বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ২৩Dedicate To Right News
Shadow

প্রামাণ্যচিত্রে শিক্ষাবিদ ও লেখক বাসন্তী গুহঠাকুরতা

Spread the love

১৯৪৭ সালের দেশভাগ পরবর্তী সময়ে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে নারী শিক্ষার প্রসার এবং নারী জাগরণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষাবিদ ও লেখক বাসন্তী গুহঠাকুরতা। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরেও রাষ্ট্র গঠনের নানা কাজে নিয়োজিত থেকেছেন আমৃত্যু। নতুন প্রামাণ্যচিত্র “বাসন্তী: এ্যা স্ট্রাগল্ ফর স্প্রিং”-য়ের মাধ্যমে তরুণ চলচ্চিত্রকার সন্দীপ কুমার মিস্ত্রী এই ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এ প্রসঙ্গে পরিচালক সন্দীপ মিস্ত্রী বলেন, “এ প্রামাণ্যচিত্রটি শুধুই একটি বায়োপিক নয়, এটি ইতিহাসের কিছু সময় এবং কিছু যাপিত জীবনের খন্ড চিত্র; এটি একটি সংগ্রামের গল্প, একটি স্বপ্নের গল্প। ব্রিটিশ ভারত এবং তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা, একাডেমিক এবং সাংস্কৃতিক উভয় দিক দিয়ে তাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন করা, সে কাজগুলি বাসন্তী গুহঠাকুরতা’রা করে গেছেন নীরবে। কিছুটা লিরিক্যাল ঢঙে তৈরি করা এই ছবির মাধ্যমে তাই দর্শকরা বাসন্তী গুহঠাকুরতার সুন্দর জীবন দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হবে এবং তাঁর স্বপ্ন যাত্রার সাথী হবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

এক ঘন্টা দশ মিনিট দৈর্ঘ্যর এই প্রামাণ্যচিত্রটির গবেষণা ও প্রযোজনা করেছেন অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা। ছবিটি প্রসঙ্গে অনুভূতি প্রকাশ করতে  গিয়ে মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, “সত্যি ভালো লাগছে খুব। একটা বড় কাজের সমাপ্তি হলো। ২০২৩ সালে আমার বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার উপরে ‘জ্যোতির্ময়: দ্যা প্রফেসর’ শিরোনামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলাম, তারই সিক্যুয়াল হিসেবে মায়ের উপরে এই ছবিটি আমরা নির্মাণ করলাম। ছবিটির মাধ্যমে আমি শুধু আমার মা বাসন্তী গুহঠাকুরতা নয়, তাঁর সমসাময়িক আরো অনেক সহযাত্রীকেই সম্মান জানাতে চেয়েছি, যারা নীরবেই দেশের জন্যে কাজ করে গেছেন। আমার মা আমাকে বলতেন যে তাঁর জীবনটা ছিল সংগ্রামের। তাই আমরা এ প্রজন্মের তরুণদের কাছে সেই সংগ্রামের চেতনা তুলে ধরতে চেয়েছি, যা দেখে তারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে আরো সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে।”

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এবং ভারতের কলকাতায় প্রামাণ্যচিত্রটির শুটিং হয়েছে। এতে সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন ড. শামসুল বারি, তাসমিমা হোসেন, অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, অধ্যাপক জারিনা রহমান খান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। পুরনো ঢাকার তৎকালীন জীবন ও সংস্কৃতি, গেন্ডারিয়া গার্লস স্কুলের কার্যক্রম, মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার সংগ্রাম, বিষয়গুলি মূর্ত হয়ে ওঠে বাসন্তী গুহঠাকুরতার জীবনের ঘটনাপ্রবাহে। পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিজীবনের লড়াই, দুঃসাহসিক সব অভিজ্ঞতা, সাহিত্য ও জীবন দর্শনকেও ধারণ করার চেষ্টা রয়েছে এ চলচ্চিত্রে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা বাসন্তী গুহঠাকুরতার স্বামী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার নির্মম মৃত্যু এবং পরবর্তীতে একমাত্র মেয়ে মেঘনাকে নিয়ে তাঁর জীবন সংগ্রামের গল্পও চিত্রিত হয়েছে এ ছবিতে। একজন সাধারণ নারী বাসন্তীর জীবন যেন কালের মেলবন্ধন হয়ে ধারণ করে আছে ইতিহাসের নানা পর্ব। ব্রিটিশ ভারত, দেশভাগ, পূর্ব পাকিস্তান, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, স্বাধীনতা যুদ্ধ, বাংলাদেশ, এ সবকিছু ছুঁয়ে আজীবন শিক্ষক হিসেবে মেয়েদের সম্পূর্ণরূপে গড়ে তোলার দায়িত্বে অবিচল থাকা নাম বাসন্তী গুহঠাকুরতা; নামের সার্থকতায় তাই এ যেন এক সংগ্রামের গল্প, বসন্তের জন্য সংগ্রাম। প্রামাণ্যচিত্রটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তি দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *