
গতকাল ২১ জুলাই বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেয়েছে ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহেইমার’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে একই দিনে বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্সেও মুক্তি পেয়েছে বহুল কাঙ্খিত এই ছবিটি।
এ প্রসঙ্গে স্টার সিনেপ্লেক্সের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথমদিনে দুর্দান্ত ওপেনিং হলিউড মুভি ‘ওপেনহেইমার’ ও ‘বার্বি’। স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রতিটি শাখায় দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। পিছিয়ে নেই ঈদে মুক্তি পাওয়া বাংলা সিনেমা ‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’, ও ‘প্রহেলিকা’। চতুর্থ সপ্তাহে এসেও সমানতালে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের সেরা মুভিগুলোর সাথে।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ভারতে প্রথম দিনের কিছু শোয়ের টিকেট কয়েকগুন বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ‘১২৩ তেলেগু ডট কম’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ছবিটি ভারতে প্রথমদিন ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা আয় করেছে।
হলিউড তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রে নির্মাতা হিসেবে যে নামটির প্রতি প্রবল আকর্ষণ সবার সেটি ক্রিস্টোফার নোলান। সিনেমার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে এই নামটিই যথেষ্ট। ক্রিস্টোফার নোলান মানেই সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা নির্মাণশৈলী। দর্শক-সমালোচক-বোদ্ধা এমনকি সারা বিশ্বের নির্মাতারাও মুখিয়ে থাকেন তার ছবি দেখার জন্য। অন্যান্য ছবির মতো ‘ওপেনহেইমার’-এও তিনি এমন কিছু নিয়ে এসেছেন যা অনেকের চিন্তার বাইরে।
মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী জে. রবার্ট ওপেনহাইমার পারমাণবিক বোমার জনক। তাঁর জীবনীর ওপর ভিত্তি করে উপন্যাস লিখেছেন কাই বার্ড ও মার্টিন জে শেরউইন। ‘আমেরিকান প্রমিথিউস দ্য ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি অব জে. রবার্ট ওপেনহাইমার’ নামের এই উপন্যাস ২০০৬ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পায়। সেই উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে এই সিনেমা নির্মাণ করেছেন ক্রিস্টোফার নোলান। এই সময়ের হলিউড সিনেমা মানেই কম্পিউটার জেনারেটেড ইমাজেনারি বা সিজিআইয়ের ব্যবহার। এর মাধ্যমে বিস্ময়কর সব দৃশ্য-চিত্র ফুটিয়ে তোলা যায়। তবে ক্রিস্টোফার নোলান দাবি করেছেন, তার ছবিতে কোনও সিজিআই ব্যবহার করা হয়নি। এর আগে নোলান বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহার না করেই ট্রিনিটি পরীক্ষা (নিউ মেক্সিকোতে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র বিস্ফোরণ) পুনরায় তৈরি করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা দেখছিলাম যে কিভাবে আমরা ফিল্মের ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোকে কার্যত উপস্থাপন করতে পারি।’
ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নন্দিত অভিনেতা কিলিয়ান মারফি। এছাড়াও আছেন হলিউডের জনপ্রিয় তারকা রবার্ট ডাউনি জুনিয়র ও ম্যাট ডেমন। রয়েছেন এমিলি ব্লান্ট, ফ্লোরেন্স পাগ, ক্যাসে অ্যাফ্লেক, জশ হার্টনেটসহ আরও অনেকে। গত ১২ জুলাই প্যারিসে সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথমবারের মতো পর্দায় উন্মোচন হয় ‘ওপেনহেইমার’। সিনেমাটির প্রথম দর্শনেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ সমালোচকরা। বিখ্যাত ওয়েবসাইট কোলাইডারের স্টিভ ওয়েইনটাব সিনেমাটিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে অভিহিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, “ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহেইমার’ অবিশ্বাস্য। জমকালো পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে ক্যামেরার পেছনে আশ্চর্যজনক কাজ। নোলান যেভাবে গল্পটি বলেছেন তার প্রতিটি দিকই কথা বলার মতো।’ বিখ্যাত সমালোচক সাইমন থম্পসন লিখেছেন, ‘ওপেনহেইমার শক্তিশালী জিনিস। সিলিয়ান মারফির পুরস্কারযোগ্য পারফরম্যান্স পরবর্তী স্তরের একদম। এই সমৃদ্ধ এনসেম্বল কাস্টের প্রতিটি অভিনেতা তাদের সর্বোচ্চ দিয়েছে। ক্রিস্টোফার নোলানের রচনা অসাধারণ এবং সিনেমাটোগ্রাফার হোয়েট ভ্যান হোয়েতেমার করা কাজ একদম শ্বাসরুদ্ধকর।’ টোটাল ফিল্মের ম্যাট মায়তুম বলেছেন, ‘ওপেনহেইমার আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। সিলিয়ান মারফির দুর্দান্ত অভিনয় সর্বোচ্চ স্কেলে একটি চরিত্রের অধ্যয়নের প্রতিফলন। একটি মহাকাব্যিক ঐতিহাসিক ড্রামা হলেও নোলানের স্বতন্ত্র নির্মাণ একে অন্য স্তরে নিয়ে গেছে।’