অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় একটি ত্রিমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন, যেখানে সরকারি খাত, বেসরকারি খাত এবং জনগণের প্রচেষ্টা সমন্বিতভাবে কার্যকর, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক আর্থিক সেবা নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশের ৩য় আর্থিক সংস্কার কৌশল ২০২৫–২০৩০ প্রণয়ন পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. আহমেদ বলেন, “আমাদের দেশে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলও প্রতিষ্ঠান নিজেই,”। তিনি বলেন, “আমাদের উন্নত কর্মসূচি ও পরিকল্পনা রয়েছে, তবে তা বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।”
আসন্ন সংস্কার কৌশলটি সহজ, বাস্তবায়নযোগ্য এবং বাংলাদেশের বিশেষ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত করে প্রণয়ন করার প্রতি তিনি যোর দিয়েছেন। ।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় অর্থ বিভাগ আয়োজিত এই কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল সম্প্রতি আয়োজিত ৩১টি পরামর্শমূলক কর্মশালার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কারিগরি নোট চূড়ান্ত করা। এতে অর্থ বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা অংশগ্রহণ করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) এবং স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল প্রোগ্রাম টু এনাবল সারভিস ডেলিভারি -এর জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক বিলকিস জাহান রিমি এবং বিশ্বব্যাংকের লিড গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট (ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট) সুরাইয়া জান্নাত।
ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার সরকারি আর্থিক সংস্কারে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, “ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে এখন সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন মাসের প্রথম দিনেই তাদের একাউন্টে পৌঁছে যায়, যা আগে ৮–৯ দিন সময় নিত। একইভাবে, পেনশন ব্যবস্থাপনা অটোমেশন করায় পেনশনারেদ ভোগান্তি দূর হয়েছে। এসব সংস্কার বেসরকারি খাতেও প্রসারিত হয়েছে, যেমন সরকার-থেকে-ব্যক্তি (জিটুপি) পেমেন্ট সিস্টেম, যা দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্ব ভূমিকা রাখছে।”
টেকনিক্যাল নোটের উপস্থাপনায় বলা হয়েছে- সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের আর্থিক শৃঙ্খলা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কৃষি, শিল্পায়ন ও সেবা খাতে কৌশলগত সম্পদ বরাদ্দের জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে যা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
৩য় আর্থিক সংস্কার কৌশল ২০২৫–২০৩০ প্রণয়নের কাজটি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য প্রক্রিয়াগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রক্রিয়া সংস্কার, আধুনিকায়নের জন্য কাঠামোগত সংস্কার এবং শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এই তিনটি পর্যায়ে সংস্কারগুলো ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক সেরা অনুশীলনগুলোকে বাংলাদেশের বিশেষ প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩য় আর্থিক সংস্কার কৌশল হবে ব্যয়সাশ্রয়ী, স্পষ্ট এবং আরও কার্যকর ও বাস্তবায়নযোগ্য । এই কৌশলের গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নাগরিকদের জন্য ন্যায়সঙ্গতভাবে সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি সম্মিলিত দায়িত্বকে উপস্থাপন করছে।