
এবারের দুর্গা পুজা উপলক্ষ্যে সঙ্গীতশিল্পী উত্তমকুমার রায়ের নতুন গান ‘আনন্দেরই দিন’ মুক্তি পাচ্ছে। শিল্পীর নিজের কথা, সুর, সঙ্গীতে মিউজিক ভিডিও আকারে বের হচ্ছে তার নিজের চ্যানেল থেকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে নতুন এই গান। শুধু গোটা গান নয় আসছে মিউজিক ভিডিও আকারে।এবারো বেশ আগেই পুজোর উদযাপন শুরু হয়েছে। পুজোর গান সেই উন্মাদনা আরও বাড়িয়ে দেয় যথারীতি। একটা সময় বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ থেকে মাইকে ভেসে আসতো পূজার গান। পূজায় নতুন গানের অপেক্ষায় থাকতেন শ্রোতারা।
ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, আশা ভোঁসলে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানগুলোই ছিল পূজার অন্যতম আকর্ষণ। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসবে নতুন গান প্রকাশিত হয়। এবারের পূজার নতুন গানের মধ্যে রয়েছে উত্তমের গানও।
ছেলেবেলা থেকেই উত্তমের গান গাওয়ার শুরু। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। সবখানেই সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জুটেছে সম্মান আর পুরষ্কার। উত্তমের পড়াশুনা চট্ট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিষয় সমাজবিজ্ঞান। নজরুল ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত ও সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির নজরুলের প্রশিক্ষক হিসেবে সার্টিফিকেটধারী। এছাড়া রবীন্দ্রভারতী থেকে বিমিউজ সম্পন্ন করেছেন। তালিম নিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতিমান সব সঙ্গীতজ্ঞের কাছে। এখন নিজেও গান শেখান। উত্তম একটি বেসরকারি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারি অধ্যাপক। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবেও পরিচিত। উত্তম বিটিভিসহ প্রায় সবগুলো বেসরকারি টিভি চ্যানলে লাইভসহ রেকর্ডেড নানা ধারার গানের অনুষ্ঠান করে নাম কুড়িয়েছেন। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে মূলত নজরুলসঙ্গীত ও আধুনিক গান করেন উত্তম। তিনি বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভূক্ত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকও। মিউজিক কম্পােজার্স সোসাইটি বাংলাদেশ এমসিএসবি’র সদস্য। নিজের লেখা ও সুর করা অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে। গভীর আবেগী গায়নভঙ্গীর অনন্যতার জন্য এরইমধ্যে উত্তম সঙ্গীতজনদের দৃষ্টি কেড়েছেন। সমানতালে স্টেজ শো-ও করছেন নিয়মিত। সব ধরণের সঙ্গীতেই উত্তমের আগ্রহ। শুনেনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য রক-ফিউশন নির্বিচারে। গানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকারও করেছেন তিনি। আজ আর গান গাওয়ার কোনো বিকল্পই খুঁজে পান না।
উত্তমের জন্ম বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়। বাবা প্রয়াত মনীন্দ্র রায়। মা প্রয়াত চিনুবালা রায়। তার অন্যতম জনপ্রিয় গান গুলাের মধ্যে ভালবাসার ময়না, আমার চোখের জলে বহে নদী অন্যতম। অর্ন্তজাল তথা ফেসবুকে কিশোরকুমার, মান্না দেসহ স্বর্ণযুগের শিল্পীদের অমর সৃষ্ট সব গান নিয়িমিত গেয়ে ভার্চুয়ালি ব্যাপক জনিপ্রয়তা ও দর্শক-ভালোবাসা পেয়েছেন এই শিল্পী।
২০০৪ সালে উত্তমের ডেব্যু অ্যালবাম ‘হাওয়া’ ছিল আধুনিক গানের। পরের উল্লেখযোগ্য অ্যালবাম কাজী নজরুলের বাছাই করা অবিস্মরণীয় কীর্তন, ভজন, বাউল, শ্যামা বিষয়ক ৮টি ভক্তিগীতি নিয়ে ’এলোরে শ্রী দুর্গা’। আধুনিক যন্ত্রানুষঙ্গে কিন্তু শুদ্ধ বাণী ও সুরে স্বকীয়ভাবে আধ্যাত্মলোকের স্পন্দনে গানগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যা শ্রোতাদের ভালো লেগেছে। ওই অ্যালবামের রেকর্ডিং কোলকাতা ও ঢাকায় করা। মিউজিক শিল্পীর নীজের, লিটন দাসের ও কোলকাতার সাহেব-সুমনের । গানগুলো ছিল, এলো রে শ্রীদুর্গা, ওরে নীলযমুনার জল, সখি আমি না হয় মান করেছিনু, দেখে যারে রুদ্রাণী মা, খেলিছ এ বিশ্বলয়ে, এ-কূল ভাঙ্গে ও-কূল গড়ে এই তো বিধির খেলা, আমি বাউল হলাম ধূলির পথে ও গোঠের রাখাল বলে দে রে। এছাড়া, উত্তমের আধুনিক ও নজরুলের গানের বেশকিছু মিক্সড অ্যালবাম বাজারে রয়েছে।
বর্তমানে বেশকটি প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন উত্তম। যার মধ্যে রয়েছে ফোক ফিউশন, আধুনিক, নজরুল, রবীন্দ্র ও সুফি ফিউশন। নিজের স্টুডিওতে কাজ করে চলেছেন। উত্তম। তিনি চান একজন কমপ্লিট মিউজিশিয়ান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্নধরণের মিউজিক শোনা ও চর্চার অভ্যেস। চান তাই সব ধরণের গান গাইতে। গিটার ও কি-বোর্ড বাজিয়ে হিসেবে নজর কাড়লেও অন্য বেশ কটি ইনস্ট্রুমেন্টও বাজাতে পারেন উত্তম। স্টুডিওতেও এ কাজগুলো করতে বেশ আনন্দ পান তিনি। তিনি চান, প্রত্যেক স্কুল-কলেজে মিউজিক ক্লাস হোক। ছেলে-মেয়েরা গুরুর কাছে গিয়ে গান শিখুক। ৪-৫ বছর শেখার আগে কেউ পারফর্ম না করুক। বর্তমানে নজরুলসঙ্গীত শিল্পী পরিষদের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। নজরুল ও তাঁর সঙ্গীতের প্রতি রয়েছে উত্তমের বিশেষ ভালবাসা। তবে সব ধরণের সঙ্গীতেই উত্তমের আগ্রহ। শুনেনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য রক-ফিউশন নির্বিচারে। গানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকারও করেছেন তিনি।
ভালোলাগা, বিশ্বাস, জীবনবোধ তার সঙ্গীতকে ঘিরেই। উত্তম দীর্ঘদিন নজরুল চর্চা করেছেন সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ ও সোহরাব হোসেনের কাছে। উত্তমের সঙ্গীতের প্রথম শিক্ষক ‘স্থানীয় শিশু একাডেমিতে প্রয়াত দেলোয়ার হক। বিশুদ্ধ মার্গসঙ্গীত শিখেছেন উস্তাদ মিহির লালা, অনিলকুমার সাহা, গৌতম ভট্টাচার্য, উস্তাদ মাশকুর আলী খান, শুভ্রা গুহ, বিদুষী শান্তি শর্মা প্রমুখের কাছে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে উচ্চতর তালিম নিয়েছেন পণ্ডিত তুষার দত্তের কাছে। প্রিয় দর্শক-শ্রোতা, শুভাকাঙ্ক্ষী, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের দোয়া ও ভালবাসা চান উত্তম। চান আমৃত্যু গান গেয়ে যেতে।