ইন্দোনেশিয়ার গো জ্যাক কিংবা চীনের আলি পে নয়; এবার বাংলাদেশেই দেশীয় ডেভেলপাররা তৈরি করেছে পূর্ণাঙ্গ সুপার অ্যাপ ‘দ্য বোরাক’। তিনটি অ্যাপের সমন্বয়ে মিলছে ৭১ ধরনের ‘অন ডিমান্ড’ সেবা।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে দূরত্বের সীমারেখা মুছে দিয়ে সকল ধরণের সেবা পাওয়া যাচ্ছে মুঠোফোনে, তাও আবার একটি মাত্র অ্যাপ থেকেই। দ্যা বোরাক এর ওয়েবসাইট https://theborak.com | এনড্রয়েড ফোনে সেবা ব্যবহারকারী এবং প্রদানকারীগণ সহজেই ইনস্টল করতে পারবেন গুগল প্লে বা দেশীয় অ্যাপ মার্কেটপ্লেস অ্যাপবাজার থেকে।
‘রাইড’, ‘সার্ভিস’, ‘ফুড’ এবং ‘প্রোডাক্ট’ এই চারটি মূল শ্রেণীর মাধ্যমে মোটর রাইড থেকে অ্যাম্বুলেন্স, মুদি সদাই থেকে ইলেক্ট্রনিক্স কিংবা কসমেটিক্স, খাবার অর্ডার, চিকিৎসা সেবা, প্লাম্বার কিংবা সেলুন/ বিউটি পার্লারসহ সব ধরণের প্রয়োজনীয় সেবা।
এমনকি দ্য বোরাক তৈরি করতে যাচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্লাড নেটওয়ার্ক যেখানে খুব সহজেই জীবনের প্রয়োজনে মিলবে কাঙ্ক্ষিত গ্রুপের রক্ত।
দ্য বোরাক ১০ এপ্রিল দেশের ১৭তম কোম্পানি হিসেবে রাইড শেয়ারিং লাইসেন্স পেয়েছে বাংলাদেশ রোড এন্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে।
দ্য বোরাক সুপার অ্যাপের এই আয়োজন নিয়ে বোরাক সার্ভিসেস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম বিপ্লব জানালেন, স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবনকে ডিজিটাল ছোঁয়া দিতে এবং একটি পরিপূর্ণ সুপার অ্যাপের অনন্য অভিজ্ঞতা দিতেই আমাদের এই আয়োজন। সকল শ্রেণী পেশার নাগরিককে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
দ্য বোরাক এর উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখি হাজার মাইল দূরে বসে পাড়ার মুদি দোকান থেকে প্রবাসী ভাই ঈদের বাজার করে দিবেন পরিবারকে, জ্যামে আটকে মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার আগেই বাইক রাইড নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাবে হাজার মানুষ, চাকরি না পেয়ে হতাশায় জীবনটাকে শেষ করার আগে দক্ষতাকে পুঁজি করে ডিজিটাল সেবা দিয়ে ভাগ্যটাকে পালটাবে হাজারো তরুণ, সিনেমার অবাস্তব দৃশ্যর মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহরের অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিবে সুবিধাবঞ্ছিত মানুষ, শহরের ব্যস্ত চাকরিজীবী টাটকা সব্জির বাজার করবেন সরাসরি গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশের অর্ধেক নাগরিককে এই সেবার আওতায় আনা এবং দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজয় করবে দ্য বোরাক পরিবার। এই সুপার অ্যাপে কার, বাইক, ট্রাক, বাস, মিনিবাস সিএনজি ইত্যাদি সকল ধরনের পরিবহন সেবা ছাড়াও গৃহশিক্ষক, নার্স, ইলেক্ট্রিশিয়ান, রাজমিস্ত্রী, কাঠমিস্ত্রী ও বিউটিশিয়ানসহ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবাও মিলবে। বাংলাদেশের প্রতিটি দোকান এর দৈনন্দিন কার্যক্রম যেমন লেনদেনের হিসাব, কাস্টমার লিস্ট, ইনভয়েস তৈরী, অর্ডার রিসিভ, স্টক ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি অ্যাপ এর মাধ্যমে করা যায়, সে জন্য তৈরী করা হয়েছে দ্য বোরাক স্টোর অ্যাপ।
বোরাক সার্ভিসেস লিমিটেড এর ড্রাইভার সাকসেস ম্যানেজার মোহাম্মদ সেলিম রানা বলেন, আমরা রাইড শেয়ারিং উদ্যোগকে ব্যবসা হিসেবে না দেখে এটিকে মানবিক সেবা হিসেবে দেখতে চাই। এই লক্ষে আমরা ঢাকা, সিলেট এবং চট্টগ্রামে শত শত রাইড শেয়ার সেবা প্রদানকারী ড্রাইভার ভাইদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছি এবং উনাদের মূল্যবান মতামত অনুসারে আমাদের সফটওয়্যার এবং প্রোগ্রাম তৈরী করেছি। আমরা আশা করছি, রাইড শেয়ারিং এর প্রথাগত ধারণা বদলে সত্যিকারের মানুষ এবং পরিবেশবান্দব সেবাপ্রদানকারী হিসেবে দ্য বোরাক সবার পাশে থাকবে।
দ্য বোরাক তৈরি করতে যাচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব্লাড নেটওয়ার্ক যেখানে খুব সহজেই জীবনের প্রয়োজনে মিলবে কাঙ্ক্ষিত গ্রুপের রক্ত। ব্লাড নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বোরাক সার্ভিসেস লিমিটেড এর পরিচালক (যোগাযোগ) হাবিব মোর্শেদ ইকবাল বলেন, মানুষ অ্যাপ থেকে যদি গাড়ি খুঁজতে পারে, ডাক্তার, খাবার কিংবা অন্যান্য সেবা নিতে পারে, তবে জীবন বাঁচাতে নিকটস্থ রক্তদাতা কেন খুঁজে বের করতে পারবে না? দেশের ৫ কোটি মানুষকে দ্যা বোরাক সিস্টেমে যুক্ত করে সর্ববৃহৎ রক্তদাতা নেটওয়ার্ক তৈরী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এর নাম আরো একবার বিশ্বের দরবারে উজ্জ্বল করতে দ্য বোরাক বদ্ধপরিকর।
বোরাক সার্ভিসেস লিমিটেড এর পরিচালক (ইন্জিনিয়ারিং) রাজীব হাসান বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রমকে জনগনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং তাদের যেকোন সেবা বা পন্য ক্রয়-বিক্রয় করতে দ্য বোরাক তৈরি করতে যাচ্ছে ক্যাশলেস ইকোসিস্টেম, যার ফলে কোন প্রকার ক্যাশ লেনদেন না করেই সকল ধরনের আর্থিক কার্যক্রম ডিজিটালি সম্পন্ন করা যাবে।
বোরাক সার্ভিসেস লিমিটেড এর পরিচালক (অপারেশন) জুলফিকার চৌধুরী রাজিব জানান, সারা বাংলাদেশে দ্য বোরাক এর কার্যক্রম পরিচালনা করতে খুব শীগ্রই দেশের ৫০০ থানায় নিয়োগ দেয়া হবে ৫০০ থানা উদ্যোক্তা। উন্মোচিত হবে প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার। এছাড়াও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হিসেবে থাকছে দেশের স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম পণ্য ডেলিভারি সার্ভিস প্রদানের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ তৈরী করা যেন একটি শিক্ষিত এবং কর্মঠ জাতি গড়ায় বলিষ্ঠ অবদান রাখতে পারে দ্য বোরাক।