১৭ মার্চ ২০২৩ বান্দরবান জেলার শেষ সীমানা নাইক্ষ্যংছড়ির ভালুকিয়া পাড়া ধর্মজ্যোতি বৌদ্ধ বিহার এর আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার নাটক “মন উ’কূলে।” কানায় কানায় পরিপূর্ণ দর্শকের উপস্থিতিতে তৈনগাঙ থিয়েটার পরিবেশন করল তাদের নাটক। নাটকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শক সাড়া প্রফেশনাল দর্শককেও হার মানাবে। যেখানে যেমন রিএকশন দেবার কথা ঠিক তেমনটাই করেছেন দর্শক। অদ্ভুতভাবে নাট্যঘটনার সাথে ভ্রমণ করেছেন তারা।
এই নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় একই গুরুর দুই শিষ্য। একজন মানুষের জন্য কাজ করতে চায়। আরেকজন নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে চায়। গুরুজি এক গুপ্তধনের সন্ধানের সূত্র জানায় দু’জনকে। একটি নির্দিষ্ট বইয়ের পাতায় সেই ধনের সন্ধান আছে বলেন। সেটা যে আগে বের করতে পারবে সে হবে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। দুষ্টু সেবক সেকথা শোনার পর বইএর সন্ধানে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে চলে।এমনকি গুরুকেও মেরে ফেলে। ওদিকে ভালো শিষ্য গুপ্তধনের চেয়ে মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। শেষমেশ দেখা যায় গুপ্তধনের লোভে আর প্রতিহিংসাে বশে খারাপ শিষ্য ভালো শিষ্যকেও হত্যা করে। তখন ভালো শিষ্যর বউও খারাপ শিষ্যের পিঠে তীর দিয়ে আঘাত করে। এভাবে মৃত্যু হয় খারাপ শিষ্যের। আর ভালো শিষ্য মরে যাবার আগে বলে যায় যে – আসল গুপ্তধন মানুষের মনের মধ্যে। মানুষের প্রতি ভালোবাসাই হলো সে অমূল্য ধন। গুরুর আশীর্বাদে সে ধনের সন্ধান পাবে তারই পুত্র। এ কথা বলার পরপর সে দেহত্যাগ করে। কিন্তু তার কাজের মধ্য দিয়ে সে অমর হয়ে রয়।
নাট্য কাহিনীটি উপস্থিত সকল দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সেই সাথে সকলের প্রাণবন্ত অভিনয় মন কাড়ে তাঁদের।
মঞ্চায়ন শেষে বিহার কর্তৃক সম্মাননা জানানো হয় নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে। শ্রদ্ধেয় বিহার অধ্যক্ষ শাসনা জ্যোতি ভান্তে’র আমন্ত্রণে মন উ’কূলে টিম নাইক্ষ্যংছড়ি পৌঁছে। তাঁর বক্তব্যে তিনি খুব সুন্দর করে নাটকের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেন। এছাড়াও এলাকার বিশিষ্টজনেরা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন নাটকের।
নাটক শেষে নাচ গান পরিবেশিত হয় একই মঞ্চে। কিন্তু কোনোকিছুই নাটকের রেশ কাটাতে পারেনি। বিদায়ের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আয়োজক ও এলাকাবাসী নাটকের কলাকুশলীদের সাথে সাথে ছিলেন এবং আগামীতে আরও নাটক দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
‘মন উ’কূলে’ নাাটকটির গল্প লিখেছেন রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। নাটরূপ ও নির্দেশনায় ছিলেন আশিক সুমন। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁরা হলেন রন্ত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা. সুবিতা তঞ্চঙ্গ্যা, বিশ্বজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা, প্রদীপ্ত তঞ্চঙ্গ্যা, বিশাল তঞ্চঙ্গ্যা, বিনয় কান্তি চাকমা। আবহ সংগীত, মঞ্চ, আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন আশিক সুমন। পোশাক পরিকল্পনা ও প্রপস্ মন’উকূলে টিম। নাটকের মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে ছিলেন কাজলী তঞ্চঙ্গ্যা। নাটকটি তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় অনুবাদ করেছে মন’উকূলে টিম। সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন জানন তঞ্চঙ্গ্যা, সার্বিক তত্ত্বাবধানে এডঃ সুদ্বীপ তঞ্চঙ্গ্যা এবং মিডিয়া কনসালটেন্ট মনি পাহাড়ী।
তৈনগাঙ থিয়েটার আত্মপ্রকাশের খুব অল্পদিনের মধ্যে বান্দরবান ঘুরে আসলো মন উ-কূলে নাটকটি নিয়ে। এভাবে একের পর এক নাট্য ভ্রমণের মধ্য দিয়ে দেশ বিদেশের মানুষ তঞ্চঙ্গ্য জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করবে নাট্য ব্যঞ্জনায় এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।