ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, শিশুদেরকে ডিজিটাল দক্ষতা সম্পন্ন স্মার্ট নাগরিক হিসেব গড়ে তুলতে না পারলে স্মার্ট বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যাবে না। কেবলমাত্র বিদ্যালয়ের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে স্মার্ট নাগরিক তৈরি করা সহজ হবে না। ডিজিটাল দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে সন্তানদের স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট নাগরিক হিসেবে তৈরি করার দায়িত্ব বাবা মাকেই পালন করতে হবে।
মন্ত্রী আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে প্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি) আয়োজিত টিএমজিবি লুনা সামসুদ্দোহা শিক্ষা বৃত্তি ২০২৩ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
টিএমজিবির সভাপতি মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার এবং বিজয় ডিজিটালের সিইও জেসমিন জুই প্রমুখ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন হক জুনায়েদ।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্ম আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার এখনকার যুগে বাস করে কেউ যদি কোন ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে না পারে তবে তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশ রূপান্তরের পেছনে তিনটি স্তর অতিক্রম করেছে উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, টিএন্ডটি বোর্ড গঠন, আইটিইউ ও ইউপিইউ এর সদস্য পদ অর্জন এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা প্রবর্তনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্মার্ট বাংলাদেশ বা তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের অভিযাত্রা শুরু হয়। এসময় কম্পিউটার প্রযুক্তি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতায় পৌছে দিতে ভ্যাট ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির বাস্তবায়ন আমরা শুরু করেছি। এই লক্ষ্যে শিক্ষার আমুল পরিবর্তন দরকার উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই মেধাবি। তারা যে কোন জটিলতা ধারণ করতে সক্ষম। ইতোমধ্যেই দেশের সুবিধা বঞ্চিত অঞ্চলের ছেলে মেয়েদের জন্য ডাক ও টেলিযোাগযোগ বিভাগের উদ্যোগে এসওএফ তহবিলের অর্থায়নে আমরা ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পার্বত্য অঞ্চলে ২৮টি পাড়াকেন্দ্রে ডিজিটাল কনটেন্টের পাঠ দানের মাধ্যমে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রা শুরু করেছি। আরও এক হাজারটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের কাজ চলছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান প্রচলিত পাঠদান পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং স্মার্ট মানব সম্পদ তৈরির জন্য কার্যকর একটি পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা এক বছরের পাঠ্যক্রম এক মাসেই সহজে আয়ত্বে আনতে সক্ষম এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠ প্রদানের ফলে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং নিয়মিত উপস্থিতির হার অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের যদি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে বিশ্বের যেকোনো মানদণ্ডকে তারা অতিক্রম করতে পারবে। সন্তানদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দিতে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করে সন্তানদেরকে প্রযুক্তির মন্দ দিক থেকে নিরাপদ রাখা যায়। এই ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে। লুনা সামসুদ্দোহা শিক্ষা বৃত্তি ২০২৩ আয়োজন করায় টিএমজিবির ভূমিকার প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, লুনা সামদ্দোহা ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার নামে বৃত্তি প্রদান তার অবদানকে অম্লান করে রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সন্তানরা শিক্ষার সঙ্গে বেড়ে উঠুক। এটি সন্তানদের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা ভবিষ্যতে তাদের জন্য আরও উদ্যোগ নিতে চাই।
শমী কায়সার নারীর ক্ষমতায়নে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে লুনা সামসুদ্দোহার অবদান তুলে ধরেন এবং গভীর শ্রদ্ধার সাথে তার অবদান স্মরণ করেন।
জেসমিন জুই ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে লুনা সামসুদ্দোহার অবদান তুলে ধরে বলেন, লুনা সামসুদ্দোহার নামে বৃত্তি প্রবর্তনে টিএমজিবির উদ্যোগ প্রসংসনীয় একটি কাজ। তিনি প্রযুক্তিকে শিশু-কিশোরদের শিক্ষা বিকাশে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় এই নারী উদ্যোক্তার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ অক্টোবর, ঢাকায়। তার বাবার নাম লুৎফার রহমান এবং মা হাসিনা রহমান। লুনা শামসুদ্দোহা ২০১৩ সালে প্রযুক্তি খাতে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির কারণে গ্লোবাল উইমেন ইনভেন্টরস অ্যান্ড ইনোভেটরস নেটওয়ার্ক (গুইন) সম্মাননাসহ দেশ বিদেশে নানান সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এই উদ্যোক্তার।