তৈনগাঙ থিয়েটার এর ৩য় প্রযোজনা “বুরে বুরে দিনম্বত” এর সফল মঞ্চায়ন। হল ভর্তি দর্শকের হাসি আর মুহূর্মুহু করতালি মধ্য দিয়ে প্রিমিয়ার হলো “তৈনগাঙ থিয়েটার” এর স্যাটায়ার/ ব্যঙ্গাত্মক ফর্মের নাটক “বুরে বুরে দিনম্বত”।
“বুরে বুরে দিনম্বত” তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা। এর আক্ষরিক বাংলা অর্থ ভিতরে ভিতরে দু’নাম্বার! পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় উৎসব “বিজু সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু ২০২৪ এর চারদিন ব্যাপি উৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় তঞ্চঙ্গ্যা জাতিসত্তার অন্যতম নাট্যদল ” তৈনগাঙ থিয়েটার” এর নতুন নাটক “বুরে বুরে দিনম্বত”! ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট রাঙ্গামাটি এর আয়োজনে ও অর্থায়নে, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ” বুরে বুরে দিনম্বত” নাটকটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। নাটকটি রচনা করেছেন আশিক সুমন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় অনুবাদ করেছেন বিশ্বজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা।
নাটক প্রসঙ্গে নাট্যকার আশিক সুমন বলেন, ” বুরে বুরে দিনম্বত” নাটকটি একটি স্যাটায়ার। চলমান সমাজের অবক্ষয়ের একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। লোভ লালসার বশবর্তী হয়ে রাতারাতি ধনী হয়ে যাওয়ার জন্য মানুষ এখন উদগ্রীব। তার জন্য এহেন কর্ম নেই যা মানুষ করছে না। সমস্ত নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে একে অপরের অনিষ্ট করা এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনা। ভালো মানুষের মুখোশে একে অপরকে ঠকিয়ে মিথ্যা ছলনা আর কপটতায় সর্বশান্ত করতে আমরা যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছি। নাটকে এমনই কিছু বিষয় হাস্যরসের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা চেষ্টা করেছি।
নাটক নির্দেশনার প্রসঙ্গে নাটকটির নির্দেশক রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “বুরে বুরে দিনম্বত” নাটকটি স্যাটায়ার ফর্মের নাটক। আমি এই ব্যাঙ্গাত্মক নাটকটিকে তঞ্চঙ্গ্যা জীবনাচরণ, সৃষ্টি, কালচারে বাঁধার চেষ্টা করেছি। সংলাপ প্রক্ষেপণ আর অভিনয়ে সাবলীলতাকে প্রাধান্য দিয়েছি। সরল সরল উপস্থাপনায় নাটকটির মূল্য ভাষ্য যেন যথাযথভাবে উপস্থাপন হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেছি।
আশিক সুমন এর রচনায় ও রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা’ র নির্দেশনায় নাটকটি উপস্থিত দর্শক মন কেড়ে নিয়ে ছিল। নাটকের প্রতিটি দৃশ্যের সাথে দর্শকের একাত্মতা যেন তাই প্রমাণ করে।
“বুরে বুরে দিনম্বত” নাটকে দেখা যায়, পিয়ংখুলা একজন ব্যবসায়ী। নানা লোকের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র শর্তানুযায়ী রেখে তার বিনিময়ে পিয়ংখুলা তাদেরকে টাকা ধার দেয়। একদিন পিয়ংখুলা একটি বাড়িতে যায়। বাড়িওয়ালীর মূল্যবান নেকলেসের বিনিময়ে সে দুই লক্ষ টাকা ধার দিবে। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই পিয়ংখুলা যখন বাড়িতে ঢুকে তখন থেকেই সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। ঘটতে থাকে একের পর এক যৌক্তিক অযৌক্তিক ঘটনা। সে ঘটনা কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা পিয়ংখুলা ঠিক নির্ণয় করতে পারে না। নিজের অজান্তেই পিয়ংখুলা উদ্ভট পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে পুতুল হয়ে নাচতে থাকে। অবশেষে একটি নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে নাটকটির পরিসমাপ্তি হয়। অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী পিয়ংখুলা তার কিছুই আঁচ করতে পারে না। উপস্থিত দর্শকরাও নাটকের শেষ দৃশ্যে গোলকধাঁধায় দুলতে থাকেন।
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন, পিয়ংখুলা- রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বাড়িওয়ালাী- সুবিতা তঞ্চঙ্গ্যা, চোর- বিশাল তঞ্চঙ্গ্যা, ও ধুধুকবাদক- প্রদীপ্ত তঞ্চঙ্গ্যা। নাটকটির মঞ্চ ডিজাইন করেছেন-রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। আলো ও আবহসংগীত পরিকল্পনা- আশিক সুমন। কষ্টিউম ও প্রপস্ – বুরে বুরে দিনম্বত নাটকের টিম। ব্যবস্থাপনায় সুদ্বীপ তঞ্চঙ্গ্যা ও জানন তঞ্চঙ্গ্যা। প্রযোজনাটি মিডিয়া কনসালট্যান্ট – মনি পাহাড়ী। উদ্বোধনী মঞ্চায়নে অতিথি হিসেবে উপস্থিত চাকমা সার্কেল চীফ রাজা দেবাশীষ রায়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট রাঙ্গামাটি এর পরিচালক বাবু রুনেল চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর সম্মানিত সদস্য বাবু দীপ্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা, প্রভাষক মিলন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও সংস্কৃতিজন অঞ্জলিকা খীসা, বিশিষ্ট ব্যাংকার অমল বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, গতি থিয়েটার ঢাকা এর সভাপতি মনি পাহাড়ী।
উল্লেখ্য তৈনগাঙ থিয়েটার ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের আনুষ্ঠানিক নাট্যযাত্রা শুরু করে। এ পর্যন্ত তিনটি প্রযোজনা তারা সফলভাবে মঞ্চে নিয়ে এসেছে। প্রযোজনাগুলো হলো, “মন’উকূলে” “রত্নমালা” এবং “বুরে বুরে দিনম্বত”। এখন পর্যন্ত নাট্যদলটি বিভিন্ন উৎসব পার্বণে নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি জাতীয় ও নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করে সুনাম অর্জন করেছে। সকলের সহযোগিতা ও ভালবাসায় ” তৈনগাঙ থিয়েটার” অনেকদূর পথ পাড়ি দেবার স্বপ্ন দেখে। তাদের এই স্বপ্ন হোক। আরও দর্শকনন্দিত প্রযোজনা নিয়ে বারবার মঞ্চ আলোকিত করুক এই প্রত্যাশা আমাদেরও।