
- ফয়সাল মাহমুদ
ছোটবেলায় আমরা যখন কোথাও বেড়াতে যেতে চাইতাম তখন রিসোর্ট নামে কোন বস্তু ছিল না (৯০ এর দশকের কথা বলছি)। আমরা যেতাম কক্সবাজার, বা সিলেট, কিংবা অন্য কোথাও। পরে অনেকেই কোন ট্যুরিস্ট লোকেশনে যাবার বদলে রিসোর্ট বেছে নিতে শুরু করলেন। কারণ বেশ ক’টা। রিসোর্টগুলো ঢাকা থেকে কাছে। যেমন, ঢাকা থেকে সিলেট যেতে লাগতে পারে ৫-৬ ঘন্টা, কিন্তু গাজীপুরের কোন কোন রিসোর্টে পৌঁছে যাওয়া যায় ২ ঘন্টায়। এজন্য যাতায়াত খরচ কম পড়ে। রুম, সুইমিং পুল, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, ছবি তোলার স্পট, ডাইনিং ইত্যাদি সুবিধাদি থাকে ভালো। আর প্রাইভেসিও থাকে।
রিসোর্টে আমরা অনেক কারণে এবং অনেক ভাবে যাই। কয়েকজন বন্ধুরা যাই, সহকর্মীরা যাই, কয়েক ফ্যামিলি মিলে যাই, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে যাই, আবার কাপলরা তো যাইই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১ রাতের জন্য যাওয়া হতো, আজকাল আবার বেশ কিছু ডে-ট্রিপের প্যাকেজ থাকে, যেগুলো আরো সাশ্রয়ী। যেভাবেই যাই না কেন, কিছু টাকা তো খরচ হয়ই। তাই আমরা চাই, টাকার সর্বোত্তম উপযোগ, আর সেজন্যই আজ আমি লিখতে বসে গেছি। জেনে নিন কিভাবে রিসোর্টে ব্যয় করা সময় আর অর্থের সর্বোচ্চ উপযোগ নিশ্চিত করা যায়।
বিষয় ১- রিসোর্ট ভ্রমণ থেকে কি কি চাইছি তা আগে থেকে ঠিক করাঃ
রিসোর্টে আমরা কি কি করতে পারি? ১। মজা করে খেতে পারি, ২। ফ্যামিলি/বন্ধুদের নিয়ে চিল/রিল্যাক্স করতে পারি, ৩। সুইমিং করতে পারি, ৪। অনেক রকম কম্বিনেশনে ফটোশ্যুট করতে পারি, ৫। মজার মজার টিকটক ভিডিও/রিলস বানাতে পারি, ৫। বাচ্চাদেরকে রাইডে চড়াতে পারি, ৬। সন্ধ্যায় প্রোজেক্টরে মুভি দেখতে পারি, ৭। বোট রাইডে যেতে পারি, ৮। অফিসের টীম গেলে প্রজেক্টর লাগিয়ে মিটিংও করতে পারি। এখন কথা হচ্ছে, একরাতের জন্য কিংবা ডে ট্রিপে গিয়ে আমরা কয়টা কাজ করব? দেখা গেল সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি, এক ফ্রেন্ড বললো, আরে গাধা নাকি? সুইমিং করবি না! ব্যস, পরের ২/৩ ঘন্টা চলে যাবে ওতেই। ভাবীরা ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতে চাইবে। আলাদা আলাদা ফ্যামিলি ফটো, বাচ্চা নিয়ে একদফা, শুধু বাচ্চারা একদফা, গোবেচারা (হাবি) দের নিয়ে একদফা, প্রতিটা মহিলার আলাদা আলাদা কিছু ছবি- সব মিলে অনেক সময় লাগবে কিন্তু। বাচ্চাদের খেলতে দিয়ে রুমে ঘুম দিবেন? তা হচ্ছে না, ওদের সাথে এটেনডেন্ট হিসেবেও তো থাকা লাগবে।
এত লম্বা ফিরিস্তি দিলাম এজন্য, যে, আমরা চাইলেও ৮ টা কাজ একসাথে করতে পারব না। রেস্ট নিতে গিয়ে দেখা গেল মজার নাশতা মিস করলাম, আবার সবকিছু করতে গিয়ে দেখা গেল, সারারাত না ঘুমিয়ে পরদিন সকাল সকাল উঠে পড়তে হচ্ছে (তারপর ঢাকায় ফিরে অফিসে দৌড়াও)। আমার পরামর্শ হলো, প্লিজ, আগে থেকে ঠিক করে যান, কি কি করবেন, আর কি কি করবেন না। সব নৌকায় পা দিলে কিন্তু সব্বনাশ। ঝেড়ে কেশে ঠিক করে ফেলুন, সন্ধ্যায় প্রজেক্টরে “তারে জামিন পার” দেখালেও আমরা দেখব না, কারণ আমরা বন্ধুরা মিলে এখানে আড্ডা মারতে এসেছি, মুভি দেখতে নয়। কিংবা, আড্ডা আরেক ট্রিপে মারব নে, আজ একটু জমিয়ে চা খেতে খেতে মুভি দেখা যাক।
বিষয় ২- ভ্রমণের শুরুটা করুন রিল্যাক্সিংঃ
আমার নিজের ৩ বাচ্চা, আলহামদুলিল্লাহ। আমি জানি, যত যাই করি না কেন, ৫ জনের ফ্যামিলির প্যাকিং করতে কয়েক ঘন্টা লাগে। এর মধ্যে আরেকটা ঘাপলা আছে। রিসোর্টে তো চেক ইন দুপুর ২ টায়। নাশতা কি বাসায় করে যাব? নাকি রাস্তায় কোন হোটেলে খাব? নাকি খাবার প্যাক করে নেব বাসা থেকে। দেখা গেল সিদ্ধান্ত হলো রওনা দিয়ে নাশতা করব, কিন্তু গুছিয়ে রওনা দিতেই লাগলো ১১ টা। ততক্ষণে বাচ্চারা না খেতে পেয়ে কি কষ্টটা পেলো দেখুন তো!
