শুক্রবার, মার্চ ২৯Dedicate To Right News
Shadow

নারী দিবসে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ হতে সম্মাননা পেলেন মনি পাহাড়ী

Spread the love

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর আয়োজনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা পরিষদ সদস্য ঝর্ণা খীসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। অনুষ্ঠানে দু’জন নারীকে বিশেষ সম্মননা প্রদান করা হয়। একজন সান্ত্বনা খীসা ও আরেকজন মনিরা পারভীন মনি

করোনাকালে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ স্বীকৃতিস্বরূপ মনি পাহাড়ী- কে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে তাঁর কর্মজীবন সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়।

মনি পাহাড়ী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। মাত্র ১২ বছর বয়স থেকে থিয়েটারের সাথে যুক্ত হওয়ার সূত্র ধরে পরবর্তীতে তিনি বিখ্যাত নাট্যকার মামুনুর রশীদ এর সাথে একত্রে সারাদেশব্যাপী থিয়েটার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এর ধারাবাহিকতায় ইউএন অর্গানাইজেনসহ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করে আসছেন। বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র “মনপুরা” তে তিনি ছিলেন সহকারী পরিচালক।”কে হতে চায় কোটিপতি”- ‘র মতো ইন্টারন্যাশনাল ফরম্যাট এর রিয়ালিটি শো’তে তিনি কাস্টিং প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার ঢাকা’র গ্রেড ” এ” এর অভিনয়শিল্পী। পাশাপাশি বিবিসি মিডিয়া একশন এর ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। তিনি গতি থিয়েটার ঢাকা’র সভাপতি। ২০১২ সালে তিনি এসএটিভি ও পরবর্তীতে নাগরিক টিভিতে প্রোগ্রাম বিভাগে কাজ করেন।

এতদসত্ত্বেও পারিবারিক কারণে ২২ বছরের ক্যারিয়ার ছেড়ে তিনি রাঙ্গামাটি ফিরে আসেন ২০১৭ সালে। কিন্তু এখানে এসেও তার কর্মযজ্ঞ থেমে নেই। পাহাড়ে নাট্যচর্চার একটি গতি আসে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর সহায়তায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর আয়োজনে নাট্য প্রশিক্ষণ করানোর মধ্য দিয়ে। গড়ে উঠে নতুন নাট্য সংগঠন। তাঁর ইচ্ছে রয়েছে প্রতিটি জাতিসত্তার একটি করে নাট্যদল তৈরি করে দেবার যেখানো নারীরা পুরুষের সাথে সমানভাবে নেতৃত্ব দেবে।

এভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি নানান মানবিক কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখছেন তিনি। বিশেষ করে করোনার সময় সেটা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়। করোনার শুরুতে ঘরবন্দী মানুষ যখন দিশেহারা তখন তার আইডিয়ায় প্রথম বাংলাদেশে “ফেসবুক লাইভ চ্যারিটি শো” হয়। এতে তার হাজব্যান্ডসহ ফেসবুকে গান গেয়ে অনুদান সংগ্রহ করেন। সে অর্থে তিনি রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলায় ৩৫১ টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা করেন। পরবর্তীতে তাদের এই কর্মকান্ডের কথা “ডেইলী স্টার, দৈনিক জনকন্ঠ, জাগোনিউজ, পাহাড়২৪, আলোকিত রাঙ্গামাটিসহ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হয়। এ খবর দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে কানাডার প্রবাসী সংগঠন ” বিবেক এইড ফাউন্ডেশন” আরও ৬৫ পরিবারের জন্য সহায়তা পাঠায়। পরবর্তীতে এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও অনেকে এই প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করেন। সামাজিক জাগরণে তাঁর এই ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ইতোমধ্য করোনা যোদ্ধা হিসেবে ” ওয়ার্ল্ড পীস এন্ড হিউম্যান রাইট সোসাইটি ” হতে করোনাযোদ্ধা হিসেবে সম্মাননাপ্রাপ্ত হন।

করোনার সময় আরেকটি সংকট দেখা দেয় যখন দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় দীর্ঘদিনের জন্য। সে সময় বিকল্প পথে হাঁটার কথা ভাবেন তিনি। গড়ে তোলেন দেশীয় প্রোডাক্ট নিয়ে অনলাইনভিত্তিক সংগঠন “হিল ই-কমার্স সোসাইটি” যার সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ৫১ হাজার। শুধুমাত্র সংখ্যা সর্বস্ব না হয়ে গুণগত কাজের মাধ্যমে পাহাড় সমতলের অপূর্ব মেলবন্ধনে কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি। কী করে প্রোডাক্ট প্রেজেন্টেশন করতে হয়, কী করে মার্কেটিং করতে হয়, কী করে ক্রেতার সাথে সম্পর্ক ডেভেলপ করতে হয়, কী করে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে হয় তার নানান দিক নিয়ে নিয়মিত গ্রুমিং করা হয় এখানে। ইতোমধ্যে পাহাড় সমতল মিলিয়ে রাঙ্গামাটিতে একটি সম্মেলন করেছে হিলস যার উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটির মাননীয় এমপি দীপংকর তালুকদার। এই ফলপ্রসু সম্মেলনে পাহাড়ের সাথে সমতলের উদ্যোক্তা ক্রেতাদের বন্ধন সুদৃঢ় হয় ও বাণিজ্যিক প্রসার বৃদ্ধি পায়।

হিল ই-কমার্স সোসাইটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিশেষ করে পাহাড়ের প্রকৃতি, জনজীবন, সংস্কৃতি ও বিভিন্ন সৃষ্টিকে এমনভাবে পরিবেশন করে যে সেটা সর্বমহলে আলোচনার সৃষ্টি করে। খুব কম সময়ের মধ্যে দেশের ৩০ টির অধিক প্রিন্টেড ও জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে গুরুত্বের সাথে হিলস সম্মেলন ও তাদের নানাবিধ কথা উঠে আসে।

সম্প্রতি হিল ই-কমার্স সোসাইটি তিনদিনব্যাপী অনলাইন ফেস্টিভ্যাল করে। এখানে অংশগ্রহণকারীদের ৯০ শতাংশ ছিলেন নারী। আর এতে অভাবনীয় সাড়া পান তাঁরা। ফেস্টিভ্যাল এ তারা সম্পৃক্ত করে নেন দেশের ই-কমার্স এর অভিভাবক সংগঠন ই- ক্যাব-কে। তিনদিনব্যাপী ফেস্টিভ্যাল এর উদ্বোধন করেন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন। তিনি পাহাড়ে এ ধরণের অনলাইন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এভাবে দেশ বিদেশে বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে হিলস।

বর্তমানে হিল ই-কমার্স সোসাইটিতে ১৯ জন লাখপতি সেলার যার অধিকাংশই নারী। পরিবারে পুরুষই কেবল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখবে সে ভাবনা থেকে নারীরা বেরিয়ে এসেছে। পাহাড়ের নারীদেরও এমন পরিবর্তন ও সাফল্য আনয়নে মমতা ও যত্নের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

কোনোকিছুর প্রত্যাশা না করে নিজ বোধের জায়গা থেকে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখার কারণে মনিরা পারভীন মনি (মনি পাহাড়ী) এখন একটি আইকনিক চরিত্র হয়ে উঠেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *