বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, প্রতি বছর ১২ লাখ মানুষ সরাসরি ধূমপান না করে শুধু ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকার কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন। তাই বিদ্যমান আইনের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’র আলোকে সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার (০৯ অক্টোবর, ২০২৩) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ব্ক্তব্যে সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি ডা. তাহসীন আলম সায়েম এই দাবি করেন।
এ সময় তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশক তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র আলোকে আরো শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)-এর সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে এবং বিশ্বের নবম বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ বাংলাদেশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। অর্থ্যাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন। তাই জনস্বাস্থ্যকে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত আইনটি সংশোধনের দাবি করেন তিনি।
তামাক নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক মানদণ্ডে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি জানান, আইনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ)’ রাখার সুযোগ এর অন্যতম প্রধান কারণ। হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন জনপরিসর ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) থাকলে অধূমপায়ীদের পাশাপাশি সেবাকর্মীরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। তাই বিদ্যমান আইনের ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ (ডিএসএ) রাখার বিধান বাতিল করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড, নেপাল, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ ৬৭টি দেশ পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসে শতভাগ ধূমপানমুক্ত আইন বাস্তবায়ন করেছে।
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু বলেন, বর্তমান আইনে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তরুণ ও শিশুদের আকৃষ্ট করতে বিক্রয়স্থলের দৃশ্যমান স্থানে তামাকপণ্যের প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। তরুণদের সুরক্ষায় সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ ৫০টি দেশ বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেরও বিক্রয়স্থলে তামাকপণ্যে প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী সমূহ হলো- সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহণে ধূমপানের জন্য নিধারিত স্থান বিলুপ্ত করা; বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির ‘কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট (এইচটিপি) নিষিদ্ধ করা; বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা ও মোড়কবিহিন বিক্রি নিষিদ্ধ করা; সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি (৫০% থেকে ৯০% এ বৃদ্ধি করা) ও প্লেইন প্যাকেজিংসহ তামাকজাত দ্রব্য মোড়কজাতকরণের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম প্রণয়ন করা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. সৌমিক দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আওসাফ তাজওয়ার, সন্ধানীর উপদেষ্টা কাজী আয়েশা সিদ্দিকা ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ অফিসার ডা. জুবাইদা আখতারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা।