
বনানী—ঢাকার অন্যতম ব্যস্ততম ব্যবসায়িক ও কর্পোরেট এলাকা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে অফিসপাড়া কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর। তবে কর্মজীবী মানুষদের জন্য দুপুরের খাবারের প্রশ্নে একটি সাধারণ সমস্যাই বারবার সামনে আসে—ঘরোয়া ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অভাব। চারপাশে নানা রকম রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড ও কফিশপ থাকলেও অনেক সময় এগুলোতে পাওয়া যায় না ঘরোয়া রান্নার স্বাদ কিংবা পুষ্টির নিশ্চয়তা।
এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন সাহসী নারী উদ্যোক্তা উম্মে সালমা তানিয়া (তানিয়া আপা)। তাঁর ছোট্ট ফুড কার্ট “ফুড ফর এভরি ওয়ান” অল্প সময়েই বনানীর কর্মজীবীদের দুপুরের নির্ভরযোগ্য ভরসা হয়ে উঠেছে।
রান্নার প্রতি সবসময় একটা আগ্রহ কাজ করতো ছোটবেলা থেকেই তানিয়া আপার। সব সময় ইচ্ছা ছিল রান্না নিয়ে কিছু একটা করবে। খুব সাম্প্রতিক সময়ে নিজের জব ছেড়ে তার ইচ্ছার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিনি এই খাবারের কার্ট চালু করেছেন। তানিয়া আপা বলেন “যেহেতু খাবার নিয়ে কাজ করতে চাই তাই ছোট করে এই কার্ট দিয়েই শুরু করেছি,”।
ফুড ফর এভরি ওয়ান কার্টের খাবার সরাসরি বাসা থেকে রান্না করে আনা হয়। প্রতিটি পদ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৈরি হয়, যাতে ব্যস্ত মানুষ নিশ্চিন্তে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। মেন্যুতে থাকে ভাত, ডাল, সবজি, দেশি মাছ, মুরগি, ডিম, ভর্তা—যা একেবারে পরিবারের রান্নার স্বাদ মনে করিয়ে দেয়।
শুরুর পর থেকেই তিনি পেয়েছেন আশাতীত সাড়া। তাঁর ভাষায়, “আলহামদুলিল্লাহ প্রথম দিন থেকে অনেক সাপোর্ট পাচ্ছি। আমি আমার রান্নার প্রতি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম—ইনশাআল্লাহ সবার ভালো লাগবে, আর সেটাই হয়েছে।”
প্রতিদিন দুপুরবেলা বনানীর অফিসপাড়ায় কার্টের সামনে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে। অনেকেই জানান, এখানে শুধু খাবার নয়, আস্থাও বিক্রি হয়।
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, “আগে দুপুরে ফাস্টফুড খেয়ে দিন পার করতাম। এখন তানিয়া আপার কার্টের কারণে ঘরোয়া খাবার খেতে পারি, আর খাওয়ার পর কাজেও মন ভালো থাকে।”
বনানীর মতো এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সাশ্রয়ী দামে পাওয়া বিরল। কিন্তু তানিয়া আপার কার্টে ১০০-১৫০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় ভাত, সবজি, প্রোটিন ও সালাদসহ একটি পরিপূর্ণ লাঞ্চ। ফলে কর্মজীবীরা পাচ্ছেন একদিকে পুষ্টি, অন্যদিকে সাশ্রয়।
তানিয়া আপার মতে, বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়া এখনো সহজ নয়। “আমাদের দেশে যেকোনো কাজই মেয়েদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। একজন পুরুষ যদি তার মেধা ও সাহস দিয়ে সফল হতে পারে, তবে একজন মেয়ে ও পারবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি তার পরিশ্রম ও মেধা ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে চান যদিও রাস্তায় কাজ করাতে তিনি অনেক এগুলো তা সম্মুখীন হন সেগুলো তিনি হাসিমুখে সমাধান করে এগিয়ে যান।
তাঁর লক্ষ্য শুধু একটি কার্ট নয়। “আমি আরও কয়েকটা কার্ট চালু করতে চাই। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে ছোট্ট একটা রেস্টুরেন্টও খুলব, যেখানে কর্পোরেট লাঞ্চের উপর ফোকাস করব।”
শুধু ব্যবসা নয়, তিনি নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থান তৈরি করার পরিকল্পনাও করছেন। “আমার নিজেরও দুটো মেয়ে আছে। আমি জীবনে যে যুদ্ধগুলো করছি, চাই না আমার মেয়েরা এমন যুদ্ধ করুক। আমি চাই আমার মতো আরও মেয়েরা কাজের সুযোগ পাক।
তানিয়া আপা বিশ্বাস করেন, জীবনে কোনো কাজই সহজ নয়। প্রতিকূলতা আসবে, কিন্তু মনোবল থাকলে সব জয় করা সম্ভব। তাঁর মতে, “মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে শুধু সংসারের জীবন কাটাতে হবে—এমন নয়। স্বামী-সন্তান আমার জীবনের অংশ, কিন্তু এর বাইরে ও প্রতিটা মেয়ের উচিত আত্মনির্ভরশীল হওয়া। অন্তত নিজের জন্য হলেও হালালভাবে উপার্জন করা, নিজের যত্ন নেওয়া।
‘ফুড ফর এভরি ওয়ান’ এখন শুধু খাবারের কার্ট নয়, বরং নারীর আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্নপূরণের প্রতীক। বনানীর কর্মজীবীরা এখানে পাচ্ছেন ঘরোয়া খাবারের স্বাদ, আর সমাজ পাচ্ছে অনুপ্রেরণা—যে সাহস থাকলে ছোট উদ্যোগ দিয়েও বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
