প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছেন। এলক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী দ্রুত পাস করা দরকার বলে মনে করেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। ২০ সেপ্টেম্বর সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী দ্রুত পাস করার দাবি’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরিন আখতার আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্ব উদ্যোগে তাদের প্রতিষ্ঠানকে তামাক মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে পারে। জাতীয় সংসদ ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো আইকনিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি পুরোপুরি ধূমপান মুক্ত করা যায় তবে এটি দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। তামাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেও তামাক উৎপাদন হ্রাস করার জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রগুলোতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে আমি মনে করি।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহযোগিতায় সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি অ্যাডভাইজার, সিটিএফকে-বাংলাদেশ, নুরুল ইসলাম হাসিব, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঁঞা, সাধারণ সম্পাদক, ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)। সম্মেলন পত্র উপস্থাপন করেন মো. শরিফুল ইসলাম, প্রকল্প সমন্বয়কারী (তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প), ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার শারমিন আক্তার রিনির সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন কে এস এম তারিক, যুগ্ম পরিচালক, স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।
এসময় সিটিএফকে-বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর সংশোধনী আনার যে উদ্যোগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত এবং জনবাবন্ধব উদ্যোগ। তবে এখনও এটি খসড়া হিসেবে রয়ে গেছে। জাতীয় স্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় জাতীয় সংসদের মাধ্যমে আইনটি যাতে দ্রুত পাস হয়ে আসে সেজন্য সাংবাদিকরা সংশোধনীর পক্ষে ইতিবাচক তথ্য ও প্রচারনা তুলে ধরবেন বলে আশা করছি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এর সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব বলেন, তামাকের ব্যবহার হ্রাস করার অন্যতম উপায় হলো কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা। এলক্ষ্যে আইনকে যুগোপযোগী করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগটি নিয়েছে সেটিকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি।
ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) এর সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঁঞা বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির হাত থেকে জনসাধারণকে রক্ষার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো তামাক কোম্পানীর ব্যবসার লাগাম টেনে ধরতে হলেও দ্রুত এই সংশোধীত আইনটি পাস করা হবে।
সম্মেলন পত্রে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত)’-এর অধিকতর সংশোধনের জন্য একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে। খসড়াটির উপর স্টেকহোল্ডারদের মতামতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিলো। সময়োচিত সংশোধনী প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যেই ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছে। ১৫ হাজারেরও বেশি সংগঠন ও নাগরিক, সংসদ সদস্য, ডাক্তারগণ সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন এই সংশোধীনর প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে এখনও এটি খসড়া হিসেবে রয়ে গেছে। এটিকে আইনে রূপান্তরের পথে নানারকম বাধা আসার আশঙ্কা করছেন অনেকে। সংশোধনীর বিপক্ষে তামাক কোম্পানীগুলোর নানামুখী অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং নানারকম বিভ্রান্তমূলক তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনবিভান্তি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকগণ খসড়া সংশোধনী যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে পাস হয়ে আসে সেজন্য সংশোধনীর পক্ষে ইতিবাচক তথ্য ও প্রচারনা স্ব স্ব মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরবেন বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি।