয়াল নয়, স্পিন-অফ ছিল। ছবিতে রবি ছাড়াও আছেন ইদ্রিস এলবা, সিলভেস্টার স্ট্যালোন, ভায়োলা ডেভিস ও রেসলার থেকে অভিনেতা বনে যাওয়া জন সিনা। এ ছবির আগেই হার্লি কুইন চরিত্রটি নিয়ে উচ্ছ্বাস জানিয়েছিলেন রবি, বলেছিলেন যত দিন সম্ভব চরিত্রটি করতে চান। অবশ্য নানা অনিশ্চয়তা পাড়ি দিতে হয়েছে ‘দ্য সুইসাইড স্কোয়াড’কে। শুরুতে গোল বাধে পরিচালক নিয়ে। প্রথম পরিচালক হিসেবে শোনা যায় গাই রিচির নাম, পরে মেল গিবসনের নাম। শেষ পর্যন্ত পরিচালক অবশ্য চূড়ান্ত হন জেমস গান। এরপর ঝামেলা হয় উইল স্মিথকে নিয়ে। শিডিউল জটিলতায় তিনি সরে দাঁড়ান। ছবিতে যুক্ত হন এলবা। তখন মনে করা হয়েছিল স্মিথ অভিনীত ডেডশট চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি। পরে জানা যায় এলবার জন্য ব্লাডস্পোর্ট নামের আরেকটি চরিত্র লেখা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে স্মিথের ফিরতে আর বাধা রইল না।

ছবির কাহিনীতে দেখা যাবে, আমান্ডা ওয়ালারের আদেশে, বেল রেভ পেনিটেনশিয়ারি থেকে বন্দীদের কার্টো মাল্টিজ দ্বীপে পাঠানো হয়, জোটুনহাইমকে ধ্বংস করার জন্য, একটি নাৎসি যুগের কারাগার এবং পরীক্ষাগার যেখানে রাজনৈতিক বন্দি থাকে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। মিশনটি শুরু হয় টাস্কফোর্স এক্স -এর সদস্য হারলে কুইন, রিক ফ্ল্যাগ, ক্যাপ্টেন বুমেরাং, টিডিকে, মঙ্গাল, জ্যাভেলিন, সাভান্ত, ব্ল্যাকগার্ড এবং উইজেল কর্টো মাল্টিসের সমুদ্র সৈকতে ল্যাবে যাওয়ার জন্য। মিশনটি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে শেষ হয় সেটাই দেখার বিষয়।

‘জাঙ্গল ক্রুজ’ : মুক্তির পর থেকেই আলোচনায় রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার ঘরানার সিনেমা ‘জাঙ্গল ক্রুজ’। ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স ও ডেভিস এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে এটি প্রযোজনা করেছেন জন ডেভিস, জন ফক্স ও ডোয়াইন জনসন নিজেও। পরিচালনা করেছেন জাউমে কলেট-সেররা। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডোয়াইন জনসন ও এমিলি ব্লান্ট। যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন মাইকেল গ্রিন, গ্লেন ফিকারার ও জন রিকোয়ার।

অ্যাডভেঞ্চার, ফ্যান্টাসি আর অদ্ভুত সব ঘটনার মিশ্রণে ‘জঙ্গল ক্রুজ’র গল্প সাজানো। সিনেমাটির ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই এর প্রতি ভক্তদের ব্যাপক আকর্ষণ লক্ষ্য করা গেছে। মুক্তির পরের দু’দিনে সে প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো যাত্রা শুরু করেছে ডিজনির নতুন সিনেমা জাঙ্গল ক্রুজ। করোনা মহামারীর মধ্যে মুক্তি পেয়েও ভালো দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছে সিনেমাটি। নিজ দেশে সাড়ে চার কোটি ডলারের ব্যবসা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিশ্বজুড়ে জাঙ্গল ক্রুজের বক্স অফিস কালেকশন ৬ কোটি ডলারের বেশি। এ যাবৎ ছবিটির আয় দাঁড়িয়েছে ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ডিজনি ও প্রিমিয়ার অ্যাক্সেস থেকে ৩ মিলিয়ন ডলারের আয়সহ সিনেমার মোট বৈশ্বিক সূচনা ধরা হয়েছে ৯১ দশমিক ৮ তথা ৯ কোটি ডলারের বেশি।

প্রসঙ্গত কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এক বছর বিলম্বের পর জাঙ্গল ক্রুজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ জুলাই প্রেক্ষাগৃহে এবং ওটিটিতে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। অনেকেই জনসন ও ব্লান্টের রসায়নের প্রশংসা করছেন।

সিনেমাটিতে ‘জাঙ্গল ক্রুজ’র যাত্রাকালে নানা ঘটনা দেখা যাবে। এখানে প্রথমেই দেখা মিলে উইসক্র্যাকিংয়ের অধিনায়ক ফ্র্যাঙ্ক ওল্ফ এবং গবেষক ড. লিলি হিউটনের। লিলি সুদূর ইংল্যান্ড থেকে আমাজন এসেছেন এমন একটি উদ্ভিদের সন্ধান নিতে যা কিনা পুরো পৃথিবীর ঔষধ শাস্ত্রে একটি বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসবে। সিনেমাটির বাকি যাত্রায় অতিপ্রাকৃত সব শক্তির মুখোমুখি হয় ফ্রেঞ্চ এবং লিলি। তার সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাই দর্শককে এক অন্যরকম আনন্দে মুগ্ধ করে রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *