রবিবার, অক্টোবর ৬Dedicate To Right News
Shadow

জনবান্ধব শহর গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের দাবি

Spread the love

প্রায় প্রতিটি পরিষেবাই হাঁটা দূরত্বে পাওয়া গেলেও নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে এবং সাইকেলে যাতায়াতের পরিবেশ না থাকায় ঢাকা শহরে জনগণ ব্যক্তিগত গাড়ির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ব্যক্তিগত গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এবং ব্যবহার যানজট, দূর্ঘটনা, দূষণ ও জ্বালানী অপচয় বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে। দীর্ঘক্ষণ যানজটে বসে থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে সামাজিকীকরণের সুযোগ। একটি জনবান্ধব শহর গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উদ্যোগ প্রয়োজন।

 আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সকাল ১১.০০ টায় বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আয়োজক সংস্থাসমূহের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নয়, শহর হোক মানুষের’ শীর্ষক ভার্চুয়াল টকশো’তে বক্তারা এ কথা বলেন। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা প্রমা সাহার সঞ্চালনায় টকশো’তে বক্তব্য রাখেন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আলিয়া শাহেদ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর কমিউনিকেশন অফিসার মাহামুদুল হাসান এবং এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী।
আলিয়া শাহেদ বলেন, কার্লোস মনেরোর একটি কনসেপ্ট হলো  Fifteen Minutes City . অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সকল পরিষেবা ১৫ মিনিটের দূরত্বে থাকবে। হাঁটা এবং সাইকেলে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে এসকল ক্ষেত্রে গাড়ির কোন দরকার নেই। ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি পরিষেবাই হাঁটা দূরত্বে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে এবং সাইকেলে যাতায়াতের পরিবেশ না থাকায় মানুষ গাড়ির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ব্যক্তিগত গাড়ির দিকে ঝুঁকে পড়ার আরেকটি কারণ হলো গণপরিবহনের বেহাল দশা। আমাদের জল-জমি-জনমানুষকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা ও প্রকৃতি বিবেচনায় নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
ফারহানা জামান লিজা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। কার্যকরী ফলাফল পাওয়ার জন্য আমাদের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। আমরা যত্রতত্র ব্যক্তিগত গাড়ির পার্কিং দেখি, যা পথচারী চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির পাশাপাশি সড়কে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে। উচ্চ হারে পার্কিং ফি নির্ধারণ করা হলে মানুষ যত্রতত্র পার্কিং করা থেকে বিরত থাকবে। সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে একটি গাড়িতে একাধিক কর্মকর্তার যাতায়াতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার অনেকটাই কমে আসবে। সেই সাথে সপ্তাহে একদিন ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বন্ধ রাখা যেতে পারে। সর্বোপরি, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সকলের জন্য ব্যবহার উপযোগী গণপরিবহন নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই।
মাহামুদুল হাসান বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ হলো অনেকেই এটা বুঝতে পারেন না যে সড়ক একটি গণপরিসর এবং এখানে মানুষের অধিকার সবার আগে। গাড়ি ছাড়াও যে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব ছিলো, তা মানুষ ভূলতে বসেছে। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৩,২৩৪ জন মানুষের বাস এবং এর বিপরীতে গণপরিসরের সংখ্যা খুবই কম। স্বল্প সময়ে মাঠ-পার্ক তৈরি অসম্ভব। সড়কগুলো যদি গণপরিসর হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিকাশ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হবে। এ বিবেচনায় আমরা এলাকাভিত্তিক গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে খেলাধূলার আয়োজন করে থাকি। এর মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।
গাউস পিয়ারী বলেন, যানজট, দূর্ঘটনা, দূষণ, জ্বালানী অপচয়, সামাজিকীকরণের সুযোগের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা বিবেচনায় আমরা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছি। ঢাকা শহরে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজসহ যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিই হয়েছে যান্ত্রিক বাহনকে প্রাধান্য দিয়ে। যার ফলে জনবান্ধব শহর তৈরি হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সংস্কারের উপর জোরারোপ করেছেন। একটি জনবান্ধব শহর গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও ঢাকা শহরের বসবাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা তারা টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করবেন- সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *