কৃষকরাই মূল আকর্ষণ। কৃষি ব্যবস্থা ও হাওরের ধান নিয়ে সরকারের পাশাপাশি কৃষক, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। একা কেউ কিছু করতে পারবে না।’সম্প্রতি হবিগঞ্জের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ কথা বলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেডের (মেট্রোরেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রউফ। জাইকার অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউটের কারিগরি সহায়তায় এসেড হবিগঞ্জ এবং শেয়ার দ্য প্লানেট এসোসিয়েশন জাপানের বাস্তবায়নে হাওর এলাকায় দুর্যোগ সহিষ্ণু জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম ফসল চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পটির মিড-টার্ম প্রোগ্রেস শেয়ারিং সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের শেয়ার দ্য প্লানেট এসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন তেৎসুও সুৎসুই, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয় হবিগঞ্জের পিএসও এবং প্রধান ড. হীরেন্দ্র নাথ বর্ম্মন, দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের ফিচার সম্পাদক মো. ইসহাক ফারুকী। সভায় সভাপতিত্ব করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. দাবিরুল ইসলাম। এ ছাড়াও সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের সব দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় পর্যায়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কৃষক এবং এসেড হবিগঞ্জের সর্বস্তÍরের কর্মকর্তা কর্মচারী।
হবিগঞ্জ জেলার সদর এবং বানিয়াচং উপজেলায় ২০২২ সাল থেকে দুর্যোগ সহিষ্ণু জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সক্ষম ফসল চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই এসেড হবিগঞ্জের প্রধান নির্বাহী জাফর ইকবাল চৌধুরী প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয় হবিগঞ্জের পিএসও এবং প্রধান ড. হীরেন্দ্র নাথ বর্ম্মন হাওর এলাকায় ধান চাষের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ করনীয় বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। পরে শেয়ার দ্য প্লানেট এসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন তেৎসুও সুৎসুই প্রকল্পের মধ্যবর্তীকালীন অর্জন, সফলতা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সভায় বিভিন্ন অতিথি তাদের বক্তব্যে প্রকল্পটি জলবায়ু সহিঞ্চু কৃষি প্রযুক্তি, নারী ক্ষমতায়ন ও দূর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে উল্লেখ করেন। প্রকল্পের উপকারভোগী কৃষক এবং স্থানীয় অংশীজন প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে সভায় আলোচনা করেন এবং বেসরকারী সংস্থা এসেড হবিগঞ্জকে ধন্যবাদ প্রদান করেন। কৃষকরা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরে বলেন, ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধান সম্পর্কে অনেক কৃষক জানে না, পোকামাকড় দমনের জন্য ভালো ওষুধ পাওয়া যায় না, রাস্তা না থাকায় অনেক সময় ৪ ভাগের ১ ভাগ শ্রমিকদের মজুরী মূল্য দিতে হয়, ভালো সার পাওয়াও অনেক বড় সমস্যা। কৃষকরা যদি লাভবান না হয়, তাহলে আবাদ কমে যাবে বলে শংকা প্রকাশ করেন বক্তারা। পাশাপাশি কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে উদ্যোগ, গবেষণা ও সম্প্রসারণের বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়। মেট্রোরেলে কৃষি ও কৃষকের পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রমোশন্যাল ভিডিও নির্মাণ ও প্রচারণার জন্য প্রধান অতিথির কাছে দাবি জানানো হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রউফ প্রকল্পের কার্যক্রমের সফলতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এ ধরনের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং হাওর বেষ্টিত অন্যান্য এলাকায় এ ধরনের প্রকল্পের দ্রুত সম্প্রসারণের মাধ্যমে হাওড় এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর, বিভাগ ও উপবিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি মো. দাবিরুল ইসলাম বলেন, নতুন জাতের ধান চাষের জন্য কৃষকরা যে উপকৃত হচ্ছেন কৃষকদের আলোচনায় মাধ্যমে তা উঠে এসেছে। তিনি আরও বলেন, হাওড় এলাকা বরাবরই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।