ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাঙালির জীবনে আরেকটি লড়াই প্রয়োজন। সে লড়াই সংস্কৃতির লড়াই। আমাদের জাতি সত্ত্বার উত্থানে সাংস্কৃতিক আন্দোলন মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। বৃটিশ উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন থেকে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই করেছি, আমরা বিজয়ী হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুদের এদেশীয় দোসরদের পচাত্তর পরবর্তি ভূমিক আমরা দেখেছি। উন্নয়ন বিরোধী এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলার জন্য সাংস্কৃতিক কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি জনাব মোস্তাফা জব্বার গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় আইডিইবি ভবনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত ফোরামের ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তিন দিন ব্যাপী বৃহ্ত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক উৎসবে ডিজিটাল প্লাটফর্মে ‘ জাতীয় ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সাহিত্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহের অবদান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক উৎসব কমিটির আহ্বায়ক ম. হামিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, এমপি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি, ঢাকার সভাপতি, সাবেক মূখ্য সচিব মো: আবুল কালাম আজাদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহীন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাংবাদিক নেতা মোল্লা জালাল, সাবেক সচিব হুমায়ুন খালিদ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী এবং নেত্রকোণা জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন তালুকদার বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্য সাংস্কৃতিক উৎসব করা প্রয়োজন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রতিটি জনপদে সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে। শেকড় থেকে উঠে আসা এসব সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ গুলো সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বৃহ্ত্তর ময়মনসিংহ সমিতির ভূমিকা তুলে ধরেন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোক সংস্কৃতিও রূপান্তরিত হয়েছে ঐতিহ্যে। ময়মনসিংহ গীতিকা বিশ্ব দরবারে অলংকৃত করেছে ময়মনসিংহের নিজস্ব পরিচয়। মহুয়া মলুয়া থেকে জয়নুল আবেদীনের চিত্র হয়ে উঠেছে বিশ্বময় ময়মনসিংহের গৌরব গাঁথা। ঈশাখাঁর যুদ্ধ বা সখিনা-সোনাভানের কাহিনী বাতাসে ছড়ায় বীরত্বের হৃদয় ছোঁয়া বিরলপ্রভা। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম বৃহত্তর ময়মনসিংহের সংস্কৃতির ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিকাশ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকাসহ শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে আসছে।
দীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত মৈমনসিংহ গীতিকা তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা প্রকাশের উদ্যোগ, বিজয় বাংলা সফটওয়ার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যার উদ্ভাবনসহ ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণ পদকে ভূষিত জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, দীনেশচন্দ্র সেন বাংলার প্রাচীন লোক সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে বাঙালিকে গৌরবান্বিত করেছেন। তিনি বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ইতিহাস বিশ্ব সাহিত্যে স্থান করে দিয়ে বাঙালির মেধা, সৃজনশীলতা ও শৌয্য-বীর্যকে চিনিয়েছেন ।
অসীম কুমার উকিল, এমপি বলেন, সংস্কৃতির অঙ্গণ থেকে অপসংস্কৃতিকে দূরে সরিয়ে হাজার বছরের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে হবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এই ফোরামের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।
মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে বৃহ্ত্তর ময়মনসিংহের আত্মার সম্পর্ক। এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকে অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া উচিৎ। আমরা বৃহ্ত্তর ময়মনসিংহের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে বাংলার সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে চাই।মনিরুছ সালেহীন বলেন, ময়মনসিংহ গীতিকার বাইরেও এই এলাকার মানুষের শৌর্য –বির্যের ইতিহাস সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তুলে আনতে হবে।
হুমায়ুন খালিদ বলেন, মৈমনসিংহ গীতিকা প্রকাশিত না হলে সমৃদ্ধ সংস্কৃতিতে বাংলাদেশকে বিশ্বে তুলে ধরা যেত না।
ম. হামিদ বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মীরা মনের ক্ষৃধা মিটাতে কাজ করেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। আমাদের চেতনা জগৎ বিকশিত করতে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে অপ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
মোল্লা জালাল বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে এই অঞ্চলের মানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ বিপ্লবে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ শৌর্য-বীর্য তুলে আনতে হবে।
পরে টাংগাইল ও নেত্রকোণা জেলা সাংস্কৃতিক দলের অংশ গ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
গত ১৮ মার্চ ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।