- মনি পাহাড়ী
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন করার প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সম্পৃক্ত করা এবং শিক্ষার্থীদের গাঠনিক মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করছি। শিক্ষক- শিক্ষার্থী উভয়ের উদ্দীপনা বাড়বে এবং শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মূল্যায়ন করা হবে। অহেতুক মানসিক চাপ কমবে উভয়ের। শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষা দ্বারা মূল্যায়ন কিংবা পরীক্ষার আগে আগে একদিনে পুরো বই গিলে পরদিন বমি করার মতো পদ্ধতির থেকে বেরিয়ে আসাটা জরুরি ছিলো। তারউপর তার শোনা, বলা, পড়া এই দক্ষতাগুলো সনাতন পদ্ধতির মূল্যায়নে উপেক্ষিত থাকতো। নতুন সিদ্ধান্তে অনেক বেশি প্রাণবন্ত হবে শিক্ষার্থী, হবে চাপমুক্ত। শিক্ষা হয়ে উঠবে দান নয় বিনিময়ের বিষয়।
সাপ্তাহিক ছুটি একদিন বাড়ানোতে অনেকেই ভাবছেন কী যেন কী হয়ে গেলো!! ছুটিময় জীবন শিক্ষকের!! তাও আবার এই প্রাথমিকের!! অনেকেই হয়তো জানেন না যে, কোনো জাতীয় দিবসে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকে না। এর বাইরে ক্যালেন্ডারে যতো ছুটি দেখা যায় তার অনেকগুলো এই শুক্র শনিবারের মধ্যে পড়ে। সারা সপ্তাহে জমে থাকা ঘরের কাজ করতে করতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে গড়ায়। তারপর আবার দৌড়। বিনোদন বা বিশ্রাম বলে শিক্ষকের কিছুই থাকে না।এতো হা হুতাশ না করে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো দরকার।
এই দু’টো বিষয়ের বাইরো ভোটার হালনাগাদ, শিশুজরিপসহ অন্য বিভাগের যে সকল দায়িত্ব প্রাথমিক এর শিক্ষকদের পালন করতে হয় সেগুলো থেকে মুক্ত করে দিলে শিক্ষার মান আরও বাড়বে। প্রাক প্রাথমিক এর ১ টি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ৩ টি বিষয়ে ৬ টি, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম শ্রেণির ৬ টি করে ১৮ টি বিষয়। এভাবে একটা বিদ্যালয়ে একদিনে ২৫ টি ক্লাস নিতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে ৬/৭/৮ এমনকি ১২/১৩ টা পর্যন্ত ক্লাস নিতে হয়। ৩/৪ জন কর্মরত শিক্ষক যে সকল বিদ্যালয়ে রয়েছে সেখানে একজন বা কোনোকারণে দুইজন ছুটিতে থাকলে তখন অমানসিক চাপ সহ্য করতে হয় শিক্ষককে। আবার সব বিষয় পড়াতে হয় একজনকে। যেটা কখনোই সঠিকভাবে সম্ভব নয়।কারণ এক বিষয়ে সবাই সমান দক্ষ হওয়া অসম্ভব। শিক্ষক যতো চাপমুক্ত থাকবে সে ততো বেশি দিতে পারবে শিক্ষার্থীকে। মায়ের পুষ্টি যেমন শিশুর সামগ্রিক গঠনে ভূমিকা রাখে তেমনি শিক্ষকের স্বাচ্ছন্দ্যও শিক্ষার্থীর গঠনে বিরাট প্রভাব ফেলে।
সেসব কারণে আরও কিছু পরিবর্তন দরকার। যেমন -বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা বদ্ধি, বিষয়ভিত্তিক পড়ানোর সুযোগ তৈরি করা, নতুন পে স্কেল ঘোষণা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে ভারসাম্য রক্ষা হবে প্রাথমিক এর শিক্ষকদের। সবার নিজের বাড়িতে থেকে স্কুল করার সুযোগ নেই, সবার স্বামী বা স্ত্রীর আয় নেই, ছোট বড় সংকটে ঋণ নেয়া ছাড়া অনেকেরই উপায় থাকে না। নিশ্চয়ই এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। যাঁরা উপরে উল্লেখিত দু’টো বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছেন তাঁদের দ্বারা এই সিদ্ধান্তগুলোও নেয়া সম্ভব। অহেতুক তর্ক করে আমরা আমাদেরকে দ্বিধান্বিত না করি।
যদি সকল গবেষণা সঠিক হয়ে থাকে যে শিশুর মানস গঠনের মূল সময়টা পরিবার ও প্রাথমিক বিদ্যালয় তাহলে এখানটাকে গুরুত্ব দেবার বিকল্প নেই। ধ্বংস করতে চাইলে এখানটাকে ধ্বংস করতে হবে আর প্রকৃত মানুষ করতে চাইলে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে এখানটাতে।
আবারও কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন এবং শিক্ষার্থীর গাঠনিক মূল্যায়ন করা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য।
মনি পাহাড়ী: শিক্ষক, উদ্যোক্তা ও সংস্কৃতিকর্মী