বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ৬Dedicate To Right News
Shadow

পথশিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় ট্রেইনিং অন ট্রেইনারস ম্যানুয়াল

Spread the love

পথশিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জীবনমান উন্নয়নে গবেষণালব্ধ ‘ট্রেইনিং অন ট্রেইনারস ম্যানুয়াল’ সহায়ক ও কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।
আজ ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে গবেষণাটির ‘প্রেজেন্টেশন অব রিসার্চ আউটকামসঃ মেন্টাল হেলথ অব আন্ডারপ্রিভিলেজড চিলড্রেন ইন ঢাকা সিটি’ নামক সমাপনি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন তারা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, একমাত্রা সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক শুভাশিষ রায়, পরিচালক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস, উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম হোসেইন, দাতা সংস্থা টয়োটা ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি নাওমি ওকিয়ামা এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভেরি ৫০-এর সিইও রিওসুকে সুগায়া।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসিক দুরাবস্থার চিত্র তুলে ধরে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে সকলকে আরো সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান।
পরে গবেষণার ফলাফলের উপর একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সিলিং সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক মাহজাবিন হক এবং বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী শিশু উন্নয়ন ও শিশু অধিকার বাস্তবায়ন সংগঠন লোকাল এডুকেশন এন্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন লিডো’র প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন। আলোচনা সভায় গবেষণার জন্য প্রস্তুতকৃত দুটি তথ্যচিত্র (ট্রমা কী? এবং পিটিএসডি) প্রদর্শিত হয়। তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর শেষে আমাদের সুবিধাভোগী এবং তাদের মায়েরা পথে বসবাস নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেন এবং একমাত্রার সাহায্য পেয়ে নিজেদের জীবন পরিবর্তন করা শিশুরাও তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
২০২৪ সালের ইউনিসেফের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে পথে বসবাসরত শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৫ লক্ষ, যাদের ৭০ ভাগই ঢাকার পথে ছড়িয়ে বসবাস করছে। ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিনিয়তই এই শিশুদের দেখা মেলে, কিন্তু তদের সংগ্রামমুখর জীবন অনেকের কাছেই থেকে যায় অজানা। অসহায় এই শিশুদের জীবনে নিত্য সঙ্গী হল অবহেলা, নির্যাতন এবং এসব থেকে প্রাপ্ত বর্তমান বা অতীত জীবনের ট্রমা, যা তাদের বেঁচে থাকাকে আরো দুর্বিষহ করে তোলে। দৈনন্দিন এই সংগ্রামের ফলে তাদের মনে তৈরি হওয়া গভীর ক্ষত পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)-এর সৃষ্টি করে। এসব ট্রমা থেকে বাঁচতে সাময়িক মুক্তির জন্য তারা নিজেদেরকে ঠেলে দেয় বিপথে।

এসব শিশুদের সাহায্যে মৌলিক বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি এখনো অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও পুর্বাসনকেন্দ্রে তাদের শারীরিক সুরক্ষা দিলেও সেসব স্থানে কর্মরত পরিচর্যাকারীরা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতার অভাবে ভোগেন। পথে বসবাসরত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে যথাযথ গবেষণার অভাব, শিশুদের চাহিদাকে বোঝা এবং সে অনুযায়ী সঠিক সমর্থন প্রদানের ক্ষেত্রকে আরও কঠিন করে তুলেছে। তারই প্রেক্ষিতে একমাত্রা সোসাইটি এবং ভেরি৫০-এর যৌথ উদ্যোগে, টয়োটা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পথে বসবাসরত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিবেচনায় রেখে ‘ঢাকা শহরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা’ নামক গবেষণা পরিচালনা করে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া এই গবেষণাটি ৮০ জন পথে বসবাসরত শিশু এবং ২০ জন অভিভাবকের অভিজ্ঞতার/কেস স্টাডির ভিত্তিতে পরিচালনা করা হয়েছে। কেস স্টাডিগুলো ঢাকায় ছড়িয়ে থাকা পথশিশুদের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে/ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে, শিশু বিশেষজ্ঞ, সাইকোলজিস্ট ও গবেষণা সহকারীদের সমন্বয়ে সম্পন্ন করা হয়।

পরবর্তী ধাপে, কেস স্টাডি শেষে মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এসব শিশুদের অবস্থা আরো গভীরভাবে অনুধাবন করতে আমাদের গবেষণা দল বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীদের সাথে এবং পথশিশুদের সেবাদান কাজে সরাসরি নিযুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের সাথে কি ইনফরমেন্ট ইন্টারভিউ এবং ফোকাসড গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি) সম্পন্ন করে। মানসিকভাবে দুর্বিসহ এই শিশুদের ওপর করা এই গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে একমাত্রা সোসাইটি ‘ট্রেইনিং অন ট্রেইনারস ম্যানুয়াল’ নামক একটি সহায়িকা তৈরি করেছে। সহায়িকাটি পথশিশুদের জন্য দেশে বিদ্যমান আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থিত পরিচর্যাকারীদের দিকনির্দেশন হিসেবে কাজ করবে। সহায়িকা থেকে পরিচর্যাকারীদের প্রাপ্ত দক্ষতা, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থিত পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)-এ আক্রান্ত শিশুদের প্রাথমিক পরিচর্যা প্রদানে সহায়তা করবে। পথশিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে দৃশ্যায়ন করার জন্য দুটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ট্রমা ও পিটিএসডির প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত উপস্থাপন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *