বুধবার, এপ্রিল ২৩Dedicate To Right News
Shadow

‘বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সভা’ অনুষ্ঠিত

Spread the love

আজ ১৬ এপ্রিল ঢাকার একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক’ সভায় ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরসহ সারাদেশে সড়ক নিরাপত্তায় তথ্যনির্ভর উদ্যোগের মাধ্যমে রোড ক্র্যাশ কমানোর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। সড়কে অকালমৃত্যু কমাতে রোড ক্র্যাশ ও মৃত্যুর তথ্য ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন, কার্যকর বাস্তবায়ন, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ, সিটবেল্ট ব্যবহার, মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার, নিরাপদ সড়ক পরিকল্পনা ও নির্মাণ এবং গণমাধ্যমে মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইন খুবই জরুরি। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) যৌথভাবে এ সভা আয়োজন করে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এ সভা আয়োজনে সহযোগিতা করে।
দিনব্যাপী এ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহসানুল হক। এতে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস এর সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক কেলি লারসন, ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাইদ মোঃ কামরুজ্জামান, ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার, সিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তৌহিদুল ইসলাম, গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি) প্রতিনিধি তাইফুর রহমান প্রমুখ। বিআইজিআরএস-এর ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর-ঢাকা মো. আবদুল ওয়াদুদ সভায় সঞ্চালনা করেন।
প্রধান অতিথি এহসানুল হক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরাপদ সড়ক পদ্ধতির আলোকে একটি সার্বিক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে সরকারের অঙ্গীকার পুণরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, সরকার সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সমন্বয়ে খসড়া আইন প্রণয়নের কাজ করছে। সড়ক নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, আগামী দিনে সরকারের সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের সড়কসমূহ নিরাপদ হয়ে উঠবে।
বিশেষ অতিথি কেলি লারসন বলেন, বিআইজিআরএস-এর মাধ্যমে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস সড়ক নিরাপত্তার মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচাতে পৃথিবীর ২৭টি শহরে কাজ করছে। ২০২০ সালে ঢাকা উত্তর ও চট্টগ্রাম সিটি এ উদ্যোগে যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে শহরের সড়ক নিরাপদ করতে কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকার বৈশ্বিক উদাহরণ কাজে লাগিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণে সড়ক, মহাসড়ক ও যানবাহনের ধরণ অনুযায়ী গতিসীমা নির্ধারণ করে একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। এর কার্যকর বাস্তবায়ন গতি কমাবে, জীবন বাঁচাবে।
ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, বিআইজিআরএস এর আওতায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট (ডব্লিউআরআই) এর কারিগরি সহায়তায় ডিএনসিসি বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলসংগ্ন এলাকাকে নিরাপদ এলাকা ও মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকাকে নিরাপদ করে পুণনির্মাণ করেছে। এছাড়া, ১৬০ জন নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলী এবং ৫০জন সাংবাদিককে সড়ক নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।
ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সারওয়ার বলেন, সড়ক নিরাপত্তা করার লক্ষ্যে ডিএমপি’র বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ডিএনসিসি’র সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে রোড ক্র্যাশের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক চিহ্নিত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা জিআরিএসপি’র সহায়তায় পুলিশ অফিসারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তৌহিদুল ইসলাম সড়ক নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে দক্ষতাবৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়ায় ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সড়ক নিরাপত্তায় আমরা মাত্র কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, আগামী দিনে চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবহারকারীরা এর সুফল পাবেন।
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিতকরণ ও পুনর্নির্মাণ, গতিরোধক স্থাপন, ফুটপাথ দখলমুক্তকরণের মতো গৃহীত উদ্যোগগুলো তুলে ধরে। উভয় শহরেই জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, যার আওতায় প্রায় একশ সাংবাদিক সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া বিআইজিআরএস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ডিএমপি ও সিএমপির কর্মকর্তাদের নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে গতিসীমা বাস্তবায়ন ও সড়ক আইন প্রয়োগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে জিআরএসপি। উল্লেখ্য, সভায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিগত দিনের অর্জন তুলে ধরেন বিআইজিআরএস-ঢাকার ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর মো. আবদুল ওয়াদুদ ও চট্টগ্রামের ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর লাবিজ তাজওয়ান উৎসব।
বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি ও ডিএমপি যৌথভাবে ঢাকা উত্তর রোড সেফটি রিপোর্ট ২০২৩ প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ঢাকা উত্তর সিটির আওতাভুক্ত এলাকায় ১১৭টি রোড ক্র্যাশে ১২৩ জন প্রাণ হারান, যার ৬১ শতাংশই ছিলেন পথচারী ও ২৪ শতাংশ ছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী। তাই পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পথচারীবান্ধব সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, যানবাহনের গতিসীমা বাস্তবায়ন ও হেলমেট ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের অগ্রগতি পর্যলোচনা করেন এবং রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে পরবর্তী কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর থেকে ড. শরিফুল আলম, বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল রোড সেফটি ফ্যাসিলিটির দীপন বোস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. ওয়াতিন আলম, নিরাপদ সড়ক চাই-এর সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, সেন্টার ফর ইঞ্জুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, জিআরএসপির ব্রেট হারম্যান, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর আমিনুল ইসলাম সুজন, ডব্লিউআরআই-এর অবতার ভাল্লা ও ফারজানা ইসলাম, বিআইজিআরএস ঢাকার সার্ভেইল্যান্স কোঅর্ডিনেটর ডা. তানভীর ইবনে আলি, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের মামুনুর রহমান আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচকরা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা, গবেষণাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
সভার সমাপনী অংশে ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের ডেপুটি ডিরেক্টর গ্র্যান্ট এনিস, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিয়াউল হক, বিআরটিএ’র পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের লিভান্থা মিলার, সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসফিকুজ্জামান আকতার বক্তব্য দেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, বাংলাদেশ রোড সেফটি কোয়ালিশন, বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং বিআইজিআরএস ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রতিনিধিবৃন্দ।
জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে রোড ক্র্যাশে মৃত্যুর হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশে যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বৈঠকটি শেষ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *