
টিকেটর মূল্য বৃদ্ধি, মালয়েশিয়া সহ অন্যান্য দেশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানি ও সৌদিআরবে একক ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র বন্ধের দাবি জানিয়েছে সকল জনশক্তি রপ্তানিকারকদের পক্ষে গঠিত সংগঠন সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট। তারা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সিন্ডিকেট আবারও জনশক্তি রফতানি ক্ষেত্রটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজেদের দখলে নেয়ার পায়তারা করছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এবং বিএমইটির কতিপয় কমকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মকান্ডে কোন পরিবর্তন হয়নি বলেও অভিযোগ তাদের। এ বিষয় অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে তারা সুষ্ঠু সমাধান দাবি করেছেন। আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে সাবেক এমপি ও বায়রার সভাপতি এম.এ.এইচ. সেলিম বলেন, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিষ্ঠাকারি ও গনতন্ত্র হত্যাকারি শেখা হাসিনা সরকারের ১৬টি বছর ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। কথা বলার অধিকার ছিলোনা, সভা সমাবেশ করার অনুমতি ছিলো না, ছিলো না কোন বাকস্বাধীনতা। জনশক্তি রপ্তানির পুরো বাজারটা স্বৈরাচারের দোষরেরা জিম্মি করে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা এই সেক্টর থেকে লুটপাট করেছে। তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে দিয়ে একদিকে দেশের দারিদ্রতা ও বেকারত্ব দুর হচ্ছে অন্যদিকে আমরা অনুন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছি, আর্থসামাজিক অবস্থার ও উন্নতি হয়েছে। দেশের এক তৃতীয়াংশ জনগণ সরাসরি জনশক্তি রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সিংহভাগ আসে অভিবাসী কর্মীদের প্রেরিত রোজগার থেকে। কিন্তু বিগত স্বৈরাচারী ও বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কিছু ভূলনীতি ও কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী, লোভী, অপরাধী ও ষড়যন্ত্রকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। ২০১৭/১৮ ও ২০২২/২৪ সালে সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড দাতু শ্রী মোহাম্মদ আমিন, রহুল আমিন স্বপন, মোহাম্মদ নুর আলী মিলে প্রথমে ১০টি পরে ১০০ টি রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ে একটি সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠা করে। এই সিন্ডিকেট সদস্যদের বাহিরে অন্য কোন রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়াতে কর্মী রপ্তানি করতে পারতো না। দুই পিরিয়ডে সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড ও তাদের সদস্যরা এই সেক্টর থেকে অতিরিক্ত আদায় করেছে প্রায় ১১২৬৮ হাজার কোটি টাকা। স্বৈরাচারী সরকার এদের কোন বিচার করেনি, কারণ তাদের আশ্রয়ে , প্রশ্রয়ে ও প্রত্যক্ষ সমর্থনে সিন্ডিকেট হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ও তাদের কোন বিচার করেনি। এই বিচারহীনতার কারণে সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড আমিন, স্বপনেরা পুনরায় মালয়েশিয়াতে সিন্ডিকেট করে অভিবাসী কর্মী রপ্তানি করার চেষ্টা করছে।
এম.এ.এইচ. সেলিম বলেন, মুষ্টিমেয় জনশক্তি রপ্তানিকারক অতি দ্রুত ধনী হবার জন্য সকল নিয়ম নীতি, নৈতিকতা, মানবিকতা ও আইনকানুনকে তোয়াক্কা না করে , ঘুষ বাণিজ্য ও স্বৈরাচারী সরকারের রাজনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থে সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ান শ্রমবাজার দখল করে নেন। ফলশ্রুতিতে অভিবাসন ব্যয় পূর্বে তুলনায় কয়ে গুন বেড়ে যায়, অধিকাংশ জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসা বঞ্চিত হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়, দেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, হাজার হাজার কর্মী আটকা পড়ে যায় এবং আঁতুরঘরে বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। এই নিয়ে অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম, লেখালেখি, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম হয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে, দেশপ্রেমিক অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু মন্ত্রনালয় ও বিএমইটির কমকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মকান্ডে কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং মনে হচ্ছে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের প্রতআত্মা এখনো মন্ত্রনালয় ও বিএমইটির প্রতটি টেবিলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি ঐ চিহ্নিত চক্রটি পুনরায় সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়াতে জনশক্তি রপ্তানি করার পাঁয়তারা করছে এবং তাদেরকে নাকি আমাদের মন্ত্রনালয়ের কেউ কেউ সহযোগিতা ও করছেন। বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে
তারা অর্থ দিয়ে, রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে, বিভিন্ন রকম কুটকৌশল অবলম্বন করে অন্তবর্তীকালীন সরকার থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে কর্মী রপ্তানির অনুমতি নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিগত পতিত স্বৈরাচারী শাসক শত শত কোটি টাকার বিনিময়ে রুহুল আমিন স্বপন ও দাতু শ্রী মোহাম্মদ আমিনকে সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করার সুযোগ দিয়েছে।এবার যদি অন্তবর্তীকালীন সরকার সিন্ডিকেটে মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে কর্মী রপ্তানির সুযোগ দেন , তাহলে তাদের সাথে স্বৈরাচারী সরকারের পার্থক্য কোথায় ?
২০১৭/১৮ ও ২০২২/২৪ সালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী রপ্তানি যে তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের রেয়েছ তা দেশবাসী ও সরকার ভালভাবেই জানেন। আশাকরি সরকার সিন্ডিকেট ফাদে পা দিবেন না এবং বাজারটি সকলের বৈধ রপ্তানিকারকদের জন্য উন্মুক্ত রাখবেন সাথে যে বা যাহারা সিন্ডিকেট করে জনশক্তি রপ্তানির চেষ্টা করবেন তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক প্রদান করবেন। যদি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়া বা অন্য কোন দেশে অভিবাসী কর্মী পাঠানোর চেষ্টা করা হয় তবে তাহলে আমরা পৃথিবীর সব দেশে কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিবো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ অভিবাসী কর্মী , ব্যবসায়ী, ভ্রমণকারী, ছাত্র ও অসুস্থ রুগীরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়। অভিবাসী কর্মী, ভ্রমণকারী , ব্যবসায়ী ছাত্র ও চিকিৎসার জন্য যে সমস্ত রোগীরা বিদেশে যায় তারা একশ্রেণীর অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি ও এয়ারলাইন্সের কাছে আজ জিম্মি হয়ে আছে। নামে বেনামে অগ্রীম বুকিং দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে তারা টিকেটের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে যে দুরত্বের ভাড়া ২০/২৫ হাজার টাকা ঢাকা থেকে সেই দুরত্বের ভাড়া ৭০/৮০ টাকা। বাংলাদেশ থেকে ৮০% যাত্রী বিদেশি এয়ারলাইন্স গুলো বহন করে থাকে। কিছু সংখ্যা অসাধু ও দুর্নীতিপরায়ণ ট্রাভেল এজেন্সী ও বিমানের কিছু কমকর্তা ও কর্মচারী এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। তাদের কারণে বিদেশগামী যাত্রীরা লুন্ঠিত হচ্ছে এবং দেশ থেকে বিদশি এয়ারলাইন্স গুলো প্রতিবছর শত শত মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা অবিলম্বে এই সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙে দিয়ে প্রতিটি রুটে যৌক্তিক ভাড়া ও অভিবাসী কমীদের জন্য লেবার ফেয়ার চালূ করার দাবি জানাচ্ছি।
সাংবাদিক সম্মেলনে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের মূখপাত্র মোস্তফা মাহমুদসহ বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।