আবার ভাবীদের কথা ভাবুন। একগাদা ব্যাগ (বাচ্চার খাবার, সুইমিং-এর কাপড়) গুছিয়ে, নাশতা বানিয়ে প্যাক করে যখন ভাবী গাড়িতে উঠলেন, তখন তার শরীরে আর নড়ার শক্তি নাই। রোদের মধ্যে গাড়িতে কি আর ঝিমোনো যায়! এর মধ্যে বাচ্চারা পিচ্চি হলে তো সারা পথ ধরে “বাবা আরেক কামড় দাও, আরেক কামড় দাও”।
পৌঁছানোর পর চেক ইন, ছবি তোলা, লাঞ্চ- অনেক মিশন। তাই এনার্জি জমিয়ে রাখতে হবে। লাগেজ গোছানোর কাজটা ২-৩ দিন আগে করে রাখুন। নাশতা হিসেবে ফ্রোজেন পরোটা/জ্যাম স্যান্ডউইচ নিন। আরামদায়ক পোশাকে বের হোন। মেকাপ হালকা করুন, বাকিটা ছবি তোলার আগে করে নিবেন।
বিষয় ৩- চেক ইনের আগের টাইম কাজে লাগাবেন যেভাবেঃ
১২ টা/১টার মধ্যে পৌঁছে গেলে চেক ইন করার আগেই লাঞ্চ করে নিন। তাহলে সময়ের বরকত হবে। লাঞ্চ করে, চেক ইন করে, রুমে হালকা চিল মারুন। আরাম লাগবে।
বিষয় ৪- ছবি তোলাঃ
আজকাল বেড়াতে গিয়ে ছবি তুলতে হয়, আর সেগুলো ফেসবুকে পোস্ট করতে হয়। রিয়েলিটি মেনে নিন। একটা ফিক্সড স্লট রাখুন ছবি তোলার জন্য। বিভিন্ন কম্বিনেশনে তুলে নিন। যেন বাকি সময় আর ছবি তোলার চাপ না থাকে। বেশি ইচ্ছা করলে যার যার ইচ্ছা মত “কিসিক কিসিক” করে আরো কিছু তুলে নিলেন। কিন্তু “ছবি তোলা” মিশন সেরে নিন একবারেই।
আরেকটা বিষয়, আল্লাহর দুনিয়ায় সবাই এক রকম না। অনেকের ছবি অনেক সুন্দর ওঠে, অনেকে দেখতে অনেক ফটোজেনিক। এটা নিয়ে একদম চাপ নেবেন না। আল্লাহ আপনাকে যেই সুরত দিয়েছেন, আর যেই পোজ দেয়ার বুদ্ধি দিয়েছেন, তাতে যা ওঠে তাই সই। আরেক ফ্যামিলির ছবি বেশি ভালো উঠেছে, এজন্য চাপ নেয়ার কিছু নেই। আপনি আপনার সেরাটা দিন। কোন ফ্যামিলি যদি সুন্দর ছবি তুলতে না জানে, সেটা নিয়ে আবার বাকিরা আড়ালে টিপ্পনী কেটেন না। সবাই শান্তির খোঁজে এসেছে, অশান্তি না।
বিষয় ৫- একসাথে এনজয় করাঃ
ভাবলেন সন্ধ্যায় অর্ডার দিয়ে একটু মোমো খাবেন, ছোট মামা বলে বসলো, না! বিকেলে নাশতা খেয়ে টাকা নষ্ট করা যাবে না, কারণ রাতে বুফে আছে। কোন সমস্যা নেই, মামার অনুমতি নিয়ে নিজের জন্য মোমো অর্ডার করে ফেলুন। মামা তার জায়গায় ঠিক আছেন, আপনি আপনার জায়গায় ঠিক থাকুন। গ্রুপে বেড়াতে এসেছেন দেখে প্রতিটা কাজ একই সাথে করতে হবে তা-ও তো না। একসাথে এনজয় করুন, আবার পারসোনাল স্পেসও দিন। ধরেন ৫ বন্ধু বেড়াতে গেছেন, ৩ জন পাহাড়ে উঠতে চায়, ২ জন টিভি দেখতে চায়। তা-ই সই। আপনারা ৩ জনই যান পাহাড়ে। আবার ফিরে এসে বারবার “উফ, কি যা মিস করলি, তুই একটা ক্ষ্যাত” এসব বলতে থেকেন না প্লিজ।
তো! সব তো জানলেন!! এবার মোবাইল হাতে নিন, ভালো ডীল খুজে বের করুন আর ঘুরে আসুন। বেস্ট অব লাক।