শনিবার, মার্চ ২২Dedicate To Right News
Shadow

বিএসএমএমইউকে গ্লকোমা চিকিৎসায় রোল মডেল হতে হবে: উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম

Spread the love

শোভাযাত্রা, সেমিনার, লিফলেট বিতরণসহ জনসচেতনামূলক নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বিএসএমএমইউতে চোখের নীরব ঘাতক বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহ ২০২৫ (৯-১৫ মার্চ) শুরু হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে আজ ১১ মার্চ ২০২৫ বিএসএমএমইউর সি ব্লকের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম।

এবারে বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহের স্লোগান হল “এক সাথে হাত ধরি, গ্লকোমা মুক্ত বিশ্ব গড়ি”। শোভাযাত্রাপূর্বক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম বলেন, গ্লকোমা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শুরুতেই এই রোগ চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সচেতনতার মাধ্যমে রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিএসএমএমইউতে গ্লকোমা রোগের চিকিৎসার জন্য গ্লকোমা ক্লিনিক রয়েছে। এখানে চোখের রোগসমূহের সর্বাধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে চক্ষু বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসাসেবা ও গবেষণার ব্যবস্থা। এখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতনামা ফ্যাকাল্টিবৃন্দ রয়েছেন। তাই বিএসএমএমইউকে এখন চোখের নীরব ঘাতক গ্লকোমা চিকিৎসায় রোল মডেল হতে হবে। চোখের চিকিৎসায় এভিডেন্স বেইসড মেডিসিনকে গুরুত্ব দিতে হবে, গাইডলাইন ফলো করে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে।

বিএসএমএমইউর চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এসকল আয়োজনে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ শওকত কবীর, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ শফিকুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ জাফর খালেদ, বাংলাদেশ গ্লকোমা সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী, ডা. শাহ নূর হাসান, ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান, ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান ডা. মোঃ গোলাম ফারুক, সহকারী অধ্যাপক ডা. নিরুপম চৌধুরী, ডা. মেহজাবিন হক, ডা. রাজশ্রী দাশ, ডা. জাহিদা জব্বার, ডা. সোনিয়া আহসান, ডা. তাজমেহ মেহতাজ, ডা. মাজহারুল ইসলাম প্রমুখসহ চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্টবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় জানানো হয়, গ্লকোমা চোখের এমন একটি রোগ, যাতে চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে, চোখের পেছনের স্নায়ু অকার্যকর হয়ে ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি চলে যায়। গ্লকোমা হল বাংলাদেশ তথা পৃথিবীতে অনিবারণযোগ্য অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। বিএসএমএমইউতে রয়েছে ভিজুয়্যাল ফিল্ড অ্যানালাইসিস, কালার ফান্ডাস ফটে, ও.সি.টি, গ্লকোমা লেজার, ট্রাবেকুলেকটমি অপারেশন, কম্বাইন্ড অপারেশন (ছানি এবং গ্লকোমা), বাচ্চাদের গ্লকোমা অপারেশন, গ্লকোমা টিউব ইমপ্ল্যান্ট, কোলাজেন ইমপ্ল্যান্ট ইত্যাদি। এই রোগ যে কোন বয়সে এ রোগ পারে। জন্মের সময় বেশ বড় চোখ এবং চোখের চাপ নিয়ে জন্মালে, একে কনজেনিটাল গ্লকোমা বলে। তরুণ বয়সেও হতে পারে, একে বলে জুভেনাইল গ্লকোমা। বেশীর ভাগ গ্লকোমা রোগ ৪০ বছরের পরে হয়। এদের প্রাথমিক গ্লকোমা বলে। এছাড়াও পারিবারিকভাবে যাদের এ রোগ আছে, যারা মাইনাস পাওয়ার চশমা পড়েন, যাদে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের মধ্যে এ রোগ হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। বেশী বয়সজনিত চোখের গঠনে পরিবর্তন, জন্মগত গঠনের ক্রটি, আঘাত, চোখ লাল হওয়া, ডায়াবেটিসজনিত চোখের রক্তহীনতা, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরই বা হরমোন থেরাপি, ছানি পেকে যাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্লকোমা হতে পারে।

বক্তারা জানান, প্রাইমারী গ্লকোমা সাধারণত ২ চোখে হয় এবং যে কোন বয়সে হতে পারে। এর কারণ হল চোখের গঠনগত পরিবর্তন। আর একটি হল সেকেন্ডারী গ্লকোমা এটা সাধারণত এক চোখে হয়। আঘাতজনিত কারণে এবং ঘন ঘন চোখ লাল বা প্রদাহ জনিত কারণে এই রোগ হতে পারে। এই রোগের উপসর্গের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের উপসর্গ নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসতে পারে। হঠাৎ করে এক চোখে প্রচন্ড ব্যাথা হয়ে দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া, তার সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা ও বমি বমি ভাব হতে পারে। আবার সব সময় হালকা চোখে এবং মাথা ব্যাথা (বিশেষ করে কম আলোতে) এবং আস্তে আস্তে দৃষ্টি শক্তি কমে যেতে পারে। অন্যদিকে ব্যথাবিহীন উভয় চোখের দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া এবং চশমার পাওয়ার পরিবর্তন নিয়েও রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসে। মাঝে মাঝে দৃষ্টি সীমানার যে কোন এক পাশে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, ছানি পেকে চোখে লাল হওয়া ইত্যাদিও এ রোগের উপসর্গ হতে পারে। জন্মগত বড় চোখ, চোখ হতে পানি পড়া এবং আলোতে চোখ বন্ধ করে ফেলা জন্মগত গ্লকোমা লক্ষণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, রোগীর ইতিহাস এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে গ্লকোমা রোগ নির্ণয় সম্ভব। এর মধ্যে দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা (ভিসুয়াল একুইটি), চোখের চাপ পরীক্ষা (ইন্ট্রাঅকুলার প্রেসার), গনিয়াস কপী বা চোখের কোণা পরীক্ষা এবং অফথালমোসকপী বা চোখের স্নায়ু পরীক্ষা বেশী গুরুত্ব বহন করে। স্বাভাবিক চোখের চাপ সাধারণ (১০-২১) মি.মি. মার্কারী। অস্বাভাবিক চোখের চাপ থাকলে সমস্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গ্লকোমা সনাক্ত করে তাড়িৎ চিকিৎসা বাঞ্জনীয়।

এই রোগ প্রতিরোধে করণীয় হলো- পারিবারিকভাবে যাদের গ্লকোমা রোগের ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চোখ পরীক্ষা করতে হবে, অল্প আলোতে কারো চোখে এবং মাথা ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন, চোখে ছানি পড়লে তা পেকে যাওয়ার আগে অপারেশন করিয়ে নেয়া ভাল, চোখে প্রদাহ হলে সেটা হতে গ্লকোমা হওয়ার আগে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন, চোখে আঘাতের পর দেরী না করে চিকিৎসা করাবেন, স্টেরইড বা হরমোন থেরাপী যারা নেন তারা নিয়মিতভাবে অন্তত ৩-৪ মাস অন্তর অন্তর চোখ পরীক্ষা করাবেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ কোন হাসপাতালে অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চোখের ছানি অপারেশন সহবিভিন্ন অপারেশন করালে অপারেশন পরবর্তী গ্লকোমা রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করা যায়, পরিশেষে জীবন যাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন যেমন পরিমিত খাদ্যভ্যাস, লবণ জাতীয় খাবার বর্জন এর মাধ্যমে তথা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্লকোমা রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *