সাদা-কালো থেকে রঙিন, অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল আর হালের স্মার্ট প্রযুক্তি – বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনের বিবর্তনের ইতিহাসের প্রতিটি মাইলফলকের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে যে সকল ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠান, এর মধ্যে প্রথম সারিতেই থাকবে স্যামসাংয়ের নাম। যুগান্তকারী প্রযুক্তি আর অভিনব উদ্ভাবনী শক্তির স্বাক্ষর রেখে গত ১৫ বছর ধরে একটানা বিশ্ববাজারের শীর্ষস্থানীয় টেলিভিশন ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে এই দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানটি, সেই সাথে জয় করে নিয়েছে কোটি গ্রাহকের মন।
সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে স্যামসাং ‘বিশ্বের প্রথম’ টেলিভিশন হিসেবে তাদের ৫৫-ইঞ্চি প্রজেকশন টিভির সাথে গ্রাহকদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়। পুরাতন অ্যানালগ প্রযুক্তির ধারায় দাঁড়ি টেনে নতুন যুগের ডিজিটাল টেলিভিশনকে জনপ্রিয় করে তোলার বিপুল সাফল্যই মূলত স্যামসাংকে এই খেতাব এনে দিয়েছিল।
সঠিক রঙ, নকশা কিংবা ছবির মান – প্রতিটি প্রশ্নেই স্যামসাং এক অনন্য দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এসেছে তাদের ভবিষ্যৎমুখী প্রযুক্তি, প্রতিযোগিতামূলক বাজারের উপযোগী পণ্য ও সীমাহীন উদ্ভাবনীর জোরে। নিজেদের মেধাশক্তি ও কারিগরি দক্ষতাকে পুঁজি করে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী টেলিভিশন প্রস্তুতকারকদের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
২০০০-এর দশকে স্যামসাংয়ের কল্যাণে বিপুল জনপ্রিয়তার মুখ দেখে এলসিডি টেলিভিশন, বিশেষ করে ওয়াল-মাউন্টেবল এলসিডি টিভি। সে সময়ের সবচাইতে বড় আকৃতির ৪৬-ইঞ্চি এলসিডি টিভিটি বাজারে নিয়ে আসার কৃতিত্বও ছিল স্যামসাংয়ের। গোটা পৃথিবীর প্রযুক্তিবাজার এবং বিনোদনপ্রেমী মানুষদের মাঝে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল সেই মডেলটি, যার ফলে এলসিডি টিভির বাজার হয়ে উঠেছিল সরগরম। সাফল্যের অব্যহত ধারাবাহিকতায় এরপর স্যামসাং ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম বাজারে নিয়ে আসে এলইডি টিভি, এবং ২০১৭-তে আনে কিউএলইডি। বর্তমানে কিউএলইডি টেলিভিশনের যে অসাধারণ জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে, তার পেছনে স্যামসাংয়ের দীর্ঘ গবেষণালব্ধ লাইট এফিশিয়েন্সি, উন্নত কালার স্পেকট্রাম এবং দীর্ঘস্থায়িত্বের প্রযুক্তির কৃতিত্ব অনস্বীকার্য
ভক্ত ও গ্রাহকদেরকে প্রতিনিয়ত অবাক করে যাওয়া ব্র্যান্ডটি ২০১৮ সালে ‘দ্য ওয়াল’ নামের একটি ১৪৬-ইঞ্চি মড্যুলার টিভি নিয়ে হাজির হয়, যার মাইক্রোএলইডি প্রযুক্তির সহায়তায় ছবির মান, সাইজ, রেজ্যুলুশন-সহ সকল ক্ষেত্রে উচ্চতার এক নতুন মাপকাঠি স্থাপিত হয়। গতানুগতিক এলইডি’র চাইতে ভিন্ন ধাঁচের এই সেলফ-এমিটিং টেলিভিশনে মাইক্রোমিটার স্কেল এলইডি ব্যবহৃত হয়েছে, যা আকারে ক্ষুদ্রতর এবং নিজেই নিজের আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। এই মডিউল-ভিত্তিক, বেজেল-লেস নকশার টিভিটি গ্রাহকদের নিজস্ব প্রয়োজনীয়তা অনুসারে টিভির আকার-আকৃতি পরিবর্তনে সহায়তা দিয়ে রীতিমতো উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এর বহুমাত্রিক উপযোগিতার মধ্যে অন্যতম হল ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের প্রেক্ষিতে দেয়ালের আকৃতি অনুযায়ী প্রয়োজন মত স্ক্রিনের আকৃতি তৈরি করে নেওয়ার সুবিধা।
কালের পরিক্রমায় স্যামসাংয়ের যাত্রা এই ২০২১ সালে এসেও এতটুকু স্তিমিত হয়নি। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা-ভিত্তিক বাজারের শতকরা ৩১.৯ ভাগ শেয়ার অর্জনের রেকর্ড গড়েছে। এটি ছিল স্যামসাংয়ের ইতিহাসের সফলতম বছর, যা প্রতিষ্ঠানটিকে গোটা বিশ্বের টেলিভিশনের বাজারে এক-নম্বর অবস্থানে নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।
গ্রাহকচাহিদা ও সন্তুষ্টির মান অটুট রাখার লক্ষ্য নিয়ে ব্র্যান্ড হিসেবে সবসময়ই নিজেদের স্বকীয় পরিচয় ধরে রেখেছে স্যামসাং। সমাজের উন্নয়নের প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানটি আপোষহীনভাবে ভোক্তাদের প্রয়োজনীয়তাগুলিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এসেছে, যাতে তারা ভবিষ্যতে যে সকল প্রযুক্তিগত সুবিধা উপভোগ করতে চান, তা নিজেরাই নির্বাচন করে নিতে পারেন।
চলতি বছরেও স্যামসাং তাদের সকল প্রধান পণ্য ও টিভি লাইন-আপে কারিগরী উদ্ভাবনী ও নতুন নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক চমক দেখিয়ে নিজ সাফল্যের ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বপ্ন দেখছে। এর মধ্যে রয়েছে স্যামসাংয়ের লাইফস্টাইল টিভির নতুন নিও কিউএলইডি লাইন-আপ, সেই সাথে আছে দেশব্যাপী ব্র্যান্ডটির দীর্ঘমেয়াদী সাস্টেইনেবিলিটি প্রোগ্রাম আয়োজন। প্রতিষ্ঠানটি টেলিভিশন দেখার চিরায়ত অভিজ্ঞতার সাথে মাইক্রো এলইডি প্রযুক্তির এক অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে। ব্যবহারকারীরা এখন কোনো পেশাদারি সহযোগিতা ছাড়াই চোখ ধাঁধানো এজ-টু-এজ স্ক্রিন ডিজাইনের সিনেমাটিক এক্সপেরিয়েন্স উপভোগ করতে পারবেন নিজেদের বসার ঘরে। ১১০’’, ৯৯’’ ৮৮’’ এবং ৭৬’’ সাইজের মাইক্রো এলইডি টিভি এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
আধুনিক জীবনের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তার অনুষঙ্গ হয়ে পড়েছে টেলিভিশন। একটানা ১৫ বছর ধরে একটি দ্রুত-পরিবর্তনশীল বিশ্বে গ্রাহকচাহিদার শীর্ষে অবস্থান করে স্যামসাং প্রমাণ করেছে – ব্যবহারকারীদের প্রতিদিনের লাইফস্টাইলে রয়েছে তাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব। আসছে বছরগুলোতেও স্যামসাং গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) এবং প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট খাতে তাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার মাধ্যমে ব্যবসায়িক কৌশল সমূহ আরো শক্তিশালী করে তুলবে, যার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ অফার ও পণ্যগুলো বাজারে সফল অবস্থান গড়ে নিতে সক্ষম হবে।