রবিবার, অক্টোবর ৬Dedicate To Right News
Shadow

গৃহকর্মে শিশু: কতটা সুরক্ষিত!

Spread the love

গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু আজ সুরক্ষিত নয়। মানা হচ্ছে না গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি। বেড়ে যাচ্ছে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু নির্যাতন। গতকাল সোমবার সকালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ‘গৃহকর্মে শিশু: কতটা সুরক্ষিত’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বেল্লাল হোসেন শেখ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মুনীরা সুলতানা।

সংলাপে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক নাসের ইকবাল যাদু, জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের কর্মসূচি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার, সমাজসেবা কর্মকর্তা কে এম শহীদুজ্জামান, এসওএস শিশু পল্লীর পরিচালক এ. কে. এম আজিজুর রহমান, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আল-আমিন, এএসডি’র কো-অর্ডিনেটর (সিডিআর) এম এ করিম, ম্যানেজার (এম এন্ড ই) লুৎফুন নাহার কান্তা, কো-অর্ডিনেটর (অ্যাডভোকেসি এন্ড ক্যাম্পেইন) মো. ইসহাক ফারুকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এএসডির ডিসিএইচআর প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা গুল-ই-জান্নাত। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এএসডি’র কার্যনির্বাহী সদস্য ইমতিয়াজ রসুল। অনুষ্ঠানে দুজন গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু জান্নাত ও মিশু তাদের জীবনের কথা তুলে ধরে। গৃহকর্মী কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা সঠিকভাবে পালন করা এবং গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের বাবা-মাকে ভাতা প্রদান করা যায় কিনা, সে বিষয়ে দাবি তোলে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বেল্লাল হোসেন শেখ বলেন, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের শ্রম বন্ধে সকলের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। সকল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্ত-মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করলে সকল কার্যক্রম সহজভাবে করা যাবে। গৃহকর্মী কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা হালনাগাদের বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আর আমাদের সম্মিলিতভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম বন্ধে কাজ করতে হবে। শক্ত আইন প্রণয়ন ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া জরুরী। শিশুশ্রম বন্ধে কমিউনিটি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সকল ধর্মীয় উপসনালয়ের নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদেরকে শিশুশ্রম বন্ধের বিষয়গুলো প্রচার করতে হবে। আর এএসডির কার্যক্রম সকল জেলায় সম্প্রসারিত করলে ভালো হবে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মুনীরা সুলতানা বলেন, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো শুধুমাত্র দারিদ্রতা বা অশিক্ষার অজুহাত নয়, আসলে মানসিকতা। তাই আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করা প্রয়োজন। প্যারেন্টিং স্কিল বাড়াতে হবে। পলিসি ও অ্যাডভোকেসিতে সাধ ও সাধ্যের বিষয়গুলোর মানচিত্র নিরূপণ করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো ভাবনার মধ্যে আনতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন (এনপিএ) নিয়ে কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করতে হবে, যেন কোন শিশু ১৪ বছরের আগে কাজে না যুক্ত হয় এবং পড়ালেখার সাথে সম্পৃক্ত থাকে।

বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক নাসের ইকবাল যাদু বলেন, পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করতে পারলেই শিশুরা গৃহকর্মে নিযুক্ত হবে না। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন কমে যাবে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু শ্রমকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

জেলা মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের কর্মসূচি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার বলেন, গৃহকর্মীর সাথে গৃহকর্তা এবং তাদের সন্তানদের সম্পর্কের প্রসার বাড়াতে হবে। গ্রামগঞ্জে অনেক দরিদ্র মানুষ সরকারি ভাতা সঠিকভাবে পাচ্ছে না। গ্রামের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের এক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোররা সরকারের বিভিন্ন ক্লাবে নিজেদের যুক্ত করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারে।

সমাজসেবা কর্মকর্তা কে এম শহীদুজ্জামান বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বাবা-মাকে সহায়তা দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও জাতীয় পরিচয় পত্রে বয়সের সঠিক তথ্য না থাকায় ভাতা প্রদান সম্ভব হয় না। বছরে ২বার দরিদ্র শিশুদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এ তথ্য অনেকে না জানার কারণে সহায়তা পাচ্ছে না।

এসওএস শিশু পল্লীর পরিচালক এ. কে. এম আজিজুর রহমান বলেন, এসওএস শিশু পল্লীর পরিবার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে।

ঢাকা আহছানিয়া মিশনের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আল-আমিন বলেন, সকল এনজিও একত্রিত হয়ে সমন্বিতভাবে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুশ্রম বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এএসডি’র কার্যনির্বাহী সদস্য ইমতিয়াজ রসুল বলেন, গৃহকর্মে শিশুরা আজ সুরক্ষিত নয়। প্রতিটি মন্ত্রণালয় একত্রে কাজ করলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার পাশাপাশি গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু নির্যাতন বন্ধ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *