তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষায় ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) সংশ্লিষ্ট সকল পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়েছে টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি জানায়, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, রেল মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করেছে নানাবিধ ইতিবাচক পদক্ষেপ যা সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকায় ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইলেকট্রনিক সিগারেট কে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট অনুযায়ী, ই-সিগারেট ব্যবহারে হার্ট এট্যার্ক, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়। বিশ্বের অনেক দেশ ই-সিগারেটের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ইতোমধ্যেই ৪২টি দেশ ই-সিগারেটকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে এবং আরো ৫৬টি দেশ ই-সিগারেট ক্রয়-বিক্রয়ের উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। তরুণ প্রজন্মকে নেশায় আসক্ত করতে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসের (ভ্যাপিং, ই-সিগারেট) প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে তামাক কোম্পানি।
এমতাবস্থায় টিসিআরসি দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর ই-সিগারেটের ক্ষতিকর বিষয়গুলো তুলে ধরে তা বাংলাদেশে নিষিদ্ধের আহ্বান করে আসছিলো। এমনকি গত ৭ ডিসেম্বর ২০২২ টিসিআরসি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর ‘বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ব্যবহার বন্ধে – অর্থ আইন, ২০১৮ এর তফশিল-১ এর এইচ.এস কোড থেকে ই-সিগারেট ও এর রিফিল এর আমদানি নিষেদ্ধের’ অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি (সূত্রঃ 09410/BD/3004/TCRC/2022) প্রেরণ করেছিল এবং গত ২৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর ‘বাংলাদেশে ই-সিগারেটের আমদানি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ প্রসঙ্গে’ একটি চিঠি (সূত্রঃ 09459/BD/3004/TCRC/2023) প্রেরণ করেছিল। একই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) নতুন পণ্য আমদানির নামে ই-সিগারেটের প্রসারের আবেদন নামঞ্জুরের অনুরোধ প্রসঙ্গে’ একটি চিঠি (সূত্রঃ 09485/BD/3004/TCRC/2023) এবং তথ্য প্রেরণ; ২৫ নভেম্বর ২০২৩ টিসিআরসির উদ্যোগে ২৫টি সংগঠনের প্রেস কনফারেন্স আয়োজন ও সেই তথ্য প্রেরণ; ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিকট ই-সিগারেটকে ধূমপান ত্যাগের উপকরণ হিসেবে অনুমোদন না দেওয়ার অনুরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ক্রমাগত চিঠি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য প্রেরণ করে আসছে। এবং সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ প্রায় ৫০জন আইনজীবিদের নিয়ে ই-সিগারেট নিষিদ্ধে করণীয় শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করে। উক্ত কর্মশালায় আইনজীবিগণ ই-সিগারেটের আমদানি, রপ্তানি, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয়, বিতরণ, বিপনন, পরিবহণ, সংরক্ষণ, সরবরাহসহ সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে মতামত দেন এবং অবিলম্বে তা কার্যকর করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। আইনজীবিদের দাবি ও বিশ্বে ই-সিগারেটের নিষিদ্ধের তথ্য সমূহ টিসিআরসি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করেছে। টিসিআরসি ছাড়াও তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত অন্যান্য সংগঠনসমূহও ই-সিগারেট বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল। ফলশ্রুতিতে, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-সিগারেটের আমদানি নিষিদ্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানায় টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। টিসিআরসি ই-সিগারেটে নিষিদ্ধে সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কর্মরত সকল সংগঠন, সাংবাদিকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছে।
টিসিআরসি মনে করে, সরকারের এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি উদাহরণ স্থাপন করবে। তবে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য কেবল একটি মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টেই যথেষ্ট নয়। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ, কর বৃদ্ধি, এবং আইন বাস্তবায়ন প্রভৃতি বিষয়গুলোর সাথে কৃষি, অর্থ, স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পরিকল্পনা ও তার সুষ্ঠ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।