
দেশের শীর্ষস্থানীয় নিত্য-ব্যবহার্য ও ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল)চট্টগ্রামে তাদের প্লাস্টিকওয়েস্টম্যানেজমেন্টপ্রজেক্ট-এরঅংশ হিসেবে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য জীবন বীমা সুবিধা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে।
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, পুনর্ব্যবহার ও সহযোগিতার মাধ্যমে প্লাস্টিক-জনিত দূষণের অবসান করার উদ্দেশ্যে ইউনিলিভার তাদের বৈশ্বিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভ্যালু চেইনে পরিবর্তন আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ২০২০ সাল থেকে, কোম্পানিটি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি উদ্ভাবনী এবং সম্প্রসারণযোগ্যসার্কুলার মডেল প্রতিষ্ঠা করেছে, যার মাধ্যমে তারা তাদের পণ্য প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের চেয়ে বেশি প্লাস্টিক সফলভাবে সংগ্রহ করছে।
সমাজে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্ত্বেও, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রায়ই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেন এবং তাদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (PPE) সুবিধা থাকে খুবইসীমিত। এই কর্মীরা পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রায় ৬০% সংগ্রহ ও বাছাই করলেও, তারা প্রায়ই গুরুতর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হন, যার মধ্যে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া ও প্রাণহানির মতো ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত।
এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সরকার, বিশেষজ্ঞ এবং এনজিওগুলোর সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে ইউনিলিভার একটি সামাজিকভাবে ন্যায্য সার্কুলার অর্থনীতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। মেটলাইফ বাংলাদেশ এবং ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা)-এর সাথে একসাথে ইউনিলিভারের এই উদ্ভাবনী উদ্যোগ চট্টগ্রামের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জীবন-জীবিকার মান উন্নত করার লক্ষ্যে জীবন বীমা সুবিধা প্রদান করছে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনচট্টগ্রামসিটিকরপোরেশনের (সিসিসি) প্রধাননির্বাহীকর্মকর্তা (সিইও) শেখমুহম্মদতৌহিদুলইসলাম, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনাপরিচালক জাভেদ আখতার; মেটলাইফ বাংলাদেশের সিইও আলা আহমদ; ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন-এর সিইও মো. আরিফুর রহমান; ইউনিলিভার-এরকর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস এন্ড কমিউনিকেশনসডিরেক্টরশামিমা আক্তার; এবং মেটলাইফ বাংলাদেশের পরিচালক ও কর্মচারী সুবিধা বিভাগের প্রধান মো. কামরুজ্জামানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এই বীমার আওতায়, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিতে নিযুক্ত ১,৮২৭ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী জীবন ও স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা পাবেন, যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।বীমা সুবিধার আওতাভুক্ত প্রত্যেক কর্মী দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত জীবন বীমা সুবিধা পাবেন, এবং বিশেষ চিকিৎসা পরিস্থিতিতেশতভাগ সুবিধাও পাওয়া যাবে।এছাড়াও দুর্ঘটনাজনিতমৃত্যুর ক্ষেত্রে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমা সুবিধা প্রদান করা হবে। এই স্কিমের মধ্যে চিকিৎসক পরামর্শ ফিও হাসপাতাল ফি-এর মতো জরুরি স্বাস্থ্যসেবা খরচের জন্য মেডিক্যাল রিইম্বার্সমেন্টসুবিধাও প্রদান করা হবে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার বলেন, “ইউনিলিভার বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে প্লাস্টিক সাস্টেইনেবিলিটি উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে প্লাস্টিক সংগ্রহকারী ব্যক্তিরা আমাদের সমাধান কার্যক্রমে অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে— তাদের ছাড়া প্লাস্টিক সংগ্রহকে বড় আকারে সম্প্রসারণ করা অসম্ভব। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার উন্নত করার মাধ্যমে আমরা আজ সামাজিকভাবে ন্যায়সঙ্গত সার্কুলার অর্থনীতির জন্য একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছি। আমি বিশ্বাস করি এই উদ্যোগ অন্যদের এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করবে, এবং একসাথে আমরা সুন্দর সমতাভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব।”
মেটলাইফ বাংলাদেশ-এর সিইও আলা আহমদ বলেন,“ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন-এর সাথে এই উদ্যোগে অংশীদার হতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই যৌথ প্রচেষ্টা শুধুমাত্র বর্জ্য কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্যই নয়, বরং একটি শক্তিশালী ও টেকসই কমিউনিটি গঠনে বীমার গুরুত্বকেও আরও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে। প্রায় ১০ লাখ ব্যক্তিগত গ্রাহক এবং ৯০০টিরও বেশি কর্পোরেট ক্লায়েন্টকে সেবা প্রদানে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আমাদেরকে এমন একটি বীমা সমাধান ডিজাইন করতে সাহায্য করেছে। এর মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শুধু আর্থিক সুরক্ষাই দিবেনা না, এর পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী ভবিষ্যত গড়ার নিশ্চিয়তা প্রদান করবে।”
ইপসা-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুর রহমান বলেন, “ইপসা ২০২২ সাল থেকে চট্টগ্রামে এই প্লাসটিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের কাজ করছে এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সবসময়ই আমাদের এই প্রচেষ্টার মূলে রয়েছে। ইউনিলিভার বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা শুধু প্লাসটিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থার উন্নতি করছি না, বরং পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য আরও নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করছি। এই উদ্যোগের আওতায় চালু হওয়া বীমার সুবিধা আর্থিক স্থিতিশীলতা, নিরাপদ কাজের পরিবেশ ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এই সহযোগিতা বর্জ্য কর্মীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদেরকে সম্ভাবনাময় ও সমৃদ্ধ এক ভবিষ্যৎ দেবে।”
২০২২ সালে ইউনিলিভার বাংলাদেশ একাধিক সংস্থার সাথে সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রামে একটি প্লাসটিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প চালু করে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল মোট বিক্রীত প্লাসটিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ প্লাসটিক সংগ্রহ করা। ২০২২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ২১৭৫০ টন প্লাসটিক বর্জ্য সংগ্রহের পাশাপাশি ৩০০০ জনেরও বেশি পরিছন্নতা কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে এই উদ্ভাবনী প্রকল্পের লক্ষ্য হলো চট্টগ্রামের ১০% প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও ৫,০০০-এর বেশি পরিছন্নতা কর্মীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।