গত ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ লন্ডনস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে আগরতলা বাংলাদেশ হাই কমিশনে আক্রমণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘আমি বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশি সহকারী হাইকমিশনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানাতে এবং ভারতীয় মিডিয়ার বাংলাদেশ বিষয়ক অপতথ্য সম্প্রচারের প্রতিবাদে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে ৷
এসময় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ত্রিপুরার বাংলাদেশি সহকারী হাইকমিশনে হামলা বাংলাদেশ-বিরোধী আগ্রাসনের একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ৷ দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা, কাটা তারে ফেলানী খাতুনের নির্মম মৃত্যু, এবং তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চনা— এসব ঘটনাগুলো ভারতের বাংলাদেশ-বিরোধী নীতির ধারাবাহিক চিত্র প্রকাশ করে৷
প্রতিবাদকারীরা নিম্নলিখিত দাবিগুলো উপস্থাপন করেন:
১। ত্রিপুরার হামলার জন্য ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে
২। সীমান্তে সকল বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৩। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে৷
৪। কাটা তারের মৃত্যুফাঁদ অবিলম্বে সরাতে হবে।
৫৷ উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বর্বর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
৬। ত্রিপুরার হামলায় জড়িত উগ্র হিন্দুত্বাদী নেতাদের আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷
৭। ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে৷
প্রতিবাদের অন্যতম আয়োজক সংগঠন “আমি বাংলাদেশ”- এর প্রধান আহ্বায়ক ব্যারিস্টার শরীফ হায়দার মৃদুল বলেন, ভারতের সরকারের উচিত আগরতলা বাংলাদেশ হাই কমিশন অফিস হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং প্রশ্ন তোলেন কেন আগরতলা হামলার সময় পুলিশ এবং ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা সেদিন নীরব ভূমিকা পালন করেছে?
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিবেশীদের কাছে সম্মানের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাই যেখানে থাকবে আশা এবং শান্তির বার্তা, থাকবে না কোনো আগ্রাসন। বাংলাদেশ থেকে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হামজা মাহবুব টেলি কনফারেন্স এর মাধ্যমে বক্তৃতা রাখেন: এ সময় তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে ধন্যবাদ দেন জুলাই বিপ্লব থেকে এখন পর্যন্ত সবসময় তাদের পাশে থাকার জন্য। উল্লেখ্য ‘আমি বাংলাদেশ’ জুলাই এবং অগাস্ট মাসে বাংলদেশ এ বিপ্লবের সমর্থনে লন্ডনস্থ আলতাব আলী পার্ক এবং ট্রাফালগার স্কয়ারে হাজার মানুষের সমাগম করে বিপ্লবের পক্ষে জনমত তৈরী করেছে এবং এখনো একই চেতনায় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কে সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টায় আছে৷
‘আমি বাংলাদেশ’ মুখপাত্র মাসকসুদুল হক শাকুর বলেন, ফেলানির মতো হাজারো বাংলদেশী ইন্ডিয়ান বর্ডার এ গত পাঁচ দশক এ খুন হয়েছে ইন্ডিয়ান BSF দ্বারা, এর বিচার হতে হবে এবং এধরনের সকল হত্যা বন্ধ করতে হবে৷
লন্ডন কমিটির আহ্বায়ক নাইমুল ইসলাম(আতিফ) বলেন, ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট সকল এলিগেশান বন্ধ করে ৭৮ জন নাবিককে ফেরত দিতে বলেন৷
পাশাপাশি সদস্য জাহানারা আক্তার শিমলা, আবু তাইয়েব এবং সৌরভ শেখ বলেন, শেখ হাসিনা কে খুব তাড়াতাড়ি বাংলদেশে ফেরত পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর হামলাকারীদের বিচার যেন খুব দ্রুত সময়ের মাঝে হয় তা নিশ্চিত করতে৷ পাশাপাশি বাংলাদেশের নামে যে সকল মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে তা বন্ধ করতে৷ বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলিম সকলেই নিজেদের সার্বভৌমত্বের প্রতি সজাগ৷ তাই ভুল কোন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহবান জানান৷
এছাড়াও সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সেলিম মাহমুদ, মোঃ কামরুল হাসান ভুইঁয়া, মোঃ ফারুক, আরাফাত প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আয়োজকেরা একটি স্মারকলিপি দেয়ার জন্য চেষ্টা করলেও তা পরবর্তীতে ‘Indian High Commission, Indian House’ তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান৷