শনিবার, এপ্রিল ২৬Dedicate To Right News
Shadow

ধোঁয়াবিহীন তামাকের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিংয়ে রাজস্ব বাড়বে ছয়শত গুণ!

Spread the love

ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য তথা জর্দা-গুল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কৌশলে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। দেশে ধোঁয়াযুক্ত তামাকের তুলনায় ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহারীর সংখ্যা ৩০ লক্ষ বেশি হলেও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ধোঁয়াযুক্ত তামাক অপেক্ষা ছয়শত গুণ কম রাজস্ব আয় হচ্ছে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে। তাই ধোঁয়াবিহীন তামাকের রাজস্ব ফাঁকি রোধে এর স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরী। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং নিশ্চিতের দায়িত্ব কার? পণ্যের মোড়কজাতকরণ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিএসটিআই ধোঁয়াবিহীন তামাকের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিংয়ের দায়িত্ব নিতে রাজি নন। ধোঁয়াবিহীন ও ধোঁয়াযুক্ত তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক নিয়ন্ত্রণে কোন সংস্থা দায়িত্ব না নেওয়ায় কোম্পানীগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকিসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লংঘনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে আসছে। তামাকজাত দ্রব্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রবর্তন ও যথাযথ মনিটরিং করা হলে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানীর যথাযথভাবে নিশ্চিতে জনস্বাস্থ্য রক্ষা হবে।

উপরোক্ত বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রবিবার বিকাল ৩টায়, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) আয়োজিত “রাজস্ব বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং এর প্রয়োজনীয়তা”শীর্ষক এক ওয়েবিনারের বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

টিসিআরসির সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান এর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সাবেক সমন্বয়কারী (অব: অতিরিক্ত সচিব) জনাব হোসেন আলী খোন্দকার। বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রামস সৈয়দা অনন্যা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি গবেষণা ব্যুরোর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম প্রমুখ। টিসিআরসির প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ জুলহাস আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিসিআরসির প্রকল্প সমন্বয়কারী ফারহানা জামান লিজা। এছাড়াও তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ফারহানা জামান লিজা বলেন, বিশ্বের অনেক দেশই তামাকজাত পণ্যে প্লেইন প্যাকেজিং গ্রহণ করেছে, সেখানে বাংলাদেশে প্লেইন প্যাকেজিং অনেক দূরের কথা, স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। এতে করে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে লাভ হচ্ছে তামাক কোম্পানির। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস, বাংলাদেশ) ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য (জর্দ্দা ও গুল) সেবন করে যা ধোঁয়াযুক্ত তামাক সেবনকারীর তুলনায় অনেক বেশি। স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং বাস্তবায়ন হলে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। এছাড়াও, স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং বাস্তবায়ন হলে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানীর সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীদের সেবন থেকে ফিরিয়ে আনতে অন্যতম একটি টুলস হবে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং। দেশের সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রতিপক্ষ হলো তামাক কোম্পানী। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের বাজার খুবই অনিয়ন্ত্রিত। ধোঁয়াবিহীন তামাকের মোড়কজাতকরণে নির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় কোম্পানীগুলো রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান না করায় ভোক্তারা স্বাস্থ্যক্ষতি সম্পর্কে অবহিত হচ্ছেনা। স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। একই সাথে স্বাস্থ্য ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে তামাকের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে।

অধ্যাপক ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, তামাকসেবীদের সংখ্যা কমাতে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং ভূমিকা রাখতে পারবে। মুনাফাখেকো কোম্পানীগুলোর রাজস্ব ফাঁকি ধরতেও ট্যাক্স ট্রেকিং ও ট্রেসিংয়ের কার্যকরী পদ্ধতি স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে চালু করা দরকার।

সাগুফতা সুলতানা বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কজাতকরণে নির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় কোম্পানীগুলো ইচ্ছেমত আকর্ষণীয় মোড়কে বাজারজাত করছে। কোম্পানীগুলো মোড়কে সঠিকভাবে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান না করায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লংঘন করছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ধোয়াবিহীন তামাক কোম্পানীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রণয়ন ও যথাযথ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা দরকার।

মোঃ বজলুর রহমান বলেন, স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং হলো দ্রব্যের মোড়ক সংক্রান্ত নির্দিষ্ট মান। তামাকজাত দ্রব্যের এটা বাস্তবায়ন হলে সরকাররের রাজস্ব বাড়বে। স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিংয়ের ফলে তামাম নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী স্বচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এতে অনিয়ন্ত্রিত ধোঁয়াবিহীন তামাকের বাজার নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

হামিদুল ইসলাম বলেন, সরকার ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য থেকে ৫১ কোটি টাকা কর পায় যা ধোঁয়াযুক্ত তামাকের তুলনায় ৬০০ গুণ কম। তামাক এক ভংয়কর ক্ষতিকর পণ্য যা সেবনে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। জনগনের কল্যাণে তামাকজাত দ্রব্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রবর্তন করা দরকার।

সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাক কোম্পানীর প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি দায়িত্ব কর্মকর্তাদের সদ্বিচ্ছার অভাব লক্ষ্যণীয়। দেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের আগ্রাসী বিপনন চলছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সকল পণ্যের ন্যায় তামাকজাত দ্রব্যেরও স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রণয়ণে বিএসটিআইকে দায়িত্ব নেওয়া জরুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